Jharapata 45 in Bengali Love Stories by Srabanti Ghosh books and stories PDF | ঝরাপাতা - 45

Featured Books
Categories
Share

ঝরাপাতা - 45

ঝরাপাতা

পর্ব - ৪৫

❤💕❤💕❤💕❤

- "তাই বলে তুমি ওকে ডাকবে না?" লিলি রনির কাণ্ডে অবাক। 

- "এখন ডাকলাম না। ওর সঙ্গে ঠিক কথা বলব। তবে লাভ হবে কিনা জানি না। এটাই আমার আসল শাস্তি। মানুষ তার সব অন্যায়ের শাস্তি পায় লিলি। একদিন এই মেয়েটাকে এর থেকেও খারাপ অবস্থায় ফেলে চলে গেছিলাম, কোনো কারণ ছাড়াই অবিশ্বাস করেছিলাম। ছোট একটা মেয়ে, সবার সম্মান বাঁচাতে নিজের গোটা জীবন বিসর্জন দিয়েেছিল। তুমিই বলেছ, আমাকে ভালো ছেলে ভাবত ও। হয়ত ভেবেছিল, আমি পাশে থাকব। কিন্তু কোনোদিন আমাকে পাশে পায়নি। আজ আমি ডাকলেই শুনবে কেন বলো?"

লিলির আচমকা খুব ভয় করে, "আমার জন্যই সব গণ্ডগোল হয়েছিল সেদিন। আমিও তারই শাস্তি পাচ্ছি বলো?"

- "তোমাকে কোনো শাস্তি পেতে আমি দেব না। বাড়িতে, পাড়ায় না ফিরতে পারো, আমি তো আছি।" রনি নিজের কথা ভুলে চোয়াল শক্ত করে বলে। 

- "তুমি? তুমি কি করবে? এমনিতেই আমার জন্য দুবার তোমার জীবনের সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেল। তোমার বিয়েটা এত অদ্ভুতভাবে হল, তোমাকে সবাই গব্বর সিং ভেবে নিল। যদিও বা তুমি এতদিন চেষ্টা করে সেগুলো ঠিক করলে, মিলিকেই তোমার কাছ থেকে দূরে করে দিলাম আমি।" লিলিও ধপাস করে বসে পড়েছে। 

- "লিলি, চুপ করো, আপশোষ করা বন্ধ করো। কতটা তোমার ভুল, কতটা আমার, এ নিয়ে অনেক কথা হয়ে গেছে। এবার অন্য একটা কথা শোনো।"

- "কি কথা?"

- "দেখো, আমার সন্দেহ হয় পলাশের সঙ্গে মিলির একটা সম্পর্ক ছিল। ও বিয়েটাও ভুলে গেছে, সম্পর্কটাও ভুলে গেছে।"

- "আর তুমি পুরো পাগল হয়ে গেছ। আর নয়তো এমন কথা নিয়েও মজা করছ।" এমন অদ্ভুত কথায় লিলির মুখে এটাই আসে। 

- "না রে বাবা। আমি সিরিয়াস। যদি সেটা হয়, আমাকে সব মেনে নিতেই হবে। আর এটা নিয়ে আমি মজা করব? শোনো, আমি মিলির সঙ্গে পরীক্ষা নিয়ে ঝামেলা হওয়ার পর যা যতটুকু কথা বলতে চেয়েছি, মিলির মনোভাব জানার জন্য। ওর সঙ্গে যে ঝামেলা হয়েছিল সেটা মিটিয়ে ভাব করার জন্য না।"

- "রনিদা, আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। কি বকছ এগুলো? এখন তো মনে হচ্ছে মিলির চলে যাওয়াটাই ঠিক।"

- "লিলি, প্লিজ স্টপ কমেন্টিং। আচ্ছা আচ্ছা, আয়াম সরি। আসলে তোমার নিজের টেনশনে আমার কথা বুঝছ না....... শোনো, এইটুকু তো বুঝেছ, আমাদের জানতে হবে, ও আমাকে মানে ইয়ে, পছন্দ করে, নাকি পলাশকে?"

- "এভাবে কেন ভাবছ ও পলাশকে ভালোবাসে? ও তোমাকে নিজের মুখে বলেছে, তোমাকে ভালোবাসে। ঐ ঝামেলার দিন পর্যন্ত তোমার সঙ্গে ভালো করে কথা বলেছে......"

- "লিলি, তারও আগেরদিন ওর সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়েছিল, কেউ জানেনা।"

- "আগেরদিন? আগেরদিন তো আমাদের বাড়িতে এলে?"

- "হুঁ, সেদিনই। ফেরার পথে গম্ভীর হয়ে ছিল। রাস্তায় কথাই বলতে পারলাম না। বাড়ি ফিরে ফোন করেছিলাম, কাটিয়ে দিল। অবশ্য পরদিন সকালে কথা বলেছিল। আমার শরীর ভালো না দেখে, একা কলেজে যাবে বলল। আর সেদিন সন্ধ্যায় ঝামেলা।"

- "তাহলে আগেরদিন ঝামেলা হল কি নিয়ে?"

