I am here - Part 2 in Bengali Love Stories by sari books and stories PDF | আছি আমি পাশে - পর্ব 2

The Author
Featured Books
Categories
Share

আছি আমি পাশে - পর্ব 2

#আছি_আমি_পাশে
#পর্ব-2

শীতের কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে নিজের স্মৃতি চারণে মগ্ন হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বিভোর ছিলাম । ইস্ সেই বৃষ্টি ভেজা রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় মাটির সেদো গন্ধটা এখনো কি পাওয়া যায়? আগের মত ঝড়ে কি আম পরলে বাচ্চারা কুড়োতে আসে ছুটে?? বাড়ির সামনে দিয়ে দীঘির পাড়ে যাওয়া মাটির রাস্তাটা কি এখনো আছে ?? এখনো কি বাড়ির পিছনে পিয়ারা গাছটায় পিয়ারা খাওয়ার জন্য বনলতা আসে?? বৃষ্টি হলে বাচ্চাদের লাফাই কি এখনো মাঠে ?? একটু মনে খারাপ হলে আমার কথা তার মনে পড়ে?? আমি যে তার খেলার সাথী , একসাথে সবকিছু ভাগ করে নেওয়ার সাথী ছিলাম মনে পড়ে কি তার আমার কথা??? কত খেলেছি মেঠো পথ দিয়ে তুই আর আমি । বৃষ্টি ভেজা পিচ্ছিল রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করার কারণে মায়ের কাছে আমার সাথে তুইও বোকা খেতি । আচ্ছা এই যে এতগুলো বছর আমি তোদের ছেড়ে এখানে পড়ে আছি তোদের কি আমার কথা মনে পড়ে?? আহা কতদিন বাবা মাকে দেখিনি আমি। ইস্ কিভাবেই না দিনগুলো এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। সেই যে বৃন্দাবন দাদা বিলেত গেলো তারপর আমি আর তুই পড়াতেই সব মন দিলাম । যদিও মাঝে মাঝে তোর আর দত্ত বাড়ির ছোট ছেলে বিলাশের দুষ্টু মিষ্টি প্রেম চলছিল । বৃন্দাবন দাদার বিলেত যাওয়ার দুবছর পর আমিও চলে এলাম বিলেত। দেখতে দেখতে কিভাবে যে দশ বছর পেরিয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। সেই স্কুলে যাওয়ার সময় দেরি হলে মায়ের ধমকে ধমকে জোর করে ভাত খাইয়ে দেওয়া খুব মনে পড়ে। ছুটির দিনে তোর সাথে বৃন্দাবন দাদার বাড়ির পিছনে মাঠে খেলতে যাওয়াটা ভীষণ মনে পরে । তোর কথা সবথেকে বেশি মনে পড়ে সেই তোকেই আমি আজ বছর তিনেক যোগাযোগ বারণ করেছি আর নিজেও করিনি । জানি এটার জন্য তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস কিন্তু আমার কিছু করার ছিল নারে । তোর সাথে কথা বললেই তুই খালি বৃন্দাবন দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলতি যেটা আমি করতে চাই না। আমি জানি বৃন্দাবন দাদার সাথে তোর এখনো যোগাযোগ আছে । আর থাকবে নাই বা কেনো তোর তো কাকার ছেলে ।তুই খালি আমাকে কেনো বলতি যে আমি কেনো বিলেতে থেকেও বৃন্দাবন দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করিনি । মানছি আমি তাকে শর্ত দিয়েছিলাম গ্রামে যেন আমার নামে কোনো চিঠি না আসে তাই বলে বিলেত আমি কোথায় থাকি কোন ইউনিভার্সিটি তে পড়ছি সেতো সবই তোর থেকে জেনেছে নাকি । তাহলে আবার আমি কেনো ঘটা করে বলতে যাবো। আজ এত গুলো বছর পেরিয়ে গেল সেকি আর সত্যি আমার আছে? তার তো পড়াশোনা কমপ্লিট আমার আগেই সে গ্রামে ফিরেছে নিশ্চয়ই? এতদিনে তারও বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা তাই না? বাবা কালকে কল করেছিল জানিস বনলতা আমার নাকি বিয়ে ঠিক করেছেন তিনি । আমার কোনো মতামত নিলেন একবারও । পাত্র নাকি তার চেনা। সুদর্শন ,সুশিক্ষিত , পরিবার এর সবাই নাকি ভালো এত ভালো পাত্র তিনি হাত ছাড়া করতে চান না।আমিও না করিনি করে কি হবে এই দশ বছরে হয়তো সে আর আমার নেই।কথা যে কৈলাশ দাও রাখিনি কিভাবে বুঝবো সে আমার আছে কি না ?তার স্মৃতি নিয়েই আমি বাকি জীবনটা পার করে দিতে পারবো আমার কোনো অসুবিধা হবে না ।যদিও তার সঙ্গে আমার কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না যেটুকু ছিল আমার একতরফা ভালোবাসা। আমার অনুভূতি আমি আজ অবধি কাউকে জানতে দিয়নি আর ভবিষ্যতেও জানতে দেবো ন কাউকে।আমি মনে প্রাণে তাকে চেয়েছিলাম হয়তো তাকে পাবো না তাতে কোনো আফসোস নেই সবার তো সব চাওয়া পূরণ হয়না আমারটাও না হয় হলো না দেখাই যাক কি হয়। আর চারদিনের মধ্যে আমাকে বাড়িতে যেতে হবে জানিয়ে দিয়েছে বাবা।আর একসপ্তাহ বাকি আমার বিয়ের।আজ রাতটাই আমার এই বারান্দায় শেষ রাত এই রুমে আর ফিরতে পারবো না হয়তো কখনো। এই রুমে আমার এই আট বছরের স্মৃতি রয়েছে । এটা ছিল আমার একার ছোট সংসার । আমার শত কান্না ,হাসি,অভিমান,দুঃখ, রাগ এই চারদেয়ালের রুম আর বারান্দা ঘিরে ছিল। বাইরের জগতে আমি ছিলাম সবথেকে খুশি মানুষ । আর কিছুক্ষণ পরে এই রুম ছেড়ে আমি চলে যাব আহঃ কি মায়াটাই না বেধে গেল। সত্যি মায়া বড় বাজে জিনিষ আমরা এমন কিছুর উপর মায়া দেখায় যেগুলো কখনও আমাদের হবেই না। দেখে দেখে ঠিক সেই জিনিষ গুলোর মায়াতেই বেশি পরি যেগুলো কখনও আমাদের হবেই না হাহ। 

