MAYA in Bengali Short Stories by ANANYA books and stories PDF | মায়া

The Author
Featured Books
Categories
Share

মায়া



"সেই হাসি খুশি মেয়েটা এখন কেমন চুপ হয়ে গেছে দেখ!আগে দেখলেই এক গাল হেসে কথা বলত।খোঁজ খবর নিত।আর এখন যেনো দেখেও দেখে না।"

কথাটা কানে আসতেই বারান্দা থেকে উঠে ঘরে চলে গেল মায়া।শীতের সকালে বারান্দায় রোদে বসবে একটু তারও উপায় নেই।আজকাল ওকে নিয়ে কথা বলা যেনো পড়ার মহিলাদের নিত্য দিনের কাজ হয়ে গেছে।যখনই সময় পায় ওকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করে।বিরক্ত হয়ে গেছে মায়া এসবে কিন্তু কিছু করার নেই ওর। সব সহ্য করতেই হচ্ছে প্রতিদিন।

"মেয়েটার মেজাজ আজকাল খুব খিটখিটে হয়ে গেছে।সবার সাথেই খারাপ ব্যাবহার করে এখন।কিছুই বলাই যায় না।"

"দিন দিন শুকিয়েও তো যাচ্ছে।কি যে এতো ভাবে!"

"ডিপ্রেশনে আছে মনে হয়।চাকরি খুঁজছে দু বছর থেকে কিন্তু পাচ্ছে না।আবার বিয়েও হচ্ছে না।কি যে আছে মেয়েটার কপাল......"

না আর শুনতে পারছে না মায়া।শব্দ করে ঘরের জানলা গুলো লাগিয়ে দিল।সেই শব্দ মহিলা গুলোর কানেও গেলে।মায়া যেনো সেই শব্দের মাধ্যমে তাদের চলে যেতে বলল সেটা বুঝতে পেরে মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলেন তারা।

দুহাতে মুখ ঢেকে মেঝেতে বসল মায়া।ওর কপালে কি আছে না আছে তাতে পাড়ার লোকের কি?এনারা তো খারাপ সময় পাশে এসে দাঁড়ায় না।শুধু সুযোগ পেলেই সমালোচনা করতে থাকে।খুব অসহায় লাগে আজকাল ওর।কত স্বপ্ন ছিল কিছুই পূরণ হয়নি।শেষ পর্যন্ত একটা চাকরি করে বাবার পাশে দাঁড়াতে চাইছে সেটাও যেনো ভগবান চান না।তাই তো এতো চেষ্টা করেও একটা চাকরি জুটেনি ওর।সংসার তো ওর বাবাই চালায় মুদি খানার দোকান করে।মায়া দুটো টিউশন পড়ায় এর বেশি আর সাধ্য হয়নি ওর কিছু করার।

একটা সময় অনেক বড় মুখ করে বলছিলো বাবাকে চাকরি করবে,সংসার চালাবে,বাবাকে কাজ করতে হবে না আর।কিন্তু সেই কথা রাখতে পারেনি মায়া।বাবার পাশে দাঁড়াতে না পারার ব্যার্থতা একটু একটু করে ওকে শেষ করছে।

ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল মায়া।আজকাল।ওর বিয়ের দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে ওর পরিবার।কিন্তু সব সমন্ধ গুলোই ভেঙে যাচ্ছে।তারফলে সকলেই চিন্তিত ওকে নিয়ে।আবার পাড়া প্রতিবেশী তো আছেই কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেওয়ার জন্য।

"মায়া"

মায়ের ডাকে চোখ মুছে ঘর থেকে বেরোলো মায়া।রান্নাঘরে গিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

"বলো কি করতে হবে।"

মেয়ের দিকে একবার তাকালেন উনি।মেয়ের ফ্যাকাসে মুখ দেখেই বুঝতে পারছে মনের অবস্থা। পাড়ার মহিলা গুলোর কথা ওনার কানেও এসেছে তাই তো ডাকলেন মেয়েকে।উনি ভালো করেই জানেন ঘরে বসে কাঁদবে এখন মেয়েটা।কিন্তু ওর দোষ?বিয়ে হচ্ছে না,চাকরি পাচ্ছে না তাতে ও কি করতে পারে?চেষ্টা তো কম করছে না আর।কেউ বুঝতেই চায়না কেনো?

