LOVE UNLOCKED - 1 in Bengali Love Stories by Pritha Das books and stories PDF | LOVE UNLOCKED - 1

Featured Books
Categories
Share

LOVE UNLOCKED - 1

Love Unlocked :1
Pritha 🎀:

"এই যে চাশমিশ নাম কি ?" পাশ থেকে বেশ ভারী একটা পুরুষালি কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো মেয়েটি। পাশে বন্ধুর হাতটা বেশ শক্ত করে চেপে ধরলো। আজ কলেজে ওদের প্রথমদিন। স্কুলের গণ্ডি শেষ করে প্রথমবার গ্রীনফিল্ড কলেজে পা রেখেছে। কলকাতার নামী কলেজ গুলোর মধ্যে এটা একটা। নামকরা কলেজ‌ আর র‍্যাগিং এর উৎপাত থাকবে না এটার মত অহেতুক কথা আর নেই। ওরা যে একদমই খোঁজ খবর নিয়ে আসেনি তা নয়। তবে প্রথমদিনেই কোনো ঝামেলায় জড়াতে চায়নি সেটা যদি আবার সিনিয়র হয় তবে তো একেবারেই নয়। 
ইতিমধ্যেই আবার শোনা গেলো "এই যে কানে যাচ্ছে না কথা !?"

এবার মেয়েটি ঘুরে তাকালো। আমতা আমতা করে বলে উঠলো "দিশা রায়।"

ছেলেটা আবার ধমক দিয়ে বলল "তোমায় জিজ্ঞেস করেছি ? তোমার বন্ধুটা কি কালা! নাকি এত বড় কলেজ দেখে প্রথম দিনেই ভিমড়ি খাচ্ছে ! কলেজ দেখেই এই অবস্থা , পড়তে গেলে কি হবে রে !" কথাটা শেষ করে খ্যাকখ্যাক করে হাসা শুরু করে দিলো ছেলেটা। সাথে যোগ দিলো সাঙ্গপাঙ্গ গুলোও।

অবস্থা বেগতিক দেখে দিশা এবার বন্ধুর হাতে টান দিলো। ফিসফিস করে বন্ধুর কানে কানে বলল "কুত্তা তুই কলেজ পরে দেখবি। এদের কথার উত্তর দে আগে নইলে ঝামেলা বেড়ে যাবে।"

এতক্ষণ পর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির হুস ফিরল নইলে হয়তো আরও কিছুক্ষণ নতুন জায়গাটা পর্যবেক্ষণ করত। নাকের কাছে নেমে আসা চশমাটা আঙুল দিয়ে ঠেলে নাকের আরেকটু উপরে পাঠিয়ে ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো "আমায় বলছেন ?"

"যাহ শালা ! এই ললনা দেখছি পুরোই টিউবলাইট। তা মামনি আমি এতক্ষণ আমার ঠাকুরদা কে ডাকছিলাম ?" ছেলেটি কথাটা বলে আবারো সেই বিশ্রী হাসি হাসতে লাগলো। সাথে বাকিরাও যোগ দিত হয়তো তবে মেয়েটির কথায় হাসিটা থেমে গেলো।

"ডাকতেও পারেন ! আমার কি। আমি তো আমায় ডাকতে শুনিনি।" শান্ত স্বরে বলল।

"বাবা মুখে খই ফুটছে ? দেখে তো মনে হয়না এরম ধানি লঙ্কা ! তবে মিস চাশমিশ একটু বেশি সাহস দেখিয়ে ফেলছো না ?"

"সাহসটা আমার বরাবরই একটু বেশি। আর চাশমিশ কে ! আমায় উল্টো পাল্টা নামে ডাকবে না একদম।" এবার মেয়েটিও উল্টে বেশ ধমক দিয়ে বলল।

পাশ থেকে দিশা মেয়েটির হাতটা চেপে বলে উঠলো "উফ ঝামেলা করিস না। তুইও মরবি আমাকেও মারবি।যা বলছে চুপচাপ মেনে নে। বলো ভাইয়া কি করতে পারি তোমাদের জন্য ?"

বেশ গদগদ হয়ে ছেলেটি বলল "এই তো ভালো মেয়ে। তোমার বন্ধুটিকেও একটু বোঝাবে বুঝলে। তা মামনি নামটা কি যেন ? চাশমিশ বললে তো আবার ছলকে উঠছো !"

