AI KE DHORBE in Bengali Comedy stories by Aiub Khan books and stories PDF | আয় কে ধরবি

Featured Books
Categories
Share

আয় কে ধরবি



আয় কে ধরবি? 

পিচপিচে রোগা শীর্নকায় একটু বেঁটে কিন্তু সে ছিল দুর্দান্ত সাহসী। নাম তার কানু দেখতে শুনতে মোটামুটি ভালো, তবে কোন নেশা তার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয় নি। তবে হ্যাঁ, সততা নিয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে আঙুল তুলতে পারবে না। এমনকি কারো সাথে সচরাচর খারাপ ব্যবহার করতে দেখা যায় না। কিন্তু ওই যে, সারাক্ষণ নেশায় থাকে টইটম্বুর। তবে নিজের টাকায় নয়, অন্য কেউ খাওয়ালে।প্রতিদিন কেউ না কেউ জুটে যায়, কানুকে তার নেশার টেবিলে বসাতে। কারন মদের প্যাক বানাতে সেছিল দক্ষ। আর গ্যাঁজা দলে চিলম সাজাতে বেশ পটু। তাস খেলাটাও তার নেশার মধ্যে পড়ে। তাসের তেপাট্টি খেলার জাদুকর হিসেবে এলাকায় সে বেশ পরিচিত। ওকে আবার অনেকে ভাড়ায় নিয়ে খেলতে যায়।

আশির দশকে খড়ি বনে তাস, ঝান্ডিমুন্ডি, ইত্যাদি জুয়া খেলা হত। সাধারণত যাদের বোরজ বাড়ি অর্থাৎ পানবাড়ি থাকতো তাদের খড়ি বাগানও থাকতো। ঐ খড়ি বনেই তখনকার সময় লোকেরা সবাই মলত্যাগ করত। আর ওই বাগানই ছিল জুয়াড়ুদের সুরক্ষিত আলয়। সকাল হলেই, মলত্যাগ করতে এসেই, জুয়াড়ুদের আসর বসতো প্রতিদিন। পাড়ার ঐসব বীরপুরুষরা, বাড়ি অভিভাবক বা সমাজের বয়জষ্ঠদের চোখের আড়াল থেকে বাঁচতে, এই উন্নত মানের গ্যাসীয় বাগানে জুয়ার আসর বসাতো। বেশিরভাগ তিন পাত্তি খেলা হতো। ঐ চার-পাঁচজন খেলবে, আর বেশকিছু জন দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা উপভোগ করবে। তারা শৃঙ্খলা বদ্ধ হয়ে সবাই গোল হয়ে বসতো। মাঝখানে থাকত একটি বামুনিয়া গামছা। তার উপরে তাস রাখা হতো। আর গামছার চারিদিকে প্রত্যেকের পায়ের কাছে থাকত পয়সা। এক্কেবারে কুড়ি পয়সা থেকে ৫ টাকার কয়েন। আর এক টাকা থেকে কুড়ি টাকার নোট পর্যন্ত খেলাতে ব্যবহার করা হতো। এখানে কেবল মনের সুখে শুধু খেলা হত না, ফ্রী তে মলত্যাগ কোম্পানির আতরের সুগন্ধ ভোগ করার সুযোগ থাকত।

কখনো সখনো গ্রামের বয়সীরা তাদের তাড়া করতো, আবার কখনো কখনো থানার মামুরা এসে তাদের তাড়া করতো। কিন্তু কোন রকম ভাবে তাদের স্বভাব পরিবর্তন করা যেত না। একাধিকবার পুলিশ এসে তাদের তাড়া করে কয়েক জনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল থানায়। অবশ্য তারা সেই দিনই ছাড়াও পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশের হাতে কখনো ধরা পড়েনি কানু। পুলিশ রেড করলেই কিছু দিন খেলা বন্ধ থাকে। তার পর আবার কিছুদিন পর আবার চালু হয়ে যায়।

একদল গ্রামিন যুবক নাটকের ব্যবহার করা পুলিশের পোষাক পরে বেশকিছু বার ধাওয়া করেছিল। অমনি সবাই পুলিশ থেকে বাঁচতে দৌড় দিত অন্যত্র। যখন সবাই পালিয়ে যেত, তখন পড়ে থাকত গামছা! আর তাতে থাকত সবার ফেলে যাওয়া কিছু পয়সা। নকল পুলিশের ওগুলো হতো উপার্জন। অবশ্য তারা এই পয়সা নিয়ে ভিডিও শো করে খরচ করে দিত। 

একদিন এমন ঘটনার কথা জানতে পারে কানু। যুবকেরা পুলিশের বেশ ধরে এভাবে ঠকাচ্ছে তাদের। কানুর মাথায় বুদ্ধি এলো, সে আর পুলিশের ভয়ে পালাবে না।

