জঙ্গলের প্রহরী / ১
পর্ব - ১
❤🖤❤🖤❤🖤❤
- "এটা কি সম্ভব স্যার? আপনার নিজেরও কি মনে হয় না এর মধ্যে বিরাট একটা চাল আছে?" স্যার অর্থাৎ ডিআইজি বাসুদেব ধরের সঙ্গে সিদ্ধার্থর সম্পর্কটা যথেষ্ট সহজ। তবে এই মুহূর্তে ক্রাইম ব্রাঞ্চের নামী অফিসার সিদ্ধার্থ রায়ের চোখ কুঁচকে আছে।
- "চাল তো আছেই, এত বিস্ফোরক তো এমনি এমনি আসেনি। আর আসবে খবরও ছিল। তোমাকে উড়িয়ে আনা হয়েছে সেজন্যই। চিতাও একটা আছে। এটা ফরেন্সিক কনফার্ম করেছে। লোকটি মারা গেছে চিতার আক্রমণে। কিন্তু এখানে চিতা থাকাটাও তেমন অস্বাভাবিক নয়।" বিডি অর্থাৎ বাসুদেব ধর বেশ শান্তভাবেই বলেন।
- "এখানে চিতা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়, সেকথা আমিও জানি স্যার। তবে অস্বাভাবিক হল সেই চিতার চিহ্ন খুঁজে না পাওয়ার গপ্পো।" সিদ্ধার্থর কথা শুনলেও টেবিলের পেপার ওয়েটটা ঘোরাতে ঘোরাতে একটু যেন অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছেন বিডি।
- "তাই চিতা নিয়ে এই অদ্ভুত পরিস্থিতি কি করে উড়িয়ে দিই?" সিদ্ধার্থ স্যারের মনোভাব পড়ে নিতে চায়।
- "তোমার নিজের কি মনে হয়?" পালটা প্রশ্ন বিডির।
- "দেখুন, চিতা যখন ঘটনাস্থলে ছিল, লোকটিকে আক্রমণ করেছে, তার মানে সেটা জ্যান্ত চিতা। এইসব বিস্ফোরক নিয়ে যারা নাড়াচাড়া করে, তাদের জীবন তো সহজ পথে চলেনা। বন্ধু কম, শত্রুই বেশি থাকে। আমার থেকে আপনার অভিজ্ঞতা আরও বেশি। এই লোকটার মৃত্যুকে বন্যপ্রাণীর আক্রমণের চেহারা দিতে কেউ একটা চিতাকে কোনোভাবে লুকিয়ে এনেছিল। আর সেক্ষেত্রে প্ল্যানটা বেশ আগে থেকেই হয়েছে। আপনি আমি তো ছমাস চেষ্টা করলেও চিতা যোগাড় করতে পারব না।" সিদ্ধার্থ থামে, সামনে থেকে চায়ের কাপ তুলে চুমুক দেয়।
কাপটা প্লেটে নামিয়ে রেখে বলে, "প্ল্যানটা আগের, চিতাটা কদিন হলেও আগে এসেছে মানেই কারও কারও চোখে পড়েছে। তারা ঐ বনদেবী, দক্ষিণরায় টাইপের এই অঞ্চলের কোনো মিথের সঙ্গে জড়িয়ে কথাগুলো রটাচ্ছে। হাউন্ড অফ দ্য বাস্কারভিল গল্পের মতো মিথটা জানত বলে অপরাধীরাও সুকৌশলে এটা ছড়ানোর চেষ্টা করতে পারে..... আই থিঙ্ক সো।" গুছিয়ে শেষ করে আবার চায়ে চুমুক দেয়।
- "হুম, তোমার ধারণাটাই হয়ত ঠিক। কিন্তু পুলিশ ডিপার্টমেন্ট, ইনটেলিজেন্স চায় প্রমাণ। সেটা কোথায়? চিতা কি করে এল, সেটা কোথায় চলে গেল, উঁ? দেয়ার আর মেনি কোয়েশ্চেনস সিদ্ধার্থ, মেনি কোয়েশ্চেনস।" মাথার চুলে হাত বোলান বিডি, ঘড়ির ডায়ালটায় আলো পড়ে ঝলকায়, ডান হাতে ঘড়ি পরেন উনি।
- "প্রমাণ আমরা খুঁজে বের করব। পাহাড় জঙ্গল ফালাফালা করে খু্ঁজব। এমনিতেই আমার ফরেস্টের লোকেদের উপর সন্দেহ আছেই। ওদের সম্পূর্ণ অগোচরে অস্ত্র পাচার হতে পারে না। তাও ইনটেলিজেন্সের সন্দেহ, এসব একবছরের উপর চলছে। স্যার," সিদ্ধার্থ চা শেষ করে পিঠ সোজা করে বসেছে, "আমি রেঞ্জার শাক্য গোস্বামীর সঙ্গে একটা মিটিং ফিক্স করেছি। আপনি বেঙ্গল পুলিশের পারমিশন আনান ফার্স্ট ইনভেস্টিগেটিং অফিসার তাপস হালদার আমার সঙ্গে থাকবেন এই কেসে। দুদিন পর আমি খবর পেয়েছি। তাপসকে দরকার ফার্স্ট হ্যান্ড লুক কি ছিল জানতে, কোনও এভিডেন্স হারিয়েছে কিনা জানতে।"
- "সে হয়ে যাবে। আর তোমার ভক্ত হনুমান?"