পাশ থেকে আরেকটা ছেলে বলে উঠলো "আরেহ নাম জেনে কি হবে আসল কাজটা বলে দে না।"

"আমার নাম জানতে নিশ্চই কলেজে এডমিশান নাওনি ! তাছাড়া আমিও তোমার নাম জানি না। আমি কি তোমায় কিশমিশ বলে ডেকেছি ? ডাকিনি রাইট ? তাহলে আমায় কেন চাশমিশ বলে বিরক্ত করা হচ্ছে ?!"

"চল হাট। খুব বকছিস।কলেজের প্রথম দিনে এসেই সিনিয়রদের সাথে পাঙ্গা নিয়ে ফেলেছিস। তবে তুই বোধহয় জানিস না এই আকাশ শর্মা কি জিনিস !" রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে উঠলো।

"এই আকাশ এত কথা বাড়ানোর প্রয়োজন কি। এইযে এখুনি ক্ষমা চা। নাহলে তোর কপালে খুব দুঃখ আছে। এখন ক্ষমা চাইলে তাও মাফ করে দেওয়ার একটা চান্স আছে আমাদের লিডার চলে এলে ছাড়বে না। ভালো কথা বলছি। " পাশ থেকে অপর একটা ছেলে বলল।

"ক্ষমা? Are you mad ? এই আরিয়া মজুমদার যার তার কাছে ক্ষমা চায়না। তাছাড়া আমি নিজের কাজের জন্য লজ্জিত নই। আমি আমার পার্সোনাল ইনফরমেশন সবাইকে কেন দিতে যাব ? লোফারের দল সব ! এই দিশু চলে আয়।" কথাটা শেষ করেই দিশার হাত চলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো।

"ভালো কথায় হবে না বিক্রম। ওকে শিক্ষা আমি দিচ্ছি।" কথাটা বলেই তাড়াতাড়ি পা ফেলে এগিয়ে গিয়ে আরিয়ার কোমর সমান লম্বা বিনুনিটা টেনে ধরলো আকাশ। দাঁতে দাঁত চেপে বলল "Apologize right now, or get down on your knees and propose me"

"And what if I don’t? What will you do?" আরিয়াও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে গেলো। 

"আরু প্লিজ ঝামেলা বাড়াস না। যা বলছে শুনে নে।" (দিশা)

"তুই কি পাগল ? আমি এখন এই লোফারটাকে প্রপোজ করবো ? মরে গেলেও না।"

"প্রপোজ না করিস ক্ষমা তো..."দিশাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই আরিয়া মুখের ওপর বলে দিলো "No way"

"এই আকাশ শর্মা যেটা চায় তার সেটাই লাগে আর না পেলে সেটা ছিনিয়ে নিতে দুবার ভাবে না।" কথাটা শেষ করেই আবার সেই বিশ্রী হাসিটা দিতে দিতে একপা একপা করে আরিয়ার দিকে এগোতে লাগলো আকাশ। এগিয়ে আসছে তার বন্ধুগুলোও। 
এক পর্যায়ে আকাশের হাত আরিয়ার কোমর ছুঁইছুঁই এমন সময় আরিয়া সপাটে আকাশের গালে চর মেরে দেয়। তড়িৎগতিতে দিশার হাত থেকে জলের বোতলটা নিয়ে জলটা ছুঁড়ে মারে আকাশের দিকে। 

