Jharapata 47 in Bengali Love Stories by Srabanti Ghosh books and stories PDF | ঝরাপাতা - 47

Featured Books
Categories
Share

ঝরাপাতা - 47

ঝরাপাতা

পর্ব - ৪৭

❤💕❤💕❤💕❤

যুগলদের অফিস থেকে বেরিয়ে রাস্তার ধারের একটা দোকান থেকে জল কিনে খেয়ে সিগারেট ধরায় রনি। এরপর একেবারে সোজা বড়বাজারেরই বাইরে চলে আসে। বড়বাজারে তিন পুরুষের গদি থাকলে, আরও নানান যোগাযোগ থাকে। তার মধ্যে গোবিন্দজির মতো ঝাঁ চকচকে ট্যাক্স কনসালটেন্ট থেকে শুরু করে মাসলম্যানও থাকে। এটা কলকাতা আর তার আশেপাশের বাকি ছেলেদের মতোই রনিও জানে। গোবিন্দ পাটানি আর সিং মার্চেন্ট এখন ওর খবর নিতে নির্ঘাত পিছনে লোক লাগিয়েছে। এক ফোনে নিচে অপেক্ষা করছিল, ও বেরোনোর পর থেকেই পিছু নিয়েছে হবে। 

তাতে রনির কোনো সমস্যা নেই। কারণ ওর ঠিকানা যুগলই ফাঁস করে দেবে, লুকোনোর উপায় নেই। সে পরে ও যুগলকে পটিয়ে নিজের দিকে নিয়ে আসতে পারলেও, আজ এরা খানিকক্ষণ আলোচনা করেই যুগলের সঙ্গে কথা বলবে। 

খেল শুরু হবে তার পরেই। সেজন্য পিছনে লোক লাগার সম্ভাবনা না থাকলেও রনি এখন বাড়ি ফিরত না। যুগল ওকে ডাকবেই। যুগলের পাড়াতেই এসে একটা পার্কে বসে রনি। বাতাসে শীতের ছোবল, বড়দিন, নতুন বছর আসছে। জানুয়ারি মাসে মিলির পরীক্ষা। তার আগে সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি মেটাতেই হবে। 

সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, রনি একটার পর একটা সিগারেট খেতে খেতে নিজের ফোনে সেভ করে রাখা মিলির ছবি দেখছে। ওর বিয়ের ছবিও রয়েছে তার মধ্যে। যুগলের ফোনের পাত্তা নেই। আশেপাশে বেশি লোক নেই। বেপাড়ায় এত ফাঁকা জায়গায় থাকা উচিত না। রনি পার্কের বাইরে এসে নিজের বাইকে হেলান দিয়ে দেখছে, নানান বয়সী, নানান সাজপোশাক আর মুডে লোকজন রাস্তায় যাওয়া আসা করছে। 

বছরের শেষের আগের রবিবার। হাসিখুশি মানুষের ঢল ফুটপাথ ছাপিয়ে রাস্তাতেই। এক দুজন বন্ধুকে সঙ্গী করে মানুষ বেরিয়েছে, বেরিয়েছে বন্ধুদের বড় দল। প্রেমিক প্রেমিকা, বাবা মায়ের সঙ্গে বাচ্চা, বা প্রতিষ্ঠিত সন্তানের হাত ধরে প্রৌঢ় বা বৃদ্ধ বাবা মা। রনির একবার বুকটা চিনচিন করে ওঠে, দাদা আর মা গল্প করে, ওরাও এভাবে পার্কস্ট্রিটে যেত বাবার সঙ্গে, তবে ওর নিজের মনে নেই। 

ফোন বেজে ওঠে, যা ভেবেছে, যুগল। ফোন রিসিভ করতেই চেঁচাতে থাকে, "তোমার এত বড় সাহস, আমাকে না বলে আমাদের গদিতে গেছো ! আমার পাপাজিকে ধমকি দিয়েছ ! সাহস থাকলে আমার সামনে এসে বলতে।"

- "সাহস আছে বলেই গেছিলাম। এখনও তোমার বাড়ির কাছেই দাঁড়িয়ে আছি। তোমার সামনেই আসছি, দেখি তোমার কতটা সাহস আছে আর তুমি কতটা ঠিক কথা বলছ।"

রনি আসার আগেও লিলির উপর চোটপাট করছিল যুগল, এখন ও ঢুকতেই আবার চেঁচায়, "তোমরা দুজনে সলাহ করে আমাদের ভয় দেখাবে ভেবেছ?"

