Cursed Love - Part 2 in Bengali Love Stories by Prabhakar Bhangar books and stories PDF | অভিশপ্ত ভালোবাসা - প্রথম 2

Featured Books
Categories
Share

অভিশপ্ত ভালোবাসা - প্রথম 2

অন্বেষার হাতে জ্বলছে মোমবাতি। পুরনো পুঁথির পাতায় লেখা আছে মুক্তির মন্ত্র—"রক্তে লিখন, প্রাণে বলিদান, চিরন্তন বিদায়"। চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রুটা সে মুছে ফেলল। ইশানকে বলতে হবে, সে প্রস্তুত।

কক্ষের দরজা খুলতেই হরিপদ দাঁড়িয়ে। তার চোখে রাগ, হাতে তীক্ষ্ণ দা।
"তুমি রাজবাড়ির শান্তি নষ্ট করছ, মেয়ে! ওই আত্মাকে জাগিয়ে তোলা মানে গ্রামের উপর অভিশাপ নামানো!"
অন্বেষা পিছু হটল। হরিপদর মুখে ফেনা উঠছে, "১৯০২ সালেও এক পাগল মেয়ে এসেছিল মুক্তির কথা বলে... তার মাথা আমি কেটে লেকে ফেলেছিলাম!"

হঠাৎ বাতাসের বেগে মোমবাতি নিভে গেল। অন্ধকারে ইশানের হাত অন্বেষার কাঁধে।
"ভয় পেয়ো না," তার গলায় কোমলতা।
হরিপদ চিৎকার করে উঠতেই ইশানের চোখ জ্বলল রক্তিম আভায়। বৃদ্ধের গলা চেপে ধরে সে বলল, "তোমার মতো খুনিরা কেন আজও বেঁচে আছে?"
খটাখট শব্দ। হরিপদর দেহ মেঝেতে পড়ল পুতুলের মতো।

অধ্যায় ৬: রক্তের প্রতিশোধ
লেকের ধার, পূর্ণিমার রাত

চাঁদ যেন রক্তাক্ত। অন্বেষা পরেছে মেঘলার সেই লাল শাড়ি—যা পাওয়া গিয়েছিল ডায়েরির নিচে চাপা। ইশান বাজাচ্ছে বাঁশি, সুরে সুরে জেগে উঠছে লেকের জল।

"মন্ত্র পড়ো এখন!" ইশানের কণ্ঠে জরুরিতার সুর।
অন্বেষার কপালে ঘাম। সে ছুরি দিয়ে কাটল হাতের তালু। রক্ত ঝরল পুঁথির পাতায়।
"যে প্রেম মৃত্যুকে জয় করে, সে অভিশাপকে ভাঙে..."

হঠাৎ লেকের জল ফুঁসে উঠল। ভেসে এল মেঘলার দেহ—অক্ষত, সুন্দর, চোখ দুটো খোলা।
"রুদ্রনীল... তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে?" মেঘলার কণ্ঠে বিষাদের ছুরি।
ইশান থতমত খেয়ে গেল। অন্বেষা বুঝল, এটা অভিশাপের শেষ ফাঁদ—মেঘলার আত্মা এখনও আবদ্ধ!

মেঘলা হাসল ভয়ঙ্কর সুরে, "তুমি যদি আমাকে ভালোবাসতে, তবে কেন পালিয়ে গেলে সেদিন? এবার কাউকে ছাড়ব না!"
লেকের জল বান্ডিল হয়ে ছুটে এল অন্বেষার দিকে!

অধ্যায় ৭: চিরবিদায়
ভোরের আলো ফোটার আগে

ইশান লাফিয়ে পড়ল জলে। অন্বেষাকে জড়িয়ে ধরে বলল, "ক্ষমা চাই, মেঘলা। তুমি আমার প্রথম প্রেম, কিন্তু অন্বেষা... ও আমার শেষ মুক্তি।"
তারপর সে চুম্বন করল অন্বেষাকে—ঠোঁটে ঠোঁটে জমে থাকা শত বছরের যন্ত্রণা।

মেঘলা চিৎকার করল, "না! এটা হতে দেব না!"
ইশানের দেহ থেকে বেরিয়ে এল উজ্জ্বল আলোর বল। মেঘলার দেহ তা গ্রাস করতেই দুজনের আত্মা মিলে গেল আলোর ঝড়ে।

ভোরের সূর্য উঠলে অন্বেষা দেখল, লেকে ভেসে আছে শুধু মেঘলার চিরে যাওয়া শাড়ি। ইশানের বাঁশিটা পড়ে আছে পাশে।
দূর থেকে শোনা গেল শেষ বাক্য—"তোমাকে ভুলব না... চিরকাল..."

অধ্যায় ৮: অভিশাপহীন ভোর
এক মাস পরে, কলকাতা

অন্বেষার থিসিস জমা পড়েছে। রাজবাড়ির খবর পেল—লেক শুকিয়ে গেছে, হরিপদর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল গর্তে চাপা।

রাতে ঘুমের মধ্যে এখনও শোনা যায় বাঁশির সুর। জানালার পাশে কখনো কখনো মনে হয়, কেউ হাসছে।
অন্বেষা খুলে রাখে ডায়েরি। শেষ পাতায় লেখে—
"ভালোবাসা কি মৃত্যুকে জয় করে? না, মৃত্যুই ভালোবাসাকে অমর করে..."

ভোরের আলোয় রাজবাড়ির ছায়া ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়। অন্বেষা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে, লেকের শুকনো তীরের দিকে চেয়ে থাকে। এক সময়, যেখানে শতাব্দীর অভিশাপের ভারে বাতাসও ভারী ছিল, আজ সেখানে নিস্তব্ধতা—কিন্তু সেই নিস্তব্ধতায় মিশে আছে এক অদ্ভুত প্রশান্তি, এক মুক্তির স্পর্শ।

অন্বেষা জানে, তার জীবনের সবচেয়ে অদ্ভুত, সবচেয়ে গভীর ভালোবাসার গল্পটা এখানেই শেষ নয়। রুদ্রনীল আর মেঘলার আত্মা আজ মুক্ত, কিন্তু তাদের ভালোবাসার স্মৃতি অন্বেষার হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে। সে বুঝতে পারে, ভালোবাসা কখনোই হারিয়ে যায় না—কখনো তা রূপ বদলায়, কখনো তা সময়ের সীমানা পেরিয়ে নতুন জীবন খুঁজে নেয়।

অন্বেষা ডায়েরির শেষ পাতায় লিখে রাখে—
"ভালোবাসা শুধু দুটি প্রাণের নয়, ভালোবাসা সময়েরও। কখনো তা অভিশাপ হয়ে ফিরে আসে, আবার কখনো মুক্তির আলোয় ভেসে যায়। আজ আমি জানি, ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা করাই জীবনের সবচেয়ে বড় সাহস।"

হয়তো আর কোনো পূর্ণিমার রাতে বাঁশির সুর শোনা যাবে না, হয়তো আর কোনো ছায়া লেকের জলে কাঁদবে না—কিন্তু অন্বেষার মনে রয়ে যাবে সেই চিরন্তন প্রেমের গল্প, যা একদিন অভিশাপকে জয় করেছিল ভালোবাসার শক্তিতে।

জীবন এগিয়ে চলে, কিন্তু কিছু গল্প চিরকাল বেঁচে থাকে—হৃদয়ের গোপন কোণে, স্মৃতির পাতায়, আর নতুন ভোরের আশায়।
এটাই ভালোবাসার চিরন্তন সত্য।