সেদিন কানুর কাছে পয়সা নাই, আবার তাকে কেউ ভাড়া করে খেলাতে বসায় নি। খেলা জমে উঠেছে, সবাই খেলায় মত্ত। কানু সেদিন বাংলা মদ খেয়ে নেশায় টইটুম্বুর। অন্যরা খেলছিল ও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দর্শক হিসেবে দেখছিল। এমন সময় একদল পুলিশ রে রে করে তেড়ে এলো। কানু যেই চিৎকার করে বলে উঠল, "পুলিশ, পুলিশ! পালা সবাই, পালা।" 

আগের গুলোর মতো সবাই সমস্ত কিছু ছেড়ে ছুড়ে পুলিশ থেকে বাঁচতে দৌড় দিল অন্যত্র। এদিকে কানু চটপট করে সবার পয়সাগুলো জড়ো করে গামছায় এ্যটে ভালো করে কোমরের বেঁধে নিল। তারপর সে নকল পুলিশ ভেবে ছাতি চওড়া করে বলল, "তোরা আমায় ঠকাবি? আমি যানি তোরা আসল পুলিশ না! নকল পুলিশ?

পুলিশ বলল, "ঠিক আছে, এই তুই ঐখানে দাঁড়া? নকল না আসল বুঝতে পারবি।"

এবার কানু পুলিশের আচরণ দেখে বুঝতে পারল যে, সে আসল পুলিশের খপ্পরে পড়েছে! ততক্ষণে চারিদিক থেকে তাকে পুলিশ কর্মীরা ঘিরে ফেলেছে। তখন তার কমোরে টাকার গামছা আঁটোসাটো করে বাঁধা। বহুদিন পর বিনা পরিশ্রমে তার এই ইনকাম। এখন পুলিশের হাতে ধরা পড়লেই সব যাবে!

এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে সে দেখল পাশে আছে, টাটকা টাটটি! যা থেকে তাজা সুগন্ধ বের হচ্ছিল। আজ এটা দিয়েই, পুলিশকে দেওয়া যাবে ভেলকি। না হলে কেল্লাফতে। 

কানু বিলম্ব না করে, 
দুই হাতে মল তুলে, 
পুলিশের দিকে দুহাত ছুড়ে,
তেড়ে গেল তাদের দিকে- 

পুলিশ বলল, "এই এই কি করিস কি? কি করছিস কি? তোর হাতে ওটা কি?" 

কানু বলল, "আয় আয়, আমায় আর ধরবি কি?" 

পুলিশ বলল, "আরে গাধা তোর নাম কি?" 

কানু বলল, "আয়, কে আসবি আয়, আমায় ধরবি যদি?

পুলিশ বলল, "এই পাগল ধরা দে, ধরা দে তুই, পালিয়ে গিয়ে করবি কি?"

কানু বলল, "আয় আয় আমায় ধর, কে ধরবি ধর.....

কিন্তু সেদিন সত্যিই পুলিশ ছিল। কানুর দুহাতে মল দেখে, কোন পুলিশ কর্মী এগিয়ে গিয়ে ওকে ধরল না। তখন পুলিশের এক বাবু বিনয়াবত হয়ে বলল, "তুই আত্মসমর্পণ কর। তোকে আমরা ছেড়ে দেবো। তুই শুধু বল কারা কারা খেলছিল?"

কানুর ঐ একটাই কথা, "কাছে এসো, আমাকে তোমরা ধরে নিয়ে যাও।" কানু এ কথা বলছে, আর এক দু পা পুলিশের দিকে এগোচ্ছে। এবং দুই হাতে ওই মল নিয়ে ঘাটাঘাটি করে খেলা করছে। এভাবে কানু পুলিশের দিকে যত এগোচ্ছে, পুলিশ তত পিছিয়ে যাচ্ছে।

কানু এগিয়ে যাচ্ছে, আবার বলছে, "ধর, আমায় ধর। এই পুলিশ, ধর আমাকে, পিছিয়ে যাচ্ছিস কেন?"

কানু তার এগোনোর স্পিড যত বাড়াচ্ছে, পুলিশ পিছানোর স্পিড তত বাড়াচ্ছে। এমনি করতে করতে কানু দৌড় দিল পুলিশের দিকে, পুলিশ দৌড় দিল কানুর থেকে বাঁচতে পুলিশ ভ্যানের দিকে। পুলিশেরা প্রানপনে দৌড়ে গিয়ে কোন রকম জিপে উঠে ফিরে গেল থানাতে।

কানুর জন্য পুলিশের হাত থেকে যেমন জুয়াড়ুরা বাঁচল, আবার পুলিশ দৌড়ে পালিয়ে কানুর হাত থেকে বাঁচল। সেদিন কানুর আয় হয়েছিল মোটা অঙ্কের টাকা।

আইয়ুব খাঁন,
08/09/2021