- "সলা পরামর্শ করেই করেছি। তবে ভয় দেখাতে না, আমরা একটা গোলমাল মেটাতে চেয়েছিলাম। মেটাতে পারিনি। তবে তুমি হেল্প করলে সেটা মিটে যাবে।" রনি লিলিকে শিখিয়ে পড়িয়ে রেখেছে, কি বলবে না বলবে। তাই ও চুপ করে থাকে। 

- "আমার হেল্প? কি হেল্প চাই বলো?" যুগল রনির কথায় ফুঁসে ওঠে। 

- "যুগল, ঠান্ডা মাথায় ভাবো," রনি নিশ্চিন্ত মনে সিগারেট ধরায়, "তোমার লিলির সঙ্গে সমস্যা কোথায়? তোমাদের মধ্যে তো কোনো ঝামেলা নেই। তাহলে কেন...."

যুগল কথা শেষ করতে দেয় না, "ভাইয়া, এটা নিয়ে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলব না, বারবার বলেছি। আপনার কি হেল্প দরকার বলুন।"

- "যুগল, এই ব্যাপারেই হেল্প দরকার। তোমার সঙ্গে লিলির কোনো পারসোনাল প্রবলেম নেই। এদিকে তুমি এভাবে হঠাৎ বিয়ে করতে হয়েছে বলে যে টাকা পয়সার সমস্যা হচ্ছে, তোমাদের পড়াশোনার সমস্যা হচ্ছে, সেটা ফেস না করে বাড়িতে চলে যেতে চাইছ বিয়ে ভেঙে। স্বীকার করছ না, বুদ্ধি আর সাহসটা তোমার বাড়ি থেকে আসছে।"

- "যদি আসেই, কি প্রবলেম? তারা আমার নিজের লোক। আপনি এর বাইরে থাকুন।" যুগলের চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। 

- "আমিও লিলির নিজের লোক। ভুলে যেও না, মিলি আমার বৌ। তাও যদি একধাপ দূরের রিলেশন ভাবো, লিলির বাবা, মা, বোনের কথা ভাবো। এরা সবাই তোমার উপর খাপ্পা। রেজিস্ট্রি বিয়ে করেছ বলে তোমাকে কোনো শাস্তি দিতে পারেনি। গুণ্ডা ডেকে মারেনি, লিলি কষ্ট পাবে বলে। এখন যদি লিলির সঙ্গে না থাকো, তুমি কে ওদের কাছে?"

- "আমার কোনো ইচ্ছে নেই ওদের রিলেটিভ হতে। আর আমার গায়ে হাত দিলে থানা পুলিশ আমরাও চিনি।"

- "এই তো বোকামি করছ যুগল," রনি আয়েশ করে ধোঁয়া ছাড়ে, টেরিয়ে যুগলের থতমত মুখ দেখে একগাল হাসে, "তোমার বাড়ির লোকও প্রথমে ওটাই ভুল করেছিল। গায়ে হাত বাদ দাও, আমরা থানা পুলিশও করব না। কারণ তোমার বাড়ির লোকই কোর্টে নিয়ে যাবে তোমাকে, ডিভোর্স করাতে। তোমার এই যে গভীর অসুখটা করেছে প্রেমে পড়ে, বিয়ে করে, সেটার ট্রীটমেন্ট করাবে ওরা। নাহলে তোমাকে ওরাও বাড়িতে ঢোকাবে না। তখন আমরা কি পরিমাণ এ্যালিমনি চাইব ভেবেছ? সেটাই বলতে গেছিলাম। কেন, ওরা তোমাকে এই কথাটা বলেনি, ধমকি দিয়েছি বলেছে?"

