Jharapata - 6 in Bengali Love Stories by Srabanti Ghosh books and stories PDF | ঝরাপাতা - 6

Featured Books
  • అంతం కాదు - 25

    వెంటనే సరే దీన్ని ఇప్పుడు ఎలా యూస్ చేయాలి అని అంటాడు ధర్నా వ...

  • అధూరి కథ - 6

    రాధిక తో పాటు Luggage తీసుకుని బయటకు వెళ్తున్న సమయంలో tv లో...

  • థ జాంబి ఎంపరర్ - 17

    జాంబీ జనరల్స్ యుద్ధం - ఆదిత్య పునరాగమనంసుమంత్ కింద పడే పెట్ట...

  • అంతం కాదు - 24

     ఇక సముద్రం పైన చూస్తే చనిపోయిన శవాన్ని అంటే సామ్రాట్ శవాన్న...

  • మౌనం మట్లాడేనే - 8

    ఎపిసోడ్ - 8 విక్రం యొక్క అంగీకారంప్రియా, ఆదిత్య దగ్గరకు పరుగ...

Categories
Share

ঝরাপাতা - 6

ঝরাপাতা

পর্ব - ৬

🌵🍁🌵🍁🌵🍁🌵

এত হাঙ্গামা, পরিশ্রম, সঙ্গে লোকের হাজার কথার মিষ্টি মুখে ভদ্রভাবে উত্তর দেওয়া, তাদেরই অনুরোধ উপরোধ করে গলা পর্যন্ত ঠেসে খাওয়ানো, পিউ আর পারছিল না। তবে বিয়ে হয়েছে, সবদিক রক্ষা হয়েছে, এমনকি ঐ একই বাড়িতে বিয়ে হয়েছে। তাই ভবিষ্যতে লিলির কান্ডটা ধীরে ধীরে চাপা পড়ে যাবে, এমন হয়, শুধু একদিনের ভোগান্তি হল, কারও কারও এসব কথায় ওর মনটা আশায় ভরে আছে বলে ও চালিয়ে যেতে পারছে। 

রিসেপশন যে বাড়িতে যেভাবে হওয়ার কথা ছিল, তেমনই হয়েছে। মিলির বাড়ির লোকেরা এসে তত্ত্বের জিনিস নামিয়ে চো *রের মতো বসে ছিল। কষ্টই লেগেছে ওর। যাদের সঙ্গে চেনাশোনা আছে, তাদের ডেকে কথা বলেছে, সবাইকে ডেকে খেতে বসিয়েছে। 

মিলি ভাবলেশহীন ওর বাড়ির লোকের ব্যাপারে। শুধু মামাতো আর মাসতুতো বোন এসে ওর দুপাশে বসেছিল। তারাও বোধহয় এইরকম ঘটনায় ঘাবড়েই আছে, কথাবার্তা বিশেষ বলেনি। মাসতুতো ভাইটা তো খুব ছোট, ক্লাস সিক্সে পড়ে। আর খুড়তুতো ভাই ওর পিঠোপিঠি, সে এসব মেয়েলি ব্যাপারের বাইরে একধারে চুপটি করে বসেছিল। 

নিমন্ত্রিতরা চলে যাওয়ার পর মিলিকে নিয়ে বাড়ির মহিলারা ফিরে এসেছে। বনি সব গুছিয়ে, বাড়ির চাবি হ্যান্ডওভার করে আসবে। মিলিকে তত্ত্বের ডালা থেকে খুঁজে ফুলশয্যার শাড়ি পরিয়েছে ওরা। নতুন কাঁসার থালা বাটি, খই দই, তেল সিঁদুর সাজিয়ে বসে আছে পিউ, রনির কোনো পাত্তা নেই। মামীরা আর পারছেন না।

পিউ বনিকে ফোন করে, রনিকে অন্ততঃ পাঠিয়ে দিতে। বনি তখন বাড়ির গলিতে, সাত্যকি ওর সঙ্গে। রনি বা ওর বন্ধুরা কেউ নাকি রিসেপশন হলে ছিলই না। ও ভেবেছে, ভাই মামাদের সঙ্গে চলে গেছে। 

বনি বাকি পথ ছুটে এসে বাড়িতে ঢোকে। স্বামীস্ত্রী দুজনেই বহুবার ফোন করে, রনির ফোন সুইচড অফ। মণিকা পাথরের মতো বসে আছে। বনি শুরু করে রনির বন্ধুদের ফোন করা। পাড়ার বন্ধুরা কেউ কেউ ওরও বন্ধু, ছোটবেলায় একসঙ্গে খেলেছে। 

প্রথম দুজন কিছু জানেনা বলার পর অর্জুন ফোন ধরে, আমতা আমতা করে বলে, রনি তন্ময় বলে ওর এক কলেজের বন্ধুর বাড়িতে গেছে। তন্ময়কে এ বাড়ির সবাই চেনে। কিন্তু এর মানে কি? 

