Love in the melody of the roof. in Bengali Love Stories by Prabhakar Bhangar books and stories PDF | ছাদের সুরে প্রেম।

Featured Books
Categories
Share

ছাদের সুরে প্রেম।

অনির্বাণের শৈশব
অনির্বাণের জন্ম কলকাতার এক সঙ্গীতময় পরিবারে। মা সুমিত্রা সেন হারমোনিয়ামে রাজস্থানের ঘরানার এক প্রবাদপুরুষ। অনির্বাণের প্রথম স্মৃতি—মায়ের আঙুলের তালে তালে হারমোনিয়ামের ক্লান্তিহীন সুর। পাঁচ বছর বয়সে, একদিন মা তাকে বললেন, "বাদ্যযন্ত্র কখনো মিথ্যা বলে না, বাবা। এর সুরে মানুষের মন খুঁজে পাওয়া যায়।" সেই দিনই সে হারমোনিয়ামের ক্লেভিয়ারে প্রথম আঙুল ছুঁইয়ে দিল 'সা-রে-গা-মা'।

স্কুলের পড়ায় মন নেই, তাই বিকেল গড়াতেই সে ছুটে যেত মায়ের প্র্যাকটিস রুমে। একবার রেকর্ডিং স্টুডিওতে মায়ের সঙ্গে গিয়ে দেখল—সঙ্গীত শিল্পীরা মায়ের হারমোনিয়ামের সুরে মাথা দুলাচ্ছেন। সেদিন ঠিক করল, সে মায়ের চেয়েও বড় শিল্পী হবে।

রিমঝিমের শৈশব
রিমঝিমের বাবা অরুণাভ ঘোষ তানপুরায় বাংলার গৌরব। কিন্তু রিমঝিমের হৃদয় জুড়ে ছিল সেতার। ছয় বছর বয়সে বাবার তানপুরা নিয়ে খেলতে গিয়ে সেটি ভেঙে ফেলেছিল। বাবা রেগে বলেছিলেন, "মেয়েদের সেতার শেখা উচিত নয়!" কিন্তু রিমঝিম লুকিয়ে বাবার শিষ্য বিশ্বজিৎ কাকুর কাছে সেতারের পাঠ নিত।

একদিন দুপুরে, বাবা দেখে ফেললেন সে সেতারে 'মিঠুর গান' বাজাচ্ছে। প্রথমে রাগ করেননি, বরং চোখে জল নিয়ে বলেছিলেন, *"তুই আমার চেয়েও বড় শিল্পী হবি রিমু।

পরিবারের শত্রুতার গোড়ার গল্প
সুমিত্রা ও অরুণাভ: এক সময়ের বন্ধু
১৯৯৫ সাল। সুমিত্রা ও অরুণাভ ছিলেন কলকাতার একই সঙ্গীত গুরু রামকানাই দাসের শিষ্যা ও শিষ্য। দুজনের বন্ধুত্ব ছিল প্রবাদপ্রতিম। একসঙ্গে তারা জিতেছিলেন 'জাতীয় যুগল সঙ্গীত প্রতিযোগিতা'। কিন্তু ২০০১ সালে, একটি গুরুত্বপান্তর কনসার্টে সুমিত্রা হারমোনিয়াম বাজাচ্ছিলেন, আর অরুণাভ তানপুরায় সঙ্গত করছিলেন। হঠাৎ সুমিত্রা নোট মিস করলেন, অরুণাভ তানপুরার সুর চেঞ্জ করে তাকে বাঁচালেন। দর্শক applauded, কিন্তু সুমিত্রা মনে করলেন, অরুণাভ ইচ্ছাকৃতভাবে তার ভুল ফাঁস করেছেন।

বিচ্ছেদের আগুন
পরের দিন সংবাদপত্রে হেডলাইন হলো—"অরুণাভের তানপুরায় ঢাকা পড়ল সুমিত্রার ভুল!" সুমিত্রা অরুণাভকে জিজ্ঞাসা করলেন, "তুমি কি আমার বিপক্ষে গল্প ছড়িয়েছ?" অরুণাভ কোনো উত্তর দেননি, শুধু চলে গেলেন।rivals, এবং তাদের পরিবারগুলিও শত্রুতে পরিণত হয়েছিল।

ছাদের সুর: প্রতিদিনের গল্প
প্রথম সন্ধ্যা: যুদ্ধ নাকি যুগলবন্দী?
অনির্বাণ প্রথম দিন ছাদে উঠে হারমোনিয়ামে বাজাল 'রাগ ভৈরবী'। ওপাশ থেকে রিমঝিমের সেতারে ভেসে এল 'রাগ মালকোষ'। দুজনের সুর যেন বলল—"তুমি কে? তুমি কি আমার শত্রু?"