- "বলেছে। বলেছে আপনি টাকা চান, আমাদের প্রপার্টি চান।" যুগল রাগে কি করবে ভেবে পায় না। তাই আপাততঃ গলার শির ফুলিয়ে চেঁচাচ্ছে। 

- "আমি টাকা চাই না, ডিভোর্স হলে লিলি এ্যালিমনি হিসেবে এগুলো পাবে। কেন, তুমি জানতে না? তোমাদের ফ্যামিলির উকিল বলেননি? তোমাদের বিয়ে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে, আর ডিভোর্সের সলিড কারণ নেই তোমার বা তোমার বাড়ির লোকের কাছে। লিলি চা খাওয়াও, বকে বকে গলা শুকিয়ে গেল।" এই কনফিডেন্ট রনিকে দেখলে কে বলবে, মিলিকে বোঝানোর কোনো উপায় এখনও হয়নি? 

- "এ্যালিমনি চাইবেন, কে বারণ করেছে? আমার যা চাকরি, রোজগার, সেই অনুযায়ী এ্যালিমনি পাবে ও। আমার একটা বাড়িও নেই ভুলে যাচ্ছেন।" যুগল তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলে। 

- "বাড়ি থেকে শিখিয়ে দিয়েছে? এইজন্য বলেছিলাম, মাথা ঠান্ডা করো। তোমার রাগ হল আমি তোমাকে সাপোর্ট করছি না বলে। ব্যস, কদিন ধরে সব ফ্রেন্ডশিপ শেষ। আজ আপনি বলছ মেজাজ দেখিয়ে। তখনই বুঝেছি, তোমাকে যারা বুদ্ধি দিচ্ছে, তারা একটুও বুদ্ধি ধরে না। অথচ তোমাকে বোকা বানাতে চাইছে।"

- "খবরদার রনি ভাইয়া, আমার পাপা আর..." যুগল আঙ্গুল তুলে গর্জে ওঠে। 

- "থামো তো," রনি ওর ধমক থামিয়ে শেষবার ধোঁয়া ছেড়ে সিগারেটের ফিল্টারটা এ্যাশট্রেতে গুঁজে দেয়, "নিজেই স্বীকার করছ, এসব বুদ্ধি তোমার বাবার। বুঝে কথা বলো। এভাবে কোর্টে আমাদের ব্যারিস্টারের জেরায় উত্তর দেবে? ঘোল খেয়ে আসবে। শোনো, তোমাদের ফ্যামিলি বিজনেস আর আদার্স প্রপার্টি থেকেই এ্যালিমনির টাকা হিসেব হবে। পাইপয়সা গুণে নেব আমরা। যে ব্যবসার জন্য লিলিকে কষ্ট দিচ্ছ, সেই ব্যবসাতেই আঘাত করব।"

- "তার মানে তুমি আসলে টাকার পিচাশ?" যুগল লিলির দিকে ফিরে চেঁচিয়ে ওঠে। 

- "না লিলি নয়, তোমার বাড়ির লোকেরা টাকার পিচাশ। লিলির কোনো দোষ নেই, তাও বাড়ির লোকের কথায় বোকার মতো ওকে ফেলে দিচ্ছ টাকার জন্য। এদিকে তুমি নিজের সম্পত্তি কতটা তাও জানো না। ঐ ফ্যামিলির প্রপার্টিতে তোমার ভাগ কতটা ভুলে গেছ? ওটা ফ্যামিলি প্রপার্টি, তোমার দাদা, পরদাদাদের আমলের সম্পত্তি। ঐ প্রপার্টি, ব্যবসা থেকে তোমার নাম হঠানো যাবে না। সেইজন্যই ওরা তোমাকে দুর্বুদ্ধি দিচ্ছে, লিলিকে ছেড়ে ফিরে যাওয়ার। বাচ্চা ছেলে, খেয়াল করছ না, ঐ প্রপার্টি তোমার বাড়ির লোকের আসল লক্ষ্য। 