- "ঋষি আমার ছায়া। আমার হোলস্টার আর ঋষি, দুটোই লাগে।" হাসিমুখে উঠে পড়ে সিদ্ধার্থ।
****************
- "স্যার, বিডিস্যার কি বললেন?" সিদ্ধার্থ বেরোতেই ঋষি জানতে চায়।
- "আর কি বলবেন? প্রমাণ খুঁজতে হবে।" হাতের আড়ালে সাদা কাঠি জ্বালায় সিদ্ধার্থ। অনেক কমিয়ে দিয়েছে, তবে আজ যথেষ্ট উত্তেজিত। গত পরশু জঙ্গলের অল্প ভিতরে একটি দেহ পেয়েছে কাঠ আনতে যাওয়া মেয়েরা। ছিঁড়ে ফালাফালা দেহ, প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল বন্যপ্রাণীর আক্রমণ। শহরে চালান দেওয়া হয়। আজ রিপোর্ট এসেছে, চিতা। তার সঙ্গে জঙ্গলে চিরুণী তল্লাশিতে পাওয়া গেছে বিস্ফোরক ভর্তি ব্যাগ। গোটা উত্তরবঙ্গ উড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই দুদিন পর কেস এসেছে ওর কাছে।
গত দশদিন ধরে কলকাতা থেকে এসে সীমান্তের এই পাহাড় জঙ্গল ঢেউখেলানো জমির এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ও। সঙ্গে ঋষি। দিল্লি থেকে খবর দিয়ে কলকাতা থেকে ওকে এখানে আনানো হয়েছে। বছরখানেক ধরে এখানে পাচারের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। হাতেনাতে ধরাও যায়নি, অপরাধীর খোঁজ তো আরও পরের কথা। সব খবর বের করাটাই ওদের দুজনের মিশন।
সেই মিশন সফল করতে সিদ্ধার্থ ভাব জমিয়েছিল, জীবিকার প্রয়োজনে, কাঠ, রজন, ওষধি গাছ খুঁজতে যারা নিয়মিত জঙ্গলে যায় তাদের সঙ্গে। পাহাড়ের গায়ে একটা কাঠের বাংলোয় ওরা থাকে। কাজের জন্য একজন স্থানীয় ছোকরা আছে, টিপকা। টিপকা বেশ বাংলা জানে পুলিশ বাংলোয় কাজ করে করে। আদিবাসী টিপকার মাধ্যমেই ওদের সমাজের সঙ্গে ভাব জমিয়েছিল সিদ্ধার্থ। সামান্য কথা জানতে পেরেছে, পূর্ণিমার রাতগুলোয় ওদের ঝুপড়ির দরজাও খুলতে মানা করে দেয় ঠিকাদার সুখলাল। এমনিতেই বাপ দাদার আমল থেকে ওরা পূর্ণিমার রাতে বেরোয় না। তাই এই অর্ডার মানতে অসুবিধা হয়নি। তার মানে, স্থানীয় লোকজন কিছুই দেখেনি কখনো। এতেই বোঝা গেছে, এতদিন কেন অপরাধীরা ধরা পড়েনি।