✒️ অধ্যায় ৩: ছায়াপথে যাত্রা
নোক্তারিয়ার কুয়াশায় ঢাকা বন, পাথরের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল শতাব্দী ধরে। সেখানে সূর্যের আলো পড়ে না, পাখি ডাকে না, এমনকি গাছের পাতাও বাতাসে নড়ে না। এলিয়া আর কায়ান যখন সেই বনের ভিতর দিয়ে হাঁটতে শুরু করল, তখন মনে হচ্ছিল তারা সময়ের বাইরে পা ফেলেছে।
“এখানে... কিছু একটা আমাদের দেখছে,” এলিয়া কাঁপা গলায় বলে।
কায়ান থেমে বলে, “এটা ‘নির্বাক বন’। এই বনের প্রতিটি গাছ একেকটি আত্মা। যারা কোনোদিন মুক্তি পায়নি, তারা গাছ হয়ে গেছে।”
“তুমি এত কিছু জানো কীভাবে?”
কায়ান এক গম্ভীর হাসি দেয়। “আমি তো রাজপরিবারের সন্তান। কিন্তু আমার শৈশব কেটেছে এই অন্ধকারে। আমার প্রথম বন্ধু ছিল এই বনের এক ছায়া।”
তাদের সামনে দেখা যায় একটি পুরনো ধ্বংসস্তূপ, যার উপরে খোদাই করা আছে কিছু প্রাচীন লিপি। এলিয়ার চোখ সেদিকে যেতেই সে অজান্তেই সেই ভাষা পড়তে পারে—
“তোমার রক্তেই আছে জন্ম আর মৃত্যুর পাথেয়। চোখে জ্বলে যে আগুন, সে-ই দেবে আলো।"
কায়ান স্তব্ধ হয়ে বলে, “তুমি এই ভাষা কীভাবে জানো?”
এলিয়া বোঝে না, কেবল বলে, “আমার মনে হয়... আমি এটা আগেও দেখেছি। যেন আমি এখানে ছিলাম, বহু বছর আগে...”
তারা এগিয়ে চলে। কিন্তু ঠিক তখনই বনের গাঢ় ছায়া থেকে বেরিয়ে আসে এক ভয়ংকর প্রাণী—এক অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক ছায়া, যার চোখ শুধু শূন্যতা।
“ভ্রাতের দূত আমি। সে জেগে উঠছে,” ছায়াপ্রাণী গর্জে ওঠে।
তখনই এলিয়ার চোখ অদ্ভুত লাল রঙে জ্বলে ওঠে, আর একটা আলো ছুটে যায় তার দৃষ্টির ভিতর থেকে—সেই ছায়াকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়।
কায়ান অবাক। "তুমি এখনও নিজের শক্তির কিছুই জানো না, এলিয়া..."
---
অধ্যায় ৪: প্রাচীন স্মৃতি, নতুন সত্য
তারা বিশ্রাম নেয় একটি পুরনো মন্দিরের ধ্বংসাবশেষে। কায়ান আগুন জ্বালিয়ে দেয়, আর এলিয়া তাকিয়ে থাকে আগুনের দিকে—যেন সেই লেলিহান শিখাগুলো কিছু বলছে।
“তুমি কি জানো, কায়ান,” এলিয়া বলে, “আমার মনে হয় আমি সবকিছু ভুলে গেছি। আমার জন্ম, আমার মা, এমনকি আমার নামটাও... আমি জানি না আমি কে।”
কায়ান একটুখানি চুপ করে থেকে বলে, “আমিও জানি না আমি আসলে কে। আমি যে ভ্রাতের অংশ... সেই সত্য জানার পর থেকে, আমি নিজেকে প্রতিদিন প্রশ্ন করি।”
“তোমার ভয় করে?” এলিয়া জিজ্ঞেস করে।
“ভয়? হ্যাঁ। ভয় করে... যদি একদিন আমিও ভ্রাত হয়ে যাই?”
তখন এলিয়া ধীরে তার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি হতেই পারো অন্ধকারের সন্তান। কিন্তু আমি তোমার চোখে আলো দেখেছি। তুমি যদি হেরে যাও, তবে এই রাজ্যও হেরে যাবে।”
এক মুহূর্ত নীরবতা।
তারপর হঠাৎই, আগুনের মধ্য থেকে একটা দৃষ্টিভ্রমের মতো কিছু দেখা যায়। এক মহিলা, সাদা পোশাক পরে, চোখে অনন্ত বিষাদ।
“এলিয়া...” সে কাঁপা কণ্ঠে বলে, “তুই আমার মেয়ে। তোকে আমি লুকিয়ে রেখে গিয়েছিলাম এই ভবিষ্যতের জন্য। এখন সময় হয়েছে... সব স্মৃতি ফিরে আসবে...”
আগুন নিভে যায় হঠাৎই।
এলিয়া কাঁপতে থাকে। মাথার মধ্যে ঝড় বয়ে যায়। স্মৃতির টুকরো-টাকরা ভেসে ওঠে—এক প্রাসাদের চূড়ো, এক যুদ্ধ, এক গর্ভবতী নারী চিৎকার করছে—
“তাকে নিয়ে যাও! সে ভ্রাতকে শেষ করতে পারবে!”
এলিয়া মাটিতে বসে পড়ে, কাঁপতে কাঁপতে বলে, “আমার মা... তিনি জানতেন সবকিছু... আমি এখানে এসেছি কারণ আমি জন্ম থেকেই এই যাত্রার জন্য তৈরি...”
কায়ান এগিয়ে এসে তাকে ধরে।
“তাহলে আমাদের এখন আর পেছনে ফেরা চলবে না,” কায়ান বলে, “আমাদের যেতে হবে ‘অন্ধকারের হৃদয়’-এ, যেখানে ভ্রাত ঘুমিয়ে আছে।”
এবং অন্ধকার আকাশের বুক চিরে তখন প্রথমবারের মতো জ্বলে ওঠে এক ক্ষীণ রক্তচাঁদ।
ভ্রাত... জেগে উঠছে।
অজানা আলোয় এগিয়ে চলা
প্রতিটি মানুষের জীবনেই থাকে কিছু অন্ধকার অধ্যায়—যেখানে নিজের অস্তিত্ব, অতীত, এমনকি ভবিষ্যৎ নিয়েও নিশ্চিত হওয়া যায় না। এলিয়া ও কায়ান এখন সেই অন্ধকারের গভীরে দাঁড়িয়ে, যেখানে পথ নেই, কেবল আছে অনুভব আর বিশ্বাস।
এই পর্বে এলিয়া প্রথমবারের মতো নিজের ভেতরে থাকা শক্তির ঝলক দেখতে পেল, বুঝতে পারল তার জন্ম কেবল একটি মেয়ে হয়ে বেঁচে থাকার জন্য নয়, বরং এক রাজ