Touch of Fire - 4 in Bengali Love Stories by Love verse bangla books and stories PDF | আগুনের ছোঁয়া - পর্ব 4

Featured Books
Categories
Share

আগুনের ছোঁয়া - পর্ব 4

টাইটেল: দহন🔥🔥🔥

ইশা জানলার ধারে বসে ছিল। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। টিপটিপ শব্দে যেন কোথাও একটানা কান্না লুকিয়ে আছে। তার বুকের ভেতরে আজ বড় ফাঁকা লাগছে। সায়নের মুখটা চোখের সামনে এসে পড়ে—তীব্র ঘৃণা, আবার এক ধরনের টানও যেন ছিল ওর চোখে।


সায়ন চলে যাওয়ার পর পুরো একটা দিন কেটেছে। রুদ্র একবার এসেছিল, জিজ্ঞেস করেছিল, "ভালো আছো?"

ইশা শুধু মাথা নাড়িয়ে বলেছিল, "হ্যাঁ।


কিন্তু ‘ভালো’ থাকা আর ‘ভালো’ দেখানোর মধ্যে যে আকাশ-পাতাল তফাৎ,সেটা কি রুদ্র জানে?


রুদ্রর মধ্যে একটা রহস্য আছে, একটা গভীরতা, যেটা ইশা কবে থেকে টের পাচ্ছে জানে না। সে তো শুধু বন্ধুই ছিল। কিন্তু আজকাল তার চোখে যে আগুনটা জ্বলছে, সেটা কীসের? আকর্ষণ? অধিকার? না প্রেম?


হঠাৎ করে ফোন বেজে উঠল।

– ইশা, দরজাটা খোল তো। আমি রুদ্র।


ইশার বুক কেঁপে উঠল।

রুদ্র রাতে এসেছে? কেন?


দরজা খুলতেই সামনে দাঁড়ানো মানুষটার চোখে স্পষ্ট দেখা গেল চিন্তা, এবং কিছু চাপা উত্তেজনা।


– তোমার জন্য ভয় হচ্ছিল... তুমি একা। আমি চাই না তুমি আবার নিজেকে কষ্ট দাও, রুদ্র বলল।


ইশা কিছু বলতে পারল না। শুধু বলল, ভেতরে এসো।


রুদ্র ঘরে ঢুকে দেখল, ঘরটা একদম নিঃশব্দ, যেন সব শব্দ গিলে নিয়েছে এই আবহাওয়া।


সে বলল, তুমি একা থাকতে পারো না ইশা। তুমি সেটা নিজেও জানো। প্লিজ, আমাকে দূরে ঠেলো না। আমি আছি, থাকব।


ইশার চোখে জল এসে গেল। কিন্তু সে চাইল না রুদ্র সেটা বুঝুক। সে নিজেকে শক্ত করল। বলল, “তুমি তো বন্ধু, রুদ্র। এর বেশি কিছু হবার কোনো মানে নেই।”


রুদ্র ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এল। তার চোখে ছিল অদ্ভুত এক জেদ, আগুনের মতো জ্বলন্ত আকাঙ্ক্ষা।


– তুমি জানো না আমি কতোটা দগ্ধ হচ্ছি, ইশা,” রুদ্র বলল। “তোমার ছায়াটাও আমাকে পোড়ায়।


ইশা হতবাক। সে বুঝতে পারছে এই মুহূর্তে রুদ্রের হৃদয়ে কী দহন চলছে, সে নিজেও কি একটু টান অনুভব করছে না? কিন্তু…

সায়নের কথা মনে পড়তেই সে পিছিয়ে গেল।


– না রুদ্র… এখন না। আমি তৈরি নই…


রুদ্র থেমে গেল। একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, “ঠিক আছে। কিন্তু জানো তো, কিছু আগুন নিভে গেলেও, তার ছাই অনেকদিন গরম থাকে।


রুদ্র বেরিয়ে গেল ঘর থেকে, কিন্তু

ইশার বুকের ভেতর সেই কথা গেঁথে রইল।

ছায়া ও শরীর


ইশা পরের দিনটা বেশ অস্থিরতায় কাটালো। রাতে ঘুম এল না। রুদ্রর বলা কথাগুলো যেন বারবার মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল—

কিছু আগুন নিভে গেলেও, তার ছাই অনেকদিন গরম থাকে…


এই কথার ভেতরে যে অনুভূতির গভীরতা আছে, সেটা কি রুদ্র নিজেও বুঝেছে? নাকি ও কেবল বলেই ফেলেছিল?