বনির জেরায় অর্জুন পুরো গল্প বলে, "আমাদের মধ্যে এই তিনদিন তো এইসব কথা নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল। আজও রনি হল এ বিশেষ থাকতে চাইছিল না। ওর সঙ্গে নিমন্ত্রিতরা সবাই কথা বলতে চাইছে, ওদের বরকনেকে সঙ্গে নিয়ে ছবি তুলতে চাইছে, তাই বাড়িটা থেকে দু পা এগিয়ে ওরা বন্ধুরা সবাই গল্প করছিল। তখন তন্ময় আর সুমিত ঠাট্টা করে বলে, রনি আর কত পালিয়ে বেড়াবে। আজ তো ফুলশয্যা। রনি ক্ষেপে উঠতেই সুমিত বলে, রনির উচিত মিলিকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করে নেওয়া, ওর আবার কেউ আছে কিনা।"

বনি ধমকে ওঠে, "এইসব কথা তোরা ওকে বললি? তাও সব জেনেবুঝে?"

অর্জুন আরও মিইয়ে গিয়ে বলে, "আমি না বনিদা। মা *ই *রি বলছি। ঐ ওর কলেজের সুমিত বলেছে। আমি, পাপু, তন্ময়, আমরা সবাই ইশারা করছিলাম থামতে। তখনই কিছু বুঝিনি। তারপর রনি তন্ময়ের সঙ্গে কি কথাবার্তা বলে এসে আমাদের সবাইকে বলল খেয়ে নিতে। আমরা জানি তুমি, বৌদি, সবাইকে নিয়ে আমরা বসব। তাহলে মিলিকে নিয়ে খেতে বসবে রনি, তা ওর ঠেলায় বসতে হল। "

- "দুত্তেরি করেছে তোর খাওয়ার কথা।" বনির মাথাটা ফাটোফাটো গরম হয়ে গেছে, "রনি কেন তন্ময়ের বাড়ি গেল, আর তুই আমাকে বললি না কেন?"

- "আমাদের তো বলে গেল, তন্ময়রা ফিরছে, ওদের সঙ্গেই যাচ্ছে। তোমাদের খবর দিলে ওখানেও থাকবে না। কি করব? সেই থেকে আমরা ভয়ে কাঁপছি, তা জানো।"

বনি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। পিউ নিজের আর বনির ফোন তন্নতন্ন করে খুঁজেও তন্ময়ের নম্বর পায় না। তবে অর্ক বলে আরেক কলেজের বন্ধুর ফোন নম্বর পায় বনির ফোনে, সেও আজ এসেছিল। বনির হাতে ফোনটা গুঁজে দিয়ে বলে, "একে ফোন করো। ওর কাছে নিশ্চয়ই তন্ময়ের নম্বর আছে।"

বনি ফোন হাতে নিয়ে দু এক মুহূর্ত কি ভাবে, তারপর বলে, "না পিউ, ফোন করে কাজ নেই। রনি যদি সত্যিই ওখান থেকেও চলে যায়? তার চেয়ে অর্কর থেকে তন্ময়ের ঠিকানাটা নিই। হীরুদা, যার থেকে বিয়ের জন্য গাড়ি ভাড়া করেছিলাম, ওকেই বলি, যেভাবে হোক, একটা গাড়ি পাঠাও। আমরা দুজন গিয়ে রনিকে নিয়ে আসি।"

পিউ সবে উঠে দাঁড়িয়েছে, মণিকার দিকে ফিরে বলতে যায়, মামনি চিন্তা কোরো না, আমরা ওকে ফিরিয়ে আনব।

তার আগেই মণিকা বলে, "না, এখন এত রাতে কেউ রনির বাইরের বন্ধুদের ফোন করে বিরক্ত করবে না। যা হবে কাল সকালে।"

- "কি বলছ মা? আজ ওর বৌভাত, আর আজ ও কোন বন্ধুর বাড়ি গিয়ে বসে আছে। আমি দাদা হয়ে ওর খোঁজ করব না?" বনি চেঁচিয়ে ওঠে। 

