The last embrace of the rain in Bengali Love Stories by SURJYODOY ROY books and stories PDF | শেষ বৃষ্টির আলিঙ্গন

Featured Books
Categories
Share

শেষ বৃষ্টির আলিঙ্গন

পর্ব – ১ : প্রথম দেখা

বর্ষার ভেজা দুপুর। কলেজের পুরোনো করিডোরে টপ টপ করে বৃষ্টির জল পড়ছে। জানালার কাচে জল গড়িয়ে পড়ার শব্দ যেন এক অদ্ভুত সুর তোলে। ভিজে উঠেছে লাল মেঝের দাগ, বাতাসে কাঁপছে সাদা পর্দা। সেই ভিজে বিকেলের ভেতরেই প্রথম দেখা হয়েছিল তাদের।

অভিজিৎ—তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, চশমার আড়ালে শান্ত মুখ, হাতে একখানা বই। আর নন্দিনী—প্রথম বর্ষের নতুন ছাত্রী, হাতে ভিজে ডায়রি চেপে দাঁড়িয়ে আছে করিডোরের কোণে।
দু’জনের চোখ মিলল হঠাৎ, যেন সময় থেমে গেল এক মুহূর্তে।

অভিজিৎ অদ্ভুত কণ্ঠে বলল,
—“আপনি কি পথ হারিয়েছেন? লাইব্রেরি খুঁজছেন?”
নন্দিনী লাজুক হেসে মাথা নাড়ল,
—“হ্যাঁ… নতুন তো… কোথায় কী আছে কিছুই জানি না।”

সেদিন প্রথম আলাপ। কিন্তু তাদের চোখে যা ফুটে উঠেছিল, তা কোনো সাধারণ পরিচয় নয়। যেন বহু জন্মের পরিচিত দু’টি আত্মা আবার দেখা করল।

সেই দিন থেকে অভিজিতের মনে প্রতিদিন জমতে লাগল নীরব এক টান।


পর্ব – ২ : বন্ধুত্বের আড়ালে প্রেম

দিন কেটে যাচ্ছিল। নন্দিনী প্রায়ই লাইব্রেরিতে আসত। মাঝে মাঝে অভিজিৎ ইচ্ছে করেই একই সময় হাজির হত। বইয়ের পাতার ভেতর দিয়ে ছোট ছোট কাগজে লেখা কিছু কথা ওদের নিঃশব্দ ভাষা হয়ে উঠল।

—“আজ বৃষ্টি হবে বুঝি?”
—“হয়তো আমাদের ভেতরের মতো।”

একদিন সন্ধ্যায় তারা দু’জন নদীর ধারে হাঁটছিল। আকাশে কালো মেঘ জমে আছে, বাতাসে সোঁদা গন্ধ। নন্দিনী হঠাৎ বলল,
—“জানো, আমি ভয় পাই… সবকিছু একদিন ভেঙে যাবে এই ভেবে।”
অভিজিৎ তাকিয়ে বলল,
—“যা সত্যি, তা ভাঙে না। অন্তত আমি চাইব না আমাদের কিছু ভাঙুক।”

সেদিন বৃষ্টির ভিজে ফোঁটার নিচে প্রথমবার দু’জনের হাত এক হলো। তারা কিছুই বলল না, শুধু হাঁটল। শব্দহীন সেই মুহূর্তেই প্রেম জন্ম নিল।


পর্ব – ৩ : অস্বীকারের দেয়াল

কিন্তু জীবন সবসময় প্রেমের মতো সহজ নয়। নন্দিনীর পরিবার বেশ রক্ষণশীল। বাবা-মা অন্যত্র তার বিয়ে ঠিক করে দিলেন—এক ব্যবসায়ী পাত্র, বিদেশে থাকেন।

খবরটা শোনার পর অভিজিৎ যেন ভেতরে হিম হয়ে গেল। নন্দিনী কেঁদে ফেলল তার সামনে—
—“আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না… কিন্তু আমি কিছুই করতে পারছি না।”

