Samay Ghurni - 3 in Bengali Science-Fiction by Srabanti Ghosh books and stories PDF | সময় ঘূর্ণি - 3

Featured Books
Categories
Share

সময় ঘূর্ণি - 3

সময় ঘূর্ণি ⌛✍️


|| ৩ ||


রাত বাড়ে। অনিলাভ আর অর্ণিলা ওদের ব‍উবাজারের বাড়ির ছাদে বসে। এক পাশে খোলা ঘড়ির বাক্স, আর তার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা হলুদ হয়ে যাওয়া চিঠি।

চিঠিতে লেখা —
--“সময় কোনো একরৈখিক ধারা নয়। এটা আবেগে বাঁক খায়, পছন্দে পথ বদলায়। যদি তুমি এই চিঠি পড়ছো, বুঝে নিও তুমি একজন টাইম ট্র্যাভেলারের হৃদয় নিয়ে জন্মেছো। এবং তোমার প্রেম একদিন সময়ের বাঁক ঘুরিয়ে দেবে।”

চিঠিটা পড়ে দুজনেই কিছুক্ষণ চুপচাপ। রাতের আকাশে তারা ভেঙে পড়ছে না, তবু বাতাসে যেন এক অদ্ভুত রহস্যের ঘ্রাণ।

অনিলাভ তাকিয়ে থাকে অর্ণিলার দিকে।

— “তুমি সবটা এত বিশ্বাস করে কিভাবে?”

অর্ণিলা নিচু গলায় বলে, “কারণ আমি জানি, কিছু কিছু সম্পর্ক শুধু সময়ে বাঁধা নয়, তারা সময় তৈরি করে নিজের মতো।”

এই প্রথমবার, অনিলাভ চমকে বুঝতে পারে, এতদিন সে যাকে ভুলে থাকার চেষ্টা করেছে, আসলে তাকে মনে রাখতেই জন্মেছিল।

অর্নিলা ওকে সমস্ত কাহিনী বলে,
১৯৭৭ সাল। ডঃ অনিরুদ্ধ সেন, পদার্থবিদ, টাইম তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতেন।

সে আমলের কলকাতায় কেউ মানেনি, কেউ শোনেওনি। 

কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতেন — সময়কে বাঁকানো যায়, ঠিক সূক্ষ্ম এক জায়গায়… যেখানে থার্মোডাইনামিকস, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন আর মানুষী সিদ্ধান্ত একসাথে মেলে।

তাঁর তৈরি প্রোটোটাইপ ছিল এই কাঠের ঘড়ি। এটা একবার মাত্র ব্যবহার করা যায়।

ফল? ১.৩০ সেকেন্ড পিছনের সময়ে যাওয়া।

কিন্তু এই সামান্য পিছনে যাওয়াতেই পৃথিবীর টাইমস্ট্রিমে তৈরি হয় একটা “সাবলিমিনাল রিফ্রাকশন” — একটা ছায়া টাইমলাইন।

--“আমার দাদু বলতেন, একদিন কেউ আসবে… যে এই ঘড়িকে সত্যি করে তুলবে। নোটবুকে সেই নামটাও তিনি লিখেছিলেন—তোমার নাম।”

অনিলাভ নির্বাক।
এর মানে… এই ঘড়িটা… এই পরিবর্তন, এই মেয়েটা—সব পরিকল্পনার অংশ?

--“তুমি বলছ আমি… একটা টাইম চক্রে আটকে পড়েছি?” বলবে না ভেবেও বলে বসে অনিলাভ।

--“শুধু তাই নয়। হয়তো, তুমিই তার কেন্দ্রে।”


📜✍️


কলকাতা তখন খুব স্বাভাবিক। অথচ সেই স্বাভাবিকের ভেতরেই লুকিয়ে আছে এক অলীক ভয়।

রাত ১:৪৫, কলেজ স্ট্রিট এর দিকে হেঁটে চলে যাচ্ছে দু’জন ছায়ার মতো মানুষ। একজন, যার নাম টাইম জাম্প নথিতে লেখা ছিল, অনিলাভ দত্ত। আর একজন, যার ঠোঁটের বাঁকে আটকে ছিল ভুলে যাওয়া কোনো বিজ্ঞানীর শেষ প্রত্যাশা, অর্ণিলা সেন।

তাদের পেছনে ছায়ার মতো আসছে এক কালো গাড়ি।

আসলে তা আর গাড়ি নেই, ChronoCorp-এর “MIRAGE VEHICLE”, যে নিজেই নিজের গতিপথ ঠিক করতে পারে। এতে রয়েছে "তাপ শোষণকারী কোয়ান্টাম ফিল্ম", যা রাতের আকাশের মতো নিঃশব্দ।

--“ওরা আমাদের খুঁজে পাবে না, যদি আমরা ‘টাইম পকেট’-এ ঢুকে পড়তে পারি।” অর্ণিলা বলে।

--“টাইম পকেট? সেটা আবার কী?”