দীর্ঘশ্বাস ফেলে উনি বললেন,

"হাতে হাতে একটু কাজ করে দে। রান্নাটা শেষ করি তাড়াতাড়ি।"

কোনো কথা না বলে চুপচাপ কাজ করতে থাকে মায়া।কিছুক্ষন পর মায়াকে তার মা বলল,

"একটা সমন্ধ এসেছে।কাল বিকেলে ঘটক আর ছেলের মা আসবে দেখতে।"

কথাটা শুনে কোনো প্রতিক্রিয়া করল না মায়া।এখন আর কোনো কিছুতেই কিছু যায় আসে না ওর।দেখতে আসবে সেজে সং এর মত গিয়ে বসবে তারপর রিজেক্ট করে চলে যাবে।এটাই তো হচ্ছে দু বছর থেকে।দেখতে তো খারাপ না মায়া একটু নাহয় কম ফর্সা কিন্তু কালো তো না।তাও পছন্দ হয়না অনেকের।তাদের একদম ফর্সা মেয়ে চাই।যেনো গুন না মেয়ের রূপ দিয়েই তাদের সংসার চলবে।আর যাদের পছন্দ হয়েও যায় তাদের এতো ডিমান্ড যা মায়ার বাবার পক্ষে পূরণ করা সম্ভব হয়না।ফলস্বরূপ বিয়ে ভেঙে যায়।আর সকলে ওকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে।

মায়ার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে উনি হতাশ হয়ে বললেন,

"কিছু বললাম আমি!"

থমথমে গলায় বললেন মায়ার মা।মায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

"শুনেছি।আসবে,দেখবে তারপর যা আছে ভাগ্যে হবে।"

"এবার বিয়ে ঠিক হবেই তোর দেখে নিস।খুব ভালো পরিবার।কোনো ডিমান্ড নেই বলেছে।"

এক গাল হেসে মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন উনি।মায়ের দিকে শান্ত ভাবে তাকাল মায়া।মায়ের হাসি মুখটা দেখে মনটা জুড়িয়ে গেল ওর।মৃদু স্বরে বলল মায়া,

"তোমার কথাই যেনো মিলে যায়।"

"এবার মিলবেই।"

মুচকি হাসলেন উনি।যেনো কালকের ভবিষ্যত্ দেখতে পাচ্ছেন চোখের সামনে।এবার মেয়ের বিয়ে হবেই।ঘটক যে তার ভাই।সব দিক দেখে শুনেই এই সমন্ধ নিয়ে আসছে।ছেলে চাকরিজীবী না হলেও নিজস্ব ব্যাবসা আছে তাদের।তাতে ভালোই রোজগার।মেয়ে তার সুখেই থাকবে বলে ভেবেই নিলেন উনি।মেয়েটার বিয়ে হলেই যেনো চিন্তা মুক্ত হন।

সব কাজ করে দিয়ে মায়া বেরিয়ে এল রান্নাঘর থেকে।বারান্দার গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে,

"ঘরে ঘরে আমার মত অনেক মায়া আছে।তাদের বাবা মা হয়তো তোমাদের মত নয়।এমন পরিস্থিতিতেও তোমরা যেভাবে পাশে থেকে দুটো বছর আমায় সাপোর্ট করলে তা বলার মত নয়।কিন্তু তোমরা মেয়ে বিয়ে দিলেই যেনো সব চিন্তা থেকে মুক্তি পাও।এমন টা কেনো?একবার তো ভাবতে পারতে মেয়েকে নিজেদের কাছেই রাখবে সারাজীবন।কিছু না কিছু করে শেষ বয়সে তোমাদের দেখতাম আমি।বিয়ে দিয়ে অন্যের ঘরে পাঠানোর কি খুব দরকার?মেয়ে মানেই কি বোঝা?মেয়ে মানেই কি বিয়ে দিয়ে অন্যের ঘরে পাঠানো?"

চোখের কার্নিশ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে মায়ার।কেউ নেই তা দেখার।এমন হাজারো মায়া আছে এই দুনিয়ায়।তাদের জীবনের কাহিনী গুলো অজানাই সবার।


(সমাপ্ত)