অভিজিৎ চুপ করে ছিল। তার চোখে অসহায়তা, ঠোঁটে নীরবতা। সমাজ আর পরিবার নামের দেয়ালের সামনে তাদের ভালোবাসা যেন ভেঙে পড়ছিল।


পর্ব – ৪ : বিচ্ছেদের ব্যথা

অভিজিৎ শহর ছেড়ে চলে গেল। একা, নিঃশব্দে। তার বুক ভরা শুধু শূন্যতা।
নন্দিনী বিয়ের মঞ্চে বসে ছিল, সাজানো গয়না আর শাড়ির আড়ালে মুখটা শুকনো। অতিথিরা হাসছিল, গান হচ্ছিল—কিন্তু তার চোখে ভেতরে ভেতরে কান্নার ঢল বইছিল।

সেদিন রাতের আকাশে ঝড়-বৃষ্টি হয়েছিল, যেন প্রকৃতিও ওদের ব্যথা জানত।

বছরের পর বছর কেটে গেল। অভিজিৎ পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পেল অন্য শহরে। নন্দিনী সংসার সামলাতে লাগল, কিন্তু ভেতরে ভেতরে তার হাসি মরে গেল। দু’জনই আলাদা জগতে থেকেও একে অপরকে ভুলতে পারেনি।


পর্ব – ৫ : আকস্মিক পুনর্মিলন

পাঁচ বছর পরের কথা। এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায়, কলকাতার ভিড়ভাট্টায় হঠাৎ দেখা হয়ে গেল ওদের।

অভিজিৎ ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। হঠাৎ এক পরিচিত কণ্ঠ—
—“অভিজিৎ…?”

সে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখল—নন্দিনী। পরনে হালকা নীল শাড়ি, চোখে ক্লান্তি, অথচ সেই চেনা দীপ্তি এখনো অটুট।

এক মুহূর্তের নীরবতা ভেঙে দু’জনেই ভিজে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইল। তাদের চোখে জমে থাকা পাঁচ বছরের অশ্রু, না বলা হাজারো কথা এক নিমিষে ভেসে উঠল।

নন্দিনী কাঁপা গলায় বলল,
—“তুমি কি আমায় একটুও ভুলতে পেরেছো?”
অভিজিৎ গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে উত্তর দিল,
—“ভোলা যায়? তুমি তো আমার প্রতিটি নিশ্বাসে ছিলে।”


পর্ব – ৬ : শেষ বৃষ্টির আলিঙ্গন

সেই রাতেই তারা অনেকক্ষণ কথা বলল। নন্দিনী জানাল, তার সংসার কেবল নামেই বেঁচে আছে, ভেতরে ভেতরে সে মৃত।
অভিজিৎ চুপচাপ শুনল, তারপর বলল,
—“আমাদের ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, তবে সমাজ বা নিয়ম কিছুই আটকাতে পারবে না। আমি এবার তোমাকে ছাড়ব না।”

পরদিন আবার বৃষ্টি এল। আকাশ ভিজিয়ে দিল শহরের সব রাস্তা। নন্দিনী আর অভিজিৎ ছাতাহীন ভিজতে ভিজতে দাঁড়িয়ে থাকল একসাথে।
তারপর এক মুহূর্তে তারা আলিঙ্গন করল—যেন সেই প্রথম দিনের মতোই, কিন্তু এবার কোনো ভয় নেই, কোনো বাঁধা নেই।

সেই বৃষ্টির ভেতরেই তারা প্রতিজ্ঞা করল—
“যতদিন বাঁচব, একসাথে। বিচ্ছেদ আর নয়, কেবল মিলনের পথ।”

ভালোবাসা হয়তো কখনো হারিয়ে যায় না। সময় তাকে ভেঙে দেয়, সমাজ তাকে আটকায়, কিন্তু সত্যিকারের প্রেম আবার ফিরে আসে—বর্ষার শেষ বৃষ্টির মতো, যা ধুয়ে দেয় সব কষ্ট, আর রেখে যায় এক অমলিন আলিঙ্গন॥