The mystery of Howrah station in Bengali Spiritual Stories by Arghya Pramanik books and stories PDF | হাওড়া স্টেশনের রহস্য

Featured Books
Categories
Share

হাওড়া স্টেশনের রহস্য



গল্প হলেও সত্যিই । এই ঘটনাটি আমার এক খুব 

আপন জনের সঙ্গে ঘটে ছিল। তাই গল্পটি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবেন । আমি আমার রচনা গল্প আপনাদের সামনে তুলে দেখাবো। তাই আমার সাথে থাকো। এবং আমাকে আর উৎস যাতে এরকম আরো রহস্যজনক গল্প লিখতে পারি।




(একটি দীর্ঘ রহস্য–থ্রিলার গল্প)


১. অদ্ভুত সেই রাত


বর্ষার এক গভীর রাত। হাওড়া শহর ঝমঝম করে বৃষ্টি খাচ্ছে। রাত তখন প্রায় সাড়ে বারোটা। হাওড়া ব্রিজের নিচ দিয়ে কালো জলের ধারা ছুটে যাচ্ছে।

আর এই বৃষ্টিভেজা রাতেই—হাওড়া স্টেশনের ১৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে—একটি ঘটনার সূত্রপাত।


ট্রেন নেই, যাত্রী নেই, শুধু আলো ঝিমঝিম করছে। স্টেশনের ঘড়ি বারবার টিক টিক শব্দ করছে।

হঠাৎ—

ঘড়ির কাঁটা থেমে গেল। ঠিক ১২:৩৭ মিনিটে।


রেল–পুলিশের একজন কনস্টেবল, রণজিৎ, দূর থেকে দেখতে পেল—

প্ল্যাটফর্মের এক কোণে, পুরনো কাঠের বেঞ্চের ওপর একজন লোক বসে আছে। সাদা ধুতি–পাঞ্জাবি, মাথায় টুকটুকে লাল টিপ…

রণজিৎ এগোতেই লোকটা একটু হাসল।


— “আপনাদের স্টেশনে আবার সময় থেমে যায়?”

এই বলেই লোকটা মিলিয়ে গেল কুয়াশার মধ্যে।


রণজিৎ ভয়ে ঘেমে উঠল। সে তো চোখের সামনে দেখল—মানুষটা হাওয়ার মতো উধাও!


২. পুরনো নথির রহস্য


পরদিন সকালে স্টেশন–সুপার অমিতাভবাবু তদন্ত শুরু করলেন।

হাওড়া স্টেশনের রেকর্ড–রুমে অনেক পুরনো নথি।

তার মধ্যে ১৮৯৫ সালের একটি ফাইল দেখে তিনি চমকে উঠলেন।


সেখানে লেখা—

“১৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা। এক অচেনা মানুষ—সাদা ধুতি–পাঞ্জাবি—প্রতিবারই দেখা যায়।”


আরও খুঁজতে গিয়ে তারা জানতে পারল, তখন এক ব্যক্তি প্রতি রাতে হাওড়া স্টেশন থেকে স্ত্রীকে আনতে আসতেন।

কিন্তু একদিন স্ত্রী আসার আগেই তিনি স্টেশনে মারা যান।

যে সময় তিনি মারা যান, সেই সময়ই নাকি ঘড়ির কাঁটা থেমে যায়—১২:৩৭।


লোকটি আর কখনও বাড়ি ফিরতে পারেনি।

তাই নাকি তাঁর আত্মা ১৭ নম্বর প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যেতে পারেনি।


৩. সত্যি কি ভূত? নাকি অন্য কিছু?


রহস্য বাড়তেই থাকে।

স্টেশনে কাজ করা চায়ের দোকানদার, টিকিট–চেকার, কুলিরা সবাই বলে—

রাতে কেউ একজন “মা বউদি এসেছো?” বলে হাঁটাহাঁটি করে বেড়ায়।


কিন্তু CCTV ফুটেজে দেখা যায়—

কেউ নেই!

কিন্তু শব্দটা শোনা যায় স্পষ্ট!


স্টেশন–সুপার পুলিশ ডাকলেন, রেল–টেকনিক্যাল টিম ডাকলেন—

কেউই কারণ খুঁজে পেল না।


৪. তদন্তে নামল কলেজের তিন বন্ধু


রহস্য শুনে তিন বন্ধু—অন্বেষা, রুদ্র, আর শৌনক—তদন্তে নামল।

ওরা পড়ে ইতিহাস, প্রযুক্তি আর মনোবিজ্ঞান। তিনজনের বুদ্ধি মিলে সল্ট লেকে থেকেও ওরা রাত দুটোয় হাজির হল হাওড়া স্টেশনে।


ঘড়ি আবার থামল—১২:৩৭।

চারদিক ঠান্ডা হয়ে গেল।

হাওয়া বইতে লাগল উল্টো দিকে।

হঠাৎ পুরনো লাউডস্পিকার নিজে থেকেই বাজতে শুরু করল—


“প্ল্যাটফর্ম নম্বর সতেরো—যাত্রীদিগকে অনুরোধ করা হচ্ছে…”


কথাটা আধা–বাজা, আধা–কাঁপা। যেন যুগান্তরের পেছন থেকে আসছে।


৫. আসল সত্য উন্মোচন


অন্বেষা তখন লক্ষ্য করল—

ঘড়ি থামার সময়, প্ল্যাটফর্মের আলোয় সূর্যঘড়ির মতো একটা ছায়া তৈরি হয়।

রুদ্র খেয়াল করল—ছায়াটা যেদিকে পড়ছে, ঠিক সেদিকেই আগে যে মানুষটার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল তার জায়গা।


ওরা তিনজন সেই জায়গায় দাঁড়াতেই কানে এক চাপা কান্নার শব্দ ভেসে এল।


হঠাৎ সামনে কুয়াশার ভেতর থেকে বেরিয়ে এল সেই সাদা ধুতি–পাঞ্জাবি পরা মানুষটি।


কিন্তু এবার সে বলল—

“আমি চলে যেতে চাই… কিন্তু আমি পৌঁছাতে পারিনি। আমার স্ত্রী আজও অপেক্ষা করছে…”


অন্বেষা বুঝল—লোকটির আসলে কোথাও বাঁধন পড়ে আছে।

ওরা পুরনো নথি দেখে লোকটির স্ত্রীর সমাধিস্থল খুঁজে বের করল।

সেখানে নিয়ে গিয়ে লোকটির নাম ধরে তিনজন ডেকে বলল—


“আপনার স্ত্রী আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন না, আপনি মুক্ত।”


আলো কেটে গেল।

কুয়াশা কাঁপল…

আর মানুষটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল শান্ত আলোতে।


ঘড়ি ঠিক হয়ে গেল।

স্টেশনের বাতাস আবার স্বাভাবিক হল।


৬. এরপর?


হাওড়া স্টেশনে আর কখনও ১২:৩৭-এ ঘড়ি থামেনি।

১৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আর কেউ সেই মানুষটিকে দেখেনি।

চায়ের দোকানদাররা বলে—আজও মাঝে মাঝে হালকা গন্ধ পাওয়া যায়—সেই পুরনো আতর যার গন্ধে কেউ আর অভ্যস্ত নয়।


অনেকে বিশ্বাস করে, তিন কলেজ–বন্ধুই হাওড়ার শতবর্ষ–পুরনো একটি অভিশাপ ভেঙেছে।

আর আজ থেকে—

১৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মকে আর কেউ নিছক প্ল্যাটফর্ম বলে না—সে এখন গল্পের অংশ। রহস্যের