- "কে বলেছে? আমাকে বাচ্চা ভেবে বাড়ির লোকের নামে বোঝাবেন না।"

- "এখনও তোমাকে বোঝাইনি যুগল। বেশ, তোমার বাড়ি থেকে কি বলেছে, সেটা বলো। ওরা বলেছে, এই প্রপার্টিতে তোমার ভাগ আছে? বলেছে, তোমার লিগাল ওয়াইফের তাতে ভাগ আছে? এগুলো কিন্তু তোমাদের উকিলের সামনে কথা হয়েছে। সে প্রতিবাদ করতে পারেনি। এই কথাটা বলেছে ওরা? বলেছে, আমরা এক টাকাও কোর্টের বাইরে চাই না? যা হবে, ডিভোর্স হলে কোর্ট থেকে ভ্যালুয়েশন করে লিলির ভাগ লিলিকে কোর্ট দেবে, আর আমরা মেনে নেব, এটা বলেছে তোমাকে?"

যুগল চুপ। এসব কথা বাড়ি থেকে বলেনি। শুধু ওর বাবা বিস্তর কথা শুনিয়েছেন, বঙ্গালিন মেয়ে বিয়ে করে ও ব্যবসা নষ্ট করে দিচ্ছে। সেই মেয়ের বাড়ি এখন ব্যবসা মেয়েকে লিখে দিতে চাপ দিচ্ছে। 

- "কি হল যুগল, এগুলো ওরা বলেনি? বেশ তোমার বাবার নম্বর দাও। তোমার সামনে আমার ফোন করে স্পীকারে কথা বলছি, শুনে নাও আমার কথা সত্যি কিনা। নাহলে কাল তোমার বাবার পছন্দ করে দেওয়া উকিলের কাছে চলো, ফ্যামিলি প্রপার্টিতে তোমার ভাগ কতটা জেনে আসি। সেটা অবশ্য তুমি গুগল সার্চ করে একবার ফ্যামিলি বিজনেসের রুলস পড়ে নিলেই জেনে যাবে। পড়বেই বা কেন, আমি না মাস্টারমশাই, তুমি না এমবিএ করছ?"

যুগল এখনও চুপ। রনি বোঝে, ভাবছে। বাড়ির লোক এতদিন যা বলেছে, তার সঙ্গে রনির কথা মেলাচ্ছে ও। ওকে সময় দিতেই আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে আয়েশ করে টানতে থাকে রনি, "নাও বাচ্চু, বাপছেলে বসে বসে ভাবো, খুঁচিয়ে ঘা করলে কি হয়।"

- "মানে তোমরা শুধু টাকাই চাও?" রনির সিগারেট যখন শেষের পথে, যুগল প্রশ্ন করে লিলিকে। 

- "না, টাকা আমরা চাই না। কিন্তু তোমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যা ভুল বোঝাবুঝি, তর্কাতর্কি হচ্ছে, সেটা মেটানোর চেষ্টা না করে উলটে নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে তোমাদের সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে কয়েকজন। তুমি নিজেও ভালোবাসার মানুষের জন্য কয়েকদিন একটু কষ্ট করে চলতে হচ্ছে বলে ভাবছ ঐ ছাতার তলায় ফিরে যাবে। আর কিছু না হোক, টাকাপয়সার অভাব হবে না তাহলে। তাই আমরাও ঐ টাকাই ছিনিয়ে নিয়ে শায়েস্তা করব তোমাদের। তারপর বিলিয়ে দেব গরিবদের মধ্যে।" হা হা করে হাসে রনি।

