Food literacy in Bengali Health by Yogi Krishnadev Nath books and stories PDF | ফুড লিটারেচি

Featured Books
Categories
Share

ফুড লিটারেচি

ফুড লিটারেচির অভাব ও ভারতের ভবিষ্যৎ:

-- যোগী কৃষ্ণদেব নাথ 

আমরা সবাই পড়াশোনা করি মানুষ হবার জন্য। কেউ ডাক্তার হয়, কেউ ইঞ্জিনিয়ার হয়, কেউ হয় বড় অফিসার। কিন্তু এত বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করেও কয়জন বলতে পারে — সকালে কী খেলে শরীর শান্ত থাকে, দুপুরে কী খেলে মস্তিষ্ক ঘুমিয়ে পড়ে ? বই খেয়ে কেউ বেঁচে থাকতে পারে না। বাঁচার জন্য দরকার খাদ্য। তাই খাদ্যের বিজ্ঞান বাকি সমস্ত বিজ্ঞানের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য সম্পর্কে যে নলেজ থাকা দরকার এটাকেই বলে ফুড লিটারেচি। 
বই পড়ে আমরা পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করতে পারি, কিন্তু ফুড লিটারেচি না থাকলে আমরা আমাদের শরীরের কাছে অবশ্যই মূর্খ। এই মূর্খতা এখন চরম অবস্থায় পৌঁছে গেছে। মানুষ খাবারের এবিসিডি কোনো কিছুই না জেনে শুধুই খেয়ে যাচ্ছে।

নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি অনেক ডাক্তারবাবুরাও ফুড লিটারেচি জানেন না। যদি সত্যিই জানতেন, তাহলে তাঁরা কখনো ওবেসিটি, ডায়াবেটিস এসবের শিকার হতেন না।
এই না জানাটা তাঁদের কোনো দোষ নয়। কারণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় “খাওয়া” ব্যাপারটি কোনো বিষয়ই না। যেন মানুষ খায় কেবল পেট ভরানোর জন্য, বাঁচার জন্য নয়।

চিন, জাপান, কোরিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখুন। ওরাও আমাদের মতোই ভাত খায়, কিন্তু ওদের শিক্ষা শুরু হয় “খাওয়া” দিয়ে, শেষও হয় “খাওয়া” দিয়ে। ওরা জানে, খাবার হলো শরীরের ভিতরের একটি স্বাভাবিক ভাষা। শরীরের প্রতিটি কোষ এই ভাষাতেই আমাদের সঙ্গে কমিউনিকেশন বজায় রাখে। আপনি ভুল খাবার খেলে শরীর প্রতিবাদ করবে। ডায়াবেটিস, স্থূলতা, রক্তচাপ — এইগুলো হচ্ছে শরীরের প্রতিবাদপত্র, যেখানে লেখা থাকে: "তুমি আমাকে যা দিয়েছো, আমি তা-ই ফিরিয়ে দিলাম।” এজন্যই বলা হয়, তুমি মূলতঃ তা'ই, যা তুমি খাও।

আমাদের দেশে এই শিক্ষার নাম নেই, চিহ্নও নেই। স্কুলে ইতিহাস শেখানো হয়, গণিত শেখানো হয়; কিন্তু কেউ শেখায় না চালের মধ্যে থাকা গ্লুকোজ কার জন্য কতটা দরকার। শিশুদের মিড ডে মিলে রেশনের সাদা চালের গরম গরম ভাত খেতে দেওয়া হয় — যাতে থাকে না কোনো ফাইবার, না কোনো জীবনীশক্তি, থাকে শুধু ইনসুলিনের বীজ। এরফলে ওরা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হয়ে পড়ে। তারপর বড় হয়ে সেই শিশুই একদিন মোটা হয়, ডাক্তার বলে “লাইফস্টাইল ডিজিজ”; আর আমরা বলি — “বংশগতি।” না ভাই, এটা কোনো বংশগত বৈশিষ্ট্যের ব্যাপার নয়। এটা সঠিক শিক্ষার অভাব — Food Literacy-র অভাব।

চিন আজ জিএমও ব্যবহার করে, কিন্তু ওদের দেশের মানুষেরা জানে শরীরের আগুন কীভাবে জ্বালিয়ে রাখতে হয়। ওরা জানে গরম জল আর ফারমেন্টেড খাবার শরীরের ডিটক্স মেশিন। আমরা এসবের কিছুই জানি না, আমরা জানি শুধু ভাত রুটি পরোটা পুরি চিনি তেল এসব। তাদের দেশে মানুষ খাবার খায় কাজ করার জন্য, আর আমাদের দেশে মানুষ কাজ করে খাবার খাওয়ার জন্য। ফারাকটা সেখানেই।

এখন অনেকেই বলে Artificial Intelligence পৃথিবী বদলে দেবে। আমি বলি — Food Intelligence না এলে মানুষ টিকবেই না। কারণ শরীরের কোষ কোনো AI বোঝে না, সে বোঝে কেবল গাছ, জল, বাতাস, সূর্য আর পুষ্টি।

তাই বলছি — বড় বড় ডিগ্রির চেয়েও বড় শিক্ষা হলো “খাওয়ার শিক্ষা।” শরীর যদি শিক্ষিত না হয়, বাকি সব জ্ঞানই একদিন শরীরের ভেতর হারিয়ে যাবে। ফুড লিটারেসি মানে কী খেতে হবে, শুধু এটুকুই নয়, বরং কেন খেতে হবে, কখন খেতে হবে, আর কাকে খাওয়ানো হবে — সেটাও বোঝা। যেদিন স্কুলে শিশুরা এইটা শেখা শুরু করবে, সেদিন হাসপাতালগুলো খালি হয়ে যাবে, আর সমাজ একটু হলেও সত্যি বুদ্ধিমান হবে। ফুড লিটারেসির শিক্ষাই আসল শিক্ষা। বাকিটা শুধু জীবনের পরীক্ষার প্রস্তুতি। যে জাতি তার খাবার বোঝে না, সে তার ভবিষ্যৎও বোঝে না।