পুরোনো কিছু কিছু কথা ভাবতে ভাবতে চারু নিজের দেশের মাটিতে পা রাখলো । তাকে নিতে তার বাবা মা , দিদি আর কিছু কাছের আত্মীয় স্বজন। সকলের সাথে কুশলবিনিময় করে নিজে বাড়ি চলে এলো তারপর সাওয়ার নিয়ে কিছু খেয়ে একটু ঘুমিয়ে নিলো। 
ঘুম থেকে উঠেই সে অবাক বিয়ের তোড়জোড় লেগে গেছে আর দুদিন বাকি বিয়ের বনলতাও নাকি আসবে রাতে । আমাকে ছাড়াই বিয়ের কেনাকাটা হয়ে গেল। হায়রে ইতিহাসের পাতায় আমি বোধহয় প্রথম চমকের উপর চমক নিয়ে বিয়ে করতে যাচ্ছি । 
কিরে লতা কেমন আছিস তুই?ওমা চোখ ছলছল করছে কেনো তোর আমার মা কি তোকে রাতে খেতে দেইনি ?? 
চুপ কর সখী তুই আমাকে কি করে ভুলে গেছিলি বল । তুই জানিস তোর সাথে কথা বলতে না পারায় আমার কত কষ্ট হয়েছে এতদিন । তুই খুব ভালো করে জানিস তোকে সব বলতে না পারলে আমার কতটা কষ্ট লাগে। তোকে আমি সবসময় খুব বেশি মিস করতাম জানিস । মানছি আমি তোকে বৃন্দাবন দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলতাম তাই বলে তুই আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবি ।
উত্তরে আমি বললাম বাদ দে লতা সেসব কথা আমার বিয়ে গুছিয়ে মজা করবি ।তুই আমার একমাত্র সখী মনখারাপ করে ঘুরিসনে কেমন ।
সে আর বলতে কিন্তু তাকে বলতে না দিয়ে আমি বললাম কালকে সকালে গায়ে হলুদ আছে আর কোনো কথা বলিসনা আমি একটু ঘুমিয়ে নিই।
হলুদের অনুষ্ঠানে সবার সেকি খুশী । শুধু আমার মধ্যেই বা এমন কেনো হচ্ছে ? যাকগে আর ভাববো না সেসব কথা।
একি চারু সখী তোকে তো চেনাই দাই হয়ে পরেছে। কি সুন্দর লাগছেরে বিয়ের সাজে । ঠিক যেন দুগ্গা ঠাকুর । 
যাহ কিযে বলিস সত্যিই কি এত সুন্দর লাগছে আমাকে ?
সত্যিই বলছিরে আজকে দেখিস তোর বর তোকে দেখে চোখ ফেরাতে পারবে না একটুও ।
ধুর তুই খুব লজ্জা দিস আমাকে।
হিহিহিহি চারু সখী লজ্জা পাসনি আমি আছি না তোর সাথে আয় আয় তোর সাথে একখান ঝাকাস ফোটো তুলি।
তুই আর বদলালি না লতা এক বাচ্চার মা তুই এখন ভুল যাসনা।
হিহিহিহি কিছুই ভুলিনি আমি তাই বলেকি তোর বিয়েতে মজা করব না তাতো হচ্ছে না বাপু ।
চল চল এবার তোকে ছাদনাতলায় নিয়ে যেতে হবে।
চারু সখী তোর জন্য যে কতবড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে তুই তো নিজেও জানিস না হিহিহিহি । লতা মনে মনে বলতে লাগলো 
এই কিরে লতা কই গেলি তুই কখন থেকে বলছি আমার পিঁড়িতে ওঠার পর তুই কিন্তু কাছে কাছে থাকিস ভয় লাগছে আমার।
উফফ চারু সখী তুই সেই ভীতুটি রয়ে গেলি আমি থাকবো এই তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেনো চলো চলো লগ্ন চলে গেলো যে।
সাতপাকে ঘোরার পর
কইরে সখী পানপাতা খান সরা নতুন জামাইবাবুর মুখখান দেখ। সবার বলার পর পানপাতা সরিয়ে যা দেখল তাতেই অবাক হয়ে যায়।