- "সব কথাই ইয়ার্কি দিয়ে হয় না।" যুগলের গলার তেজ কমেছে, একপাশে বসে পড়েছে। 

- "ইয়ার্কি মারছি না যুগল। টীজ করছি তোমাকে। অথচ একদিন তোমরা দুজন কত সুন্দর প্ল্যান করেছিলে, চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করে নিজেরা নিজেদের ভবিষ্যৎ বানাবে ভেবেছিলে। তোমাদের দেখেই আমিও মনের জোর পেয়েছিলাম। সেই যুগল সিং কোথায়? সে আজ ডিভোর্স, এ্যালিমনির টাকা নিয়ে লড়াই করছে।"

- "ডিভোর্সের কথা আমি তুলিনি। আপনি তুলেছেন।" গোঁ গোঁ করে যুগল। 

- "সমানে একই কথা বলছ এ কদিন ধরে, লিলির জন্য তোমার ফিউচার খারাপ হয়ে যাচ্ছে। লিলি ন্যাগ করে, ওর সঙ্গে থাকা যায় না। যারা একসঙ্গে থাকে না, তারা ডিভোর্স করে। তোমার বাড়ির লোক তো বলল, ডিভোর্স হবে, তখন লিলি তোমার স্যালারি, পিএফ এসবের টাকা পাবে কেবল। আচ্ছা, ঠিক আছে, আমি গিয়ে কি কি বলেছি, তুমি বললে। আমি প্রমাণ করে দিলাম সব ভুলভাল। এবার বলো তো তোমার বাড়ির লোকেরা কি বলল। ওরা তোমাকে ফেরত নেবে, ডিভোর্সের কেসের খরচা দেবে, আইন মোতাবেক লিলি যা পাবে, সেসব দিয়েও তোমাকে এই বাঙ্গালী বৌয়ের হাত থেকে বাঁচাবে, বলেছে?"

যুগল জানে, বাবা বলেছেন, ব্যবসা ভাগ হবে না, বাড়ি ভাগ হবে না। ওর বৌ এসবের ভাগ চাইলে লিলিকে ছাড়বে না ওরা, ওকেও বাড়ির চারপাশেও যেন না দেখে। তখন ওরও রাগ হচ্ছিল লিলির উপর। এখন বুঝেছে, লিলির সঙ্গে ঝগড়া, রাগারাগি হয়েছে, সেটা স্বাভাবিক একটা ঘটনা। ওর বাড়ির লোকেরা যা বলছে, সেটা স্বাভাবিক নয়। ওরা না অন্য জাতের বলে লিলির কোনো গুণ স্বীকার করছে, না ওর ডিভোর্স হলে, লিলির বাড়ির তরফে ওকে দায়ী করলে, ওর বাবা কেসে টাকা লাগাবে। বরং ওকে বোকা বানাচ্ছে ওর শেয়ারের টাকা আটকে রাখতে। 

- "আমি বলি? ওরা তোমাকে বলে দিয়েছেন, টাকার ভাগ দিতে হলে, তোমার ঐ বাড়িতে যাওয়ার দরকার নেই, তাই না? বেশ তো ডিভোর্স হোক, সম্পত্তি ভাগ হোক। সেগুলো আমরা সমাজসেবায় লাগাব। তখন তুমিও এসো, আমরা তোমার টাকার থেকেই কিছু তোমাকেও দানে দেব। কারণ তোমার বিয়ের জন্য ব্যবসায় কোপ পড়লে তোমাকে বাড়ি থেকে ঘেঁটি ধরে বের করে দেবে। আর যদি ডিভোর্স দিতে চাপ দিয়ে লিলির উপর মেন্টাল টর্চার করছ, এই ক্লজটা জুড়ে দিই কেসে, চাকরি বাকরিও যাবে। তখন খাবে কি? তোমার সেই অবস্থা দেখলে আমাদের কষ্ট হবে। লিলি চা দিলে?"