--“পুরো শহরের কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় সময়ের গতি খুব সামান্য হলেও ধীর। একমুহূর্তে আমরা সেখানে ঢুকে পড়তে পারি, আর বাইরে থেকে আমরা হঠাৎ উধাও হয়ে যাই বলে মনে হয়।”

একে একে তারা ঢুকে পড়ে কলেজ স্ট্রিট এর কফি হাউসের ভেতরের পুরনো স্টোর রুমে।

📜✍️

--“তুমি জানো অনিলাভ,” ফিসফিস করে বলে অর্ণিলা, “এই ঘড়ি শুধু সময় ফেরায় না।এটা… হৃদয়ের সাথে সংযুক্ত। যার ভালবাসা যত গভীর, তার টাইমলিপ তত বড় হতে পারে।”

অনিলাভ নিঃশব্দে চেয়ে থাকে ওর দিকে। এই মেয়ে যেন একটা জীবন্ত টাইমমেশিন, যার চোখে ছায়া, আর শব্দে ছন্দ।

পালানোর মাঝেও এক মুহূর্ত, যখন অনিলাভ দেখে অর্ণিলা তার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।

একটি কাঠের ঘড়ির মতো, তার নিঃশ্বাস ওঠে নামে। নিয়মিত, শান্ত, অথচ এক রহস্যময় ছন্দে।

তাদের মাঝখানে সময় তখন গলে 
যায়। আর ঘড়িটার কাঁটা ঘুরে যায় বিপরীত দিকে।

📜✍️

পরদিন তারা পৌঁছোয় শোভাবাজারের এক পুরনো বাড়িতে। একটা কাঠের সিঁড়ি, টালির ছাদ, আর একখানা ঘর যার দরজা এখন বন্ধ। কিন্তু অতীতে একবার খোলা ছিল, ১৯৮৬ সালে।

--“এই ঘরেই আমার দাদু থাকতেন। এখানেই টাইম প্যারাডক্স থিওরি শুরু হয়। আর এখানেই তিনি লিখেছিলেন—‘Time is a loop. But only love can crack it.’”

ঘরের দেওয়ালে একটা ম্যুরাল—
সময়চক্রের মাঝে দুটি মানুষ দাঁড়িয়ে, তাদের দিকে তাকিয়ে আছে এক ‘বিন্দু-চোখ’, যেন মহাবিশ্ব নিজে।

অর্ণিলা সামনে এগিয়ে এসে দেয়ালের খোপ খুলে বের করল একটা ডায়েরি, “তুমি যদি তৈরি হ‌ও আমরা এখন যেতে পারি, একবার… অতীতে।”

📜✍️

প্রথম টাইমলিপ : ১৯৮৬

হাত ধরেছিল অনিলাভ। আর ঠিক সেই মুহূর্তে, ঘড়িটার কাঁটা থেমে যায় ২:১৯-এ। আলো চট করে নিভে যায়। শব্দ থেমে যায়।

চোখের সামনে চলে আসে অন্য এক শহর। যেখানে হাতঘড়ির বদলে দেওয়ালে টাঙানো পেনডুলাম বাজে। আর রাস্তায় অ্যাম্বাসাডার গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে ট্রামপথের পাশে।

--“এই তো, আমার দাদু ওই রাস্তায় হেঁটে আসবেন। আমরা লুকিয়ে দেখব।”

❤️চলবে_____💜💙💚💛🧡❤️

( আগামী অংশে )
[ নতুন করে শুরু হল ডঃ অনিরুদ্ধ সেনের পথে যাত্রা।
সময় কি ওদের সঙ্গে, নাকি সময়ের গোলোকধাঁধা গ্রাস করে নেবে সবকিছু?
এই যাত্রার শেষেই বা কি আছে?
সময় নাকি ভালোবাসা, পৃথিবী বদলাতে কি প্রয়োজন? ]
💙⌛✍️

কেমন লাগল তৃতীয় পর্বটা? 
রেটিং রিভিউ দিয়ে জানাতে ভুলবেন না।