- "খোঁজ তো করেছিস বনি। জেনেছিস ও কোথায় আছে। ও ফোন বন্ধ করে রেখেছে মানে ও একটু একা থাকতে চায়। সেই সময়টা ওকে দে। তাছাড়া ঐ বন্ধুর বাড়িতেও লোকজন আছে। তাদের কতটা অসুবিধা হবে তোরা দুপুর রাতে গিয়ে হাজির হলে? ওসব বুদ্ধি ছাড়। কাল সকালে আমি যাব। আর তুই বা যে যে যাওয়ার তখন সঙ্গে যাস।"

ওরা বোঝে মণিকার কথা একদিকে খুব ভুল নয়। লোকের বাড়ি হানা দেওয়ার একটা সময় বলেও কথা হয়। কিন্তু রনি না থাকলে আজ রাতে... 

সেই কথাটাই পিউ মুখে বলে বসে, "ভাইকে ছাড়া তো ফুলশয্যার নিয়মগুলো হবে না মামনি। ওগুলো তো এখন করতে হবে।"

- "আর কত নিয়ম করবি পিউ? আমার রনি তো সবার মুখ চেয়ে এই তিনদিন সব সহ্য করল, সব নিয়ম মানল। ওর কথা কেউ ভেবেছিস? আমি তো ওর মুখের দিকে তাকাতে পারব না আর কোনোদিন। বাবার কথা মনেও নেই ছেলেটার। আমি চাকরি করেছি, আমাকেও পায়নি। ও কোনোদিন কোনো বায়না করেনি। শুধু আমার কথা ভেবেছে, দাদার কথা ভেবেছে। আজও আমাদের জন্য এরকম একটা বিয়ে করেছে। এখন তো আর কেউ নেই, কেউ কিছু দেখতে শুনতে আসছে না। এবার তোরা সব নিয়ম ওঠা। এই বিয়ের আবার নিয়ম ! তোমরাও শোবে চলো।" বলে ভাইয়ের বৌদের ডেকে নিয়ে মণিকা চলে যায়। 

পিউর মাথাটা মাটিতে মিশে গেছে মিলির সামনে। একপাশে একটা চেয়ারের পিঠে হাত রেখে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে মিলি। ওর দিকে তাকানোর সাহসও হয় না পিউর। কতক্ষণ পরে কে জানে দু হাতে মুখ ঢেকে বসে থাকা বনিকে বলে, "ঘরে যাও, রনির ঘরে। টুকাই মায়ের ঘরে আছে। রাতে কাঁদলে আমাকে দিয়ে যেও।"

উঠে এসে বরণডালা, তেল সিঁদুর সব ঠাকুরঘরে রেখে মিলিকে ডাকে। চুপ করে দাঁড়ানো দেখে হাত ধরে নিয়ে আসে নিজের ঘরে। খাটের দিকে দেখিয়ে বলে, "শুয়ে পড়। আমার শরীর আর দিচ্ছে না। কাল সকালে আবার যুদ্ধ শুরু হবে।"

সকালে সত্যিই যুদ্ধ শুরু হয়। অর্ককে ফোন করে তন্ময়ের ফোন নম্বর, ঠিকানা সব নেওয়ার পর ওকেও সঙ্গে যেতে অনুরোধ করে বনি। যদিও অফিসের অজুহাতে না করে দেয় অর্ক। তখন অন্ততঃ রনির কানে যেন কোনো কথা না যায়, বারবার তার অনুরোধ করতে থাকে বনি। সেটাতে অবশ্য রাজী অর্ক। এদিকে প্রতি দশ মিনিটে রনিকে ফোন করছে পিউ, এখনও বন্ধ। 

অর্কর সঙ্গে কথা সেরে একটা গাড়ি বুক করে বনি। আধঘণ্টা পরে আসবে। মণিকা, দুই মামা, বড়মামী আর বনির পর জায়গা নেই। পিউকে মণিকা বলে, "তুই টুকাইকে দেখ আজ।" পিউ বলতে পারে না, ওকে তো আমার মাও দেখতে পারত। 

এরা রওনা দেয়, পিউ ফোন করে নিজের মাকে সব জানিয়ে, এখানে চলে আসতে বলে। দুজনে পিউর ঘরে বসে বসে টেনশন করে, মণিকার ঠিকভুল নিয়ে আলোচনা করে। মনে মনে আর জোরে জোরে, দুভাবেই প্রার্থনা করে, রনি যেন ফিরে আসে।

চলবে