একি এটা তো বৃন্দাবন দাদা ।লতার দিকে তাকানোর সাথে সাথে সে চোখ মেরে দিলো আমাকে । তারমানে এই কুচুটি সব জানত । দ্বারা একবার কাছে পাই তারপর তোর ব্যবস্থা করবো চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম ।
আস্তে আস্তে সব নিয়ম কানুন মানা হলো এবার সিঁদুর দান বাকি । এরমধ্যেই লতার গলার আওয়াজ ভেসে এলো ....
ও দাদা ঝোপঝপ বৌদিকে সিঁদুর পরিয়ে দাও দেখি । শোনো সিঁদুর কিন্তু নাকে পড়া চাই চাই বুঝলে।
মুচকি হেসে বৃন্দাবন দাদা বললো আচ্ছা বেশ ।
নকভর্তি সিঁদুর পড়ায় সবাই হইহই করে উঠলো কেউকেউ তো সিটি মেরে উঠলো । আর আমি তো এখনো ঘোরের মধ্যে হারিয়ে গেছি কি থেকে কি হলো বুঝেই উঠতে পারলাম না তবে সত্যি বলতে পুরো শরীর যেন অবশ হয়ে গেছে।উফফ কি যে ভালো লাগছে যাকে ভালবাসি তার হাতের সিঁদুর পড়ায় কি এমন হচ্ছে? জানিনা এ কেমন আলদা একটা অনুভুতি । 
বাসর ঘরে যখন সবাই নাচ গান নানারকম আড্ডায় মেতে উঠেছে আমি তখন জানালা দিয়ে দূরে আকাশের দিকে তাকিয়ে এ কদিনের হিসেব নিকেষ ভাবতে ব্যস্ত । ঠিক তখন পাশে একজন এসে দাঁড়ালো এই মানুষটাকে আমি চিনি খুব ভালো করে চিনি আজ থেকে আমি যে তার হয়ে গেলাম ।এখন এই মানুষটা একান্ত আমার । কত বোকা বোকা চিন্তা ভাবনা করেছি তাকে নিয়ে আমি।
কিরে দেখলি তো আমি কথা রেখেছি । তোকে ঠিক আমার করে নিয়েছি । তুই এখন একান্ত আমার। এখন আর লুকোচুরি করে আমাকে তোর দেখতে হবে না। দেখলি তো আমি সত্যি ভালোবেসেছি তাই তোকে কলঙ্কিনী হতে দিইনি।
 হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছে ঠিক আছে তুমি করোনি বুঝেছি । আমি কিন্তু কিছুই ভুলিনি । বিলেতে যে এতদিন ছিলাম তুমি তো আমাকে একটুও খোঁজ নাওনি। 
ধুর পাগলী তুই ভাবলি কি করে নিইনি আমি । আমি যে তোর পাশে তোর সকল পরিস্থিতিতেই ছিলাম হ্যাঁ আমি কখনো সেটা বুঝতে দিইনি এই যা। আমি যে কথা দিয়েছিলাম যায় হয়ে যাক #আছি_আমি_পাশে তোমার । তুমি যে আমার অনেক সখের । আর এত যে অভিমান দেখাচ্ছো নিজেই তো চিঠি লিখে বারণ করেছিলে আমি যেনো তোমার সাথে কোনরকম যোগাযোগ না করি । কি বলো বলো বলোনি তুমি আমাকে? বলো শর্তটা সবাই জানুক।
 তার বুকে মাথা দিয়ে ফিসফিস করে বললাম হ্যাঁ দিয়েছিলাম আমি শর্ত। দিয়েছিলাম যে সবাইকে কেনো জানাবো সেটা । সেটা শুধুমাত্র তোমাকে ঘিরেই ছিল । অন্যকেউ কেনো জানবে? 
তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল আচ্ছা বেশ বেশ কাউকে জানাতে হবে না তুই আমার সারাজীবন পাশে থাকিস তাতেই হবে । আমার সকল সুখ দুঃখের সাথী হোস তাহলেই চলবে। কিরে থাকবি তো পাশে?
দূরে আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে দেখতে তাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বললাম #আছি_আমি_পাশে
আমি আছি তোমার পাশে 
শুধু আজ নয় 
কাল নয় 
অনন্ত কালের জন্য 
#আছি_আমি_পাশে
প্রিয় আছি আমি পাশে
একান্ত আমার মানুষ 
#আছি_আমি_পাশে