দ্বিতীয় সন্ধ্যা: প্রতিযোগিতা
পরের দিন, অনির্বাণ ইচ্ছাকৃতভাবে বাজাল জটিল 'রাগ ললিত'। রিমঝিম চোখ বুজে সেতারে দিলেন 'রাগ মারওয়া'—যা সেই রাগের পারফেক্ট রিপ্লাই। পাড়ার লোকজন ছাদে জমে উঠল।

সপ্তম সন্ধ্যা: প্রথম সমন্বয়
একদিন বৃষ্টির সন্ধ্যায়, অনির্বাণ বাজাল 'রাগ মেঘ'। রিমঝিম বুঝে গেল, এটা তার জন্য আমন্ত্রণ। সে সেতারে যোগ দিল 'রাগ মালহার' সঙ্গে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে তাদের সুর মিলে গেল আকাশের গর্জনের সঙ্গে।

গোপন বার্তা: সুরের ইশারা
জানালার পাশের ডায়েরি
রিমঝিম প্রতিদিন সকালে জানালার পাশে রাখত একটি লাল রিবন। সেটি দেখেই অনির্বাণ বুঝত, আজ সন্ধ্যায় সে ছাদে আসবে। একবার রিমঝিম ফুলদানিতে রেখে গেল একটি গাঁদা ফুল—তার মর্মার্থ ছিল "আজ আমার মনে পড়েছে তোমার কথা।"

রেকর্ডিং টেপের প্রেমচিঠি
অনির্বাণ একটি ক্যাসেট টেপে বাজাল 'রাগ পিলু'—যা প্রেমের রাগ। রিমঝিম তার জবাবে টেপে রেকর্ড করল 'রাগ হিন্দোল'। টেপের শেষে সে ফিসফিসিয়ে বলল, "কাল সকালে পাঠশালার মাঠে দেখা হবে।"

পরিবারের দ্বন্দ্ব: অহংকারের আগুন
সুমিত্রার ক্রোধ
একদিন সুমিত্রা শুনলেন, অনির্বাণ রিমঝিমের জন্য একটি গান লিখছে। তিনি হারমোনিয়াম ছুঁড়ে ফেলে বললেন, "ঘৃণা করো ওই ঘরানাকে! ওরা আমাদের শত্রু!" অনির্বাণ প্রথমবার মায়ের সাথে তর্ক করল, "সুরের কি জাত থাকে, মা?"

অরুণাভের হুমকি
রিমঝিমের বাবা তাকে বললেন, "তুমি যদি ওর সঙ্গে কথা বলা বন্ধ না করো, আমি তোমার সেতার ভেঙে দেব!" রিমঝিম কাঁদতে কাঁদতে বলল, "বাবা, সেতার না থাকলে আমি মরে যাব!"

সঙ্গীত সন্ধ্যা: শত্রুতা থেকে মিলন
মঞ্চের প্রস্তুতি
পাড়ার বর্ষা উৎসবে মঞ্চ সাজলো আল্পনায়। অনির্বাণ ও রিমঝিমের পরিবার জানত না, তারা গোপনে রিহার্সাল দিয়েছে একসঙ্গে। মঞ্চের পেছনে দাঁড়িয়ে অনির্বাণ বলল, "আজ আমাদের সুরেই সব শেষ হবে।"

যুগলবন্দী: হারমোনিয়াম ও সেতার
তারা বাজাল 'রাগ মিশ্র শিবরঞ্জনি'—একদিকে হারমোনিয়ামের গভীরতা, অন্যদিকে সেতারের করুণ ঝঙ্কার। মাঝখানে তারা মুখোমুখি হয়ে বাজাল 'আমার প্রিয়ার চোখে আমি চাই...'—রবীন্দ্রসঙ্গীতের সেই লাইন।

পরিবারের আত্মসমর্পণ
সুমিত্রা ও অরুণাভের চোখে জল। মঞ্চে উঠে অরুণাভ বললেন, "আমরা সুরের নামে শত্রুতা করেছি, কিন্তু আজ সুরই আমাদের শেখাল—ভালোবাসা কোনো প্রতিযোগিতা নয়।"

সমাপ্তি: নতুন সুরের সূচনা
সেদিনের পর থেকে দুই পরিবার মিলে গেল। অনির্বাণ ও রিমঝিমের বিয়ের দিনে তাদের যুগলবন্দী বাজল 'রাগ বসন্ত'—নতুন জীবনের প্রতীক। আর সেই ছাদে এখনও সন্ধ্যায় মিশে ওঠে হারমোনিয়াম ও সেতারের সুর—প্রেমের অমর সঙ্গীত।