যুগল হাঁ করে তাকিয়ে আছে, লিলি চা বসিয়েছে, রনি আবার সিগারেট ধরিয়েছে। 

যুগল একটু পর সিগারেট ধরিয়ে রনির পাশে এসে বসল, "আপ এ্যায়সে নেহি করোগে ভাইয়া।"

- "এ্যায়সাই করব হতভাগা। যতবার কেস করব ভয় দেখাই, আমার সঙ্গে ভাব করবে। খবরদার আর কোনোদিন ভাইয়া বলবে না। আগেরবার কি ভাব আমার সঙ্গে, আমি যাতে কেস না করি। এবার লিলির হয়ে দুটো কথা বলেছি, আমি এ বাড়িতে আসি, ওর ইচ্ছে না। আমার কথা বাদ দাও, এই মেয়েটা ওর জন্য সব ছাড়ল, এখন ওকে ফেলে বাবার কোলে গিয়ে উঠবে। আর আমি ছেড়ে দেব?"

- "তো ম্যায় ক্যায়া করু? মুঝে এ্যায়সে রহনে কি আদত নেহি হ্যায়। নোকরি, পড়হাই, সবকুছ মেরে সরপে। ইসকে বাদ উসকি খিঁচখিঁচ, ম্যায় বদল গ্যায়া হুঁ, ম্যায় উসকে বারে মে শোচ নেহি রহা হু।" 

- "যুগল" রনি এবার ওর কাঁধে হাত রাখে, "অনেক সমস্যা আছে আমিও বুঝি। সমস্যাগুলোর সামনে একসঙ্গে দাঁড়াও। টাকা পয়সার অসুবিধা হচ্ছে, লিলিকে বুঝিয়ে বলো। দরকার হয়, আমিও বলছি। চাকরি, পড়াশোনা, নতুন সংসার সামলানো, বাড়ির লোককে ছেড়ে আসা সব তো ওরও হয়েছে? তুমি বাড়ির লোককে দেখেই ভাবলে, ওকে বাদ দিলেই সুখে থাকবে? ওকে না ভালোবাসো? ওকে ছেড়ে কখনো ভালো থাকতে পারো তুমি?"

- "ও খুব ভালো থাকবে। ওর যা ইচ্ছে করুক। তুমি আমাকে একটু মায়ের সঙ্গে দেখা করিয়ে দাও। মা বাড়িতে ঢুকতে না দিলে, এই বাড়িতেই থাকব। তুমি আর মিলি মাঝে মাঝে এসো, খোঁজ খবর নিও। তাহলেই হবে। ওকে বলো আজই এখান থেকে চলে যেতে। উকিলের সঙ্গে কথা বলি, কেস টেস ধীরে ধীরে হবে।" লিলি দুজনের সামনে চা বিস্কুট রেখে ছুটে বারান্দায় চলে যায় কাঁদতে কাঁদতে। 

যুগল মাথা নিচু করে বসে আছে। সেটা দেখে রনি বলে, "কি করবে? ওর সঙ্গে কথা বলবে নাকি চলে যাবে? যদি কথা বলো, আমি চা খেয়ে চলে যাচ্ছি। আর যদি তুমি চলে যাও, আমি তো ওকে এভাবে রেখে যেতে পারব না, সঙ্গে করে আমার বাড়িতে নিয়ে যাব। দায়িত্ব নিয়ে ওর বাড়িতে কথা বলব।"

- "তুমি কথা বলো, বোঝাও একটু, আমার কথা শোনে না।" যুগল মাথা নিচু করেই আছে। 

রনির হাসি পায়, মনে মনে বলে, "আমার বৌও আমার কথা শোনে না। সেইজন্যই এদিকে মন দিতে পারছিলাম না পুরোপুরি। এখন যখন বুঝেছি, আমার বৌটাকে পটানোর জন্য তোমাদের ঝামেলা মেটাতে হবে, শ্রেয়ান সরকার কি করবে ঠিক করে নিয়েছে।" যুগলের কাঁধে হাত রেখে বলে, "মন থেকে বলে দেখো, ঠিক শুনবে। ওর অবস্থাটা নিজেও বোঝো। বারবার বলছি, তুমি ছাড়া কে আছে ওর?"


চলবে