- "সেটা তখন আমিও বুঝিনি। আমার জ্বর এসেছিল, তারমধ্যে এত বড় কাণ্ড, ওর সঙ্গে ঝামেলা, কথা বন্ধ, তোমার বাবার সঙ্গে পর্যন্ত মিসবিহেভ, মানে ঘটনার কোনো অভাব ছিল না। আর তারপর একদিকে আমার জ্বরটা বেড়ে গেল, একদিকে তোমার সমস্যা। আমি ঐদিনের কথা ভুলেই গেছিলাম। বরং ধরেই নিয়েছিলাম, হয় ও আমার ধমক আর খারাপ ব্যবহারে রাগ করেছে, নয়ত পলাশের প্রতি নিজের মনের টানটা বুঝতে পারছে। সেদিন যখন ও আমাকে দেখতে এল, আমার কথা শুনলো না আজকের মতো, কিন্তু ভীষণ কান্নাকাটি করল।"

- "সে তো কাঁদবেই রনিদা। তোমার উপর রাগ করেও আসলে তো কষ্টই পাচ্ছে।"

- "আই এগ্রি। লিলি চলো কিছু একটা অর্ডার দিই, অনেকক্ষণ বসে আছি, আর বসতেও হবে, কথা আছে আরও।" রনি হাত নেড়ে ওয়েটারকে ডাকে। লিলির কিছু খেতে ইচ্ছে করছিল না। এদিকে আজ এখানেই খাবে প্ল্যান ছিল। তার মানে রনিদাও খেয়ে আসেনি। তাই ও আর না করে না। 

রনি অর্ডার দিয়ে, ওয়েটার চলে যেতেই বলে, "মিলি কতটা কষ্ট পাচ্ছে, আমি জানি। ঐ কষ্টটা আর পায়, চাইনি। আমার আর পলাশের মধ্যে যাকে পছন্দ করে, তাকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দিতে সরে ছিলাম। আমার বাড়ির ঘটনার পর আর আমি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না। তাই তোমাকে ফোন করেছিলাম। কলেজ ছুটির পর মিসকল করলাম তোমাকে, ওর সঙ্গে কথা বলতে। আজ এখানে আনালাম, যাতে কথা বলতে পারি। যে কথাটা তোমাকে বলিনি, ওর রাগ অন্য কারণে, তোমার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব বলে।"

- "মানে?"

- "মানে একটা আছে, সেটা প্রথমে বুঝিনি। তবে এখন যখন বুঝেছি, মিলিকে অনেক কথা বোঝাতে হবে।"

- "মিলিকে কি বোঝাবে? আমার সঙ্গে তোমার বন্ধুত্ব হলে ওর কিসের রাগ?"

- "বুঝলে না? আমিও সবে সেদিন বুঝলাম। ও তো জানে আমি তোমাকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলাম। ওরা সবাই তোমার উপর রেগে আছে এতসব হয়েছে বলে, এখন সেই তোমার সঙ্গেই আমি যোগাযোগ রাখি, ওর রাগ হওয়ারই কথা। এটা আমিই খেয়াল করিনি। ওকে তোমার সব গল্প বলা উচিত ছিল। অবশ্য দেখা করানোর পর সব ঠিক হয়ে যাবে ভেবেছিলাম। সেদিন অলরেডি তোমার আর যুগলের ঝামেলা হয়ে গেছে বলে সব আর বলা হল না।"

- "তাতে কি?"

- "ও ভাবছে আমি তোমাকে পছন্দ করি।" বলেই হেসে ফেলল রনি। লিলির চোখ বড় বড় হয়ে গেছে, কথা খুঁজে পাচ্ছে না। 

- "আরে বাবা, ঘাবড়ে যেও না। আমি তোমার সম্পর্কে কিছু ভাবি না। তুমি তো অন্ততঃ জানো, বিয়ের আগেও তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কেমন ছিল? বরং এখন দুজনেই জানি, কে কাকে ভালোবাসি, এখন আমরা ঠিকঠাক বন্ধু। মিলি তো আমাদের মধ্যে কি কি কথা হয়েছে জানে না। ও বেচারা ইনসিকিওর্ড হয়ে যাচ্ছে।" রনি লিলিকে পরিস্থিতি বোঝায়। 

- "এবার বুঝেছি" চোখ গোল গোল করেই লিলি বলে, "ইস, কি ভুল করেছি ! ও খুলে বলতে পারছিল না, তোমার ব্যাপারে আমি কি ভাবি আসলে সেটাই জানতে চাইছিল।" রনিকে মিলির ফোনের কথা বলে লিলি। রনিও এই ফোন কলটার কথা জানত না। এখন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করে, লিলি যথাসম্ভব মনে করে করে বলে মিলির প্রশ্নগুলো, ওর নিজের মিলির প্রশ্নের পিছনের উদ্দেশ্য না বুঝে দেওয়া উত্তরগুলো। 