"What the hell" তবে একটা মেয়েলি স্বর শুনতে পেয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপস্থিত সকলের। সকলেই দাঁড়িয়ে মজা দেখছিল। আসলে কলেজের সব থেকে পাওয়ারফুল গ্রুপের সদস্যের সাথে সবে প্রথমদিন কলেজে আসা একটা মেয়ের এভাবে কথা কাটাকাটি দৃশ্যটা খুবই বিরল।
আরিয়া দেখে তার ছোঁড়া জলটা আকাশের গায়ে লাগেনি বরং একটা মেয়ের গায়ে লেগেছে। আকাশ এখনও দূরে দাঁড়িয়ে গালে একটা হাত রেখে হতভম্ব হয়ে আছে। চরের ধাক্কাটা সামলাতে পারেনি।  আরিয়া এবার ভালোভাবে মেয়েটিকে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করলো। একটা রেড শর্ট স্কার্ট যেটা হাঁটুর অনেকটাই উপরে । আর সাদা স্লিভলেস ক্রপ টপ যেটা আরিয়ার ছোঁড়া জলে ভিজে গিয়ে ইনার ওয়্যারটা সম্পূর্ণ দেখা যাচ্ছে। টপ আর স্কার্টের মাঝে পেটের কিছুটা অংশ দৃশ্যমান। তাতে একটা সাপের ট্যাটু দেখা যাচ্ছে। মুখে চড়া মেকআপ। পায়ে হিল। মেয়েটিকে এবার নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে হুশ ফিরল আরিয়ার। ও নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে বলল " সরি আসলে এরা আমায় এত বিরক্ত করছিল আমি এমন কাজটা করতে বাধ্য হয়েছি। আমার ইন্টেনশন ছিল না তোমার গায়ে জলটা দেওয়ার। এই জ্যাকেটটা দিয়ে কভার করে নাও। I'm really very sry" কথাটা বলে নিজের গায়ের জ্যাকেটটা খুলে দিলো আরিয়া।

"তোমার মনে হয় এই চিপ জ্যাকেটটা বিশেষত কারোর ইউজ করা জিনিস আমি ইউজ করবো ? নিজেকে কি ভাবো কি তুমি ? বিশ্বসুন্দরী ? সবাই তোমার পিছনে পরে থাকবে ? কি এমন করেছে তোমার যে আমার এত দামী একটা জামা তুমি নষ্ট করে দিলে ! "

"আমি আমার কাজের জন্য ক্ষমা চেয়েছি।" কথাটা বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো আরিয়া। 
আরিয়াকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এলো আকাশ। "মিশকা শুধু তোর জামা নয় এই চিপ মেয়েটা আমায় থাপ্পর মেরেছে। একে দেখে নে তুই !" রাগে হিসহিস করতে করতে অভিযোগ করে ফেলল।

"What ! তোকে থাপ্পর মেরেছে ! আমার গ্রুপের মেম্বারকে থাপ্পর মেরেছে !"

"ও তার মানে তুমিই পালের গোদা ? তাহলে জলটা ছুঁড়ে ঠিকই করেছি। হ্যাঁ মেরেছি থাপ্পর ! আমায় টাচ করতে এলে আবারো খাবে। এতক্ষণ খারাপ লাগছিল বিনা কারণে জামাটা ভিজিয়ে দিলাম ভেবে। এখন ভালো লাগছে।" কথাটা বলেই আরিয়া মুচকি হেসে দিল।

"Don't cross your limit...কলেজে ঢুকেই সিনিয়রদের সাথে ঝামেলা করছো ? নতুন তো ! আমাদের চেনো না। I swear তোমাকে এই কলেজ থেকে বার করার দায়িত্ব আমার। টিকতে দেবো না। আমার যে জামাতে জলটা ফেলেছ এর প্রাইস জানো ? সেই টাকায় তোমায় কেনাবেচা করা যাবে বুঝলে ! নিজের ড্রেসের অবস্থা দেখো জাস্ট ! ভিখারী একটা। এরা কলেজে চান্স কিভাবে পায় বুঝিনা ! বাবা মায়ের ঠিক নেই...."

"Stop!" চিৎকার করে উঠলো আরিয়া। "অনেক বলেছ। আমার বাবা মাকে নিয়ে আর একটা কথা বললে খুব খারাপ হয়ে যাবে।সিনিয়র যদি সিনিয়রের মত আচরণ করত সম্মানটাও পেতো। আর এই জামা নিয়ে এত দেমাগ ? মানুষকে মানুষ মনে হয়না! কত দাম বলো ? দশ হাজার এনাফ ?" কথাটা বলেই আরিয়া ব্যাগ থেকে কয়েকটা পাঁচশো টাকার নোট বার করে ছুঁড়ে মারে মিশকার দিকে।

"তোমার চামচাগুলোকে গুনে নিতে বলো ! ঠিকঠাক দিয়েছি কিনা। চল দিশু !" কথাটা বলে বন্ধুর হাতটা ধরে কলেজের দিকে হাঁটা দিলো আরিয়া।
.
.
.
.
চলবে......