সকালে চা খেতে খেতেই ইশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখের দিকে তাকাল। কেমন যেন বদলে গেছে চোখের ভাষা। একসময় সায়নের ভালোবাসায় সে যেমন করে নিজেকে দেখতো, এখন যেন অন্যরকম একটা চেহারা ফুটে উঠেছে। একরাশ কষ্ট, একরাশ জেদ, আর কোথাও যেন একটা গোপন আকর্ষণ।


রুদ্র আসেনি আজ।

অবচেতনভাবে ইশা যেন ওকে খুঁজছিল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল ঘণ্টাখানেক, ছাদে গিয়ে বসেছিল কিছুক্ষণ, এমনকি নিচে দোকানে যাওয়ার অজুহাতে রাস্তাতেও গিয়েছিল—সবটাই রুদ্রর মুখটা একবার দেখার আশায়।


নিজেকে নিজেই ধমক দিল ইশা।


তুই কী করছিস ইশা! এভাবে কারো জন্য অপেক্ষা করা তুই তোর জীবনে আর একবার করতে চাস?

– কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তরটা সে নিজেই দিতে পারল না।


দুপুরের দিকে হঠাৎ কল বেজে উঠল।


– আমি রুদ্র… একবার দেখা করতে পারি?


ইশার শরীরটা কেমন শিহরিত হয়ে উঠল। কিন্তু সে শান্ত গলায় বলল, এসো।


রুদ্র এল। হাতে একটা ছোট্ট বাক্স।


– এটা তোমার জন্য, সে বলল।


ইশা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, কী এটা?”


– তোমার জন্য একটা চিঠি… আর একটা স্মৃতি।


ইশা ধীরে ধীরে বাক্সটা খুলল। ভিতরে একটা মুচড়ানো চিঠি আর পুরনো একটা চুলের ক্লিপ। সেই ক্লিপটা… এটা তো সেই, যেটা সায়ন প্রথমবার ইশার চুল থেকে খুলে রেখেছিল, মজা করে বলেছিল, এইটা আমার কাছে থাকবে, প্রমাণ হিসেবে, তুমি আমার।


ইশার গলা শুকিয়ে গেল।


– তুমি এটা কোথায় পেলে?


রুদ্র গভীরভাবে তাকাল, বলল, “সায়ন আমাকে দিয়েছিল একদিন। বলেছিল, যদি কখনও তুমি একা হয়ে পড়ো, এটা দিয়ে তোমাকে মনে করিয়ে দিও, তুমি কার ছিলে।


ইশা থমকে গেল। ওর চোখ দুটো কুয়াশার মতো জলে ঢেকে গেল। কিন্তু সেই মুহূর্তেই রুদ্র আরও কাছে এগিয়ে এল।


– “তুমি জানো, ইশা? মানুষের ‘ছিলাম’ যত বড় শব্দ, ‘আছি’ তার চেয়েও বেশি শক্তিশালী। সায়ন তোমার ছিল, আমি আজও আছি।”


ইশার বুকের ভেতর কেমন ঝড় উঠল। একদিকে সায়নের স্মৃতি, আরেকদিকে রুদ্রর স্পষ্ট উপস্থিতি, এক অচেনা উষ্ণতা।


রুদ্র হঠাৎ করেই তার হাতটা ধরে ফেলল। চোখে চোখ রেখে বলল,

– “আমাকে একটা সুযোগ দাও, ইশা। আমি তোমাকে ভাঙবো না। আগলে রাখবো। তোমার শরীর না, তোমার ছায়া… তোমার অভিমান ভালোবাসব আমি।”


ইশার ঠোঁট কাঁপল। সেই স্পর্শে এক ধরণের শিহরণ ছড়িয়ে পড়ল সারা গায়ে।

কিন্তু সে এখনও কিছু বলল না। চুপচাপ তাকিয়ে

রইল রুদ্রর চোখে।


এত আগুন কি সে ধারণ করতে পারবে?



ইশা কী ভুলে যাবে সায়নকে? রুদ্রর আগুনে সে কি পুড়তে রাজি? নাকি এটা শুধু এক দহন, কোনো প্রেম নয়?


📍 পর্ব আসছে শিগগিরই…