ঠিকই তো কেনো জানতে হবে সবাইকে কি শর্ত দিয়েছিল চারু বৃন্দাবনকে তাদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় সেটা । থাক না কিছু কথা গোপনে। আজ তাদের বিশেষ দিন । আজ থেকে দুজন দুজনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেছে । সারাজীবন যেন তারা এমন থাকতে পারে। একে অপরের পরিপূরক হয়ে থাকুক সবাই তাদের জন্য দোয়া করবেন।

সমাপ্ত🌼

আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আছি_আমি_পাশে গল্পটি এখানেই শেষ করলাম সবাই অব্বশই পড়বেন একটু । গল্পটি কেমন হলো অব্যসই জানতে ভুলবেন না ।কাবরু ও বৃন্দাবনের জুটি কেমন লাগলো জানাবেন ।জানিনা শেষ টা সুন্দর করতে পারলাম কিনা । আপনারা অবশ্যই জানাবেন কেমন লাগলো।কোনো ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। অব্যশই পড়ার শেষে কমপ্লিমেন্ট দিতে ভুলবেন না কেউ কারণ আপনাদের ছোট ছোট কমপ্লিমেন্ট আমাকে লিখতে উৎসাহিত করে অনেক।
ধন্যবাদ 😌🌸🌼🎀❤️‍🩹