দুজনেই বোঝে, লিলির ক্যাজুয়াল কথাবার্তায় মিলির জন্য যথেষ্ট ভুল বোঝার রসদ ছিল। আর তারপরই মিলি গেছিল রনিকে দেখতে। হয়তো ওর সম্পর্কে রনির মনোভাব যাচাই করতেই এসেছিল। রনির আপশোষে হাত কামড়াতে ইচ্ছে করছিল, যদি সেদিন ও বড়রা বাড়িতে আছে বলে পিছিয়ে না যেত, জোর করে মিলিকে আটকে রাখত, আবার বলত, মিলিকে ভালোবাসে, একটু মনের জোর পেত মেয়েটা। 

- "সরি রনিদা, আমি না বুঝে......"

- "তোমার কোনো দোষ নেই। যা হয়েছে, সেটা হওয়ার ছিলই। আর এবার আমি মিলিকে আর একলা কষ্ট পেতে দেব না, কিছুতেই না। তার জন্য প্রথমে বোঝাতে হবে যুগলকে। আচ্ছা, ওকে এখানে ডাকা যাবে না?"

- "না না, যুগল এখন আবার নিজের বাড়িতে ফিরবে। তাই এসব রেস্টুরেন্টে আসবে না। আবার নিরামিষ খাওয়া ধরবে। কেউ ওকে এখানে দেখে ফেললে যদি বাড়ির লোকেরা রাগ করে !"

- "ফেরাচ্ছি ওকে বাড়িতে। চলো, খাবার দিয়ে দিয়েছে, চটপট খেয়ে নিই। ভালো কথা, যুগল ননভেজ খায়, তাই না?"

- "খুব খায়। ও অর্ধেকের বেশি বাঙালি। এখন আমার সঙ্গে যেহেতু ঝামেলা হয়েছে, তাই বাড়ির লোকের কথাই একমাত্র ঠিক।"

- "এটা ঠিক, হঠাৎ বিয়ে করে তোমাদের খুব চাপ হয়েছে।"

- "হ্যাঁ, বড় কিছু চাকরি করি না, এদিকে বাড়িভাড়া থেকে সব খরচ। রান্নাবান্না করে অফিস, পড়াশোনা, পাগল হয়ে যাচ্ছি।"

- "যুগলেরও একই অবস্থা লিলি, তুমি একটু ভালো করে কথা বলো ওর সঙ্গে।"

- "বলিনি? আমিও এটাই বলি, আমরা দুজনেই যখন কষ্ট করছি, ও অন্ততঃ ভালো ব্যবহারটা করতে পারে। না, এক কথা, আমার বাড়ির চাপে এখন বিয়ে করতে হল। দু তিন বছর সময় দেব বলেছিলাম ওকে। দিতে পারলাম না, সেই নিয়ে রোজ রাগ। আর ওর বাড়িও চাইছে, ও ফিরে যাক, ব্যবসা ভাগ না হয়।"

- "হুম, বুঝেছি। প্রথমে যুগলকে লাইনে আনতে হবে। আর যত ঝঞ্ঝাটের মূল এই ব্যবসা। দেখাচ্ছি মজা। ঠিকানাটা দাও তো। আমি একবার ওর বাড়ি যাই। যুগলের বাবার সঙ্গে কথা আছে আমার।"

- "ওর বাবার সঙ্গে?" লিলি চেয়ার থেকে পড়ে যায় আরকি ! 

- "ইয়েস, ওর বাবা। কান টানলে মাথা আসে। ওর বাবার সঙ্গে আমি দেখা করলে, ও আমার সঙ্গে নিজে দেখা করবে, তাও আমার শর্তে। দেখতে থাকো।"

- "তুমি কি করতে চাও বলোতো?" লিলি চোখ সরু করে তাকায়। 

- "আমাকে বিশ্বাস করো?"

- "এ আবার কেমন কথা?"

- "এটাই কথা। বিশ্বাস করলে আমাকে তোমার সসুরালের ঠিকানা দিয়ে নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমোও। যুগল আমার সঙ্গে দেখা করবেই, কথা বলবেই।" 

- "আমি এটাই বুঝতে পারছি না, মিলিকে তোমার কথা বললে যুগলের কথা শুরু করে। তুমিও কোথায় মিলিকে দেখবে, তা না চাইছ যুগলের সঙ্গে দেখা করতে।"

রনি মুখ টিপে হাসে, "মিলির যুগলের ব্যাপারে এত উৎসাহ বলেই যাচ্ছি। চলো তাড়াতাড়ি করো।"

চলবে