Guest Of Night in Bengali Horror Stories by Utopian Mirror books and stories PDF | রাতের অতিথি

Featured Books
  • स्वयंवधू - 31

    विनाशकारी जन्मदिन भाग 4दाहिने हाथ ज़ंजीर ने वो काली तरल महाश...

  • प्रेम और युद्ध - 5

    अध्याय 5: आर्या और अर्जुन की यात्रा में एक नए मोड़ की शुरुआत...

  • Krick और Nakchadi - 2

    " कहानी मे अब क्रिक और नकचडी की दोस्ती प्रेम मे बदल गई थी। क...

  • Devil I Hate You - 21

    जिसे सून मिहींर,,,,,,,,रूही को ऊपर से नीचे देखते हुए,,,,,अपन...

  • शोहरत का घमंड - 102

    अपनी मॉम की बाते सुन कर आर्यन को बहुत ही गुस्सा आता है और वो...

Categories
Share

রাতের অতিথি

খুট করে কিসের যেনো একটা শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো। আজকাল এই এক রোগ হয়েছে। যত বয়েস বাড়ছে ঘুম পাতলা হচ্ছে। রমা থাকলে তবু ঠিক নাহলে আরো কেমন গা শিরশির করে বারবার ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। কিন্তু আওয়াজ টা কিসের হলো। আধো ঘুমন্ত চোখে পরিষ্কার দেখতেও পাচ্ছিনা। বুবাই টুবাই ডাকলো নাকি। শরীর খারাপ হলো কি? নেমে এসেছে ওপরের শোয়ার ঘর থেকে? রমা তো কাল ফিরবে।

না কারো সাড়াও তো পাচ্ছিনা। কিরে বুবাই টুবাই ডাকছিস নাকি। দূর মনের ভুল হবে। নাহ শুয়ে পড়ি কাল অনেকগুলো কেস এর শুনানি আছে। আবার খুট খুট ধরমড় করে উঠে বসলাম খাটে। আরে আরে ওটা কে খোলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে! বাড়িতে ঢুকলো কি করে? ঘরের দরজা খুলে শোয়া চিরকালের অভ্যাস সেই বাবা মা বেঁচে থাকতেই। যদি রাতবিরেতে শরীর খারাপ হয় ডাকলে শুনতে পাবনা তাই। বাবা মা কবেই গত হয়েছেন কিন্তু সেই নিয়মই চলছে।

ঘরে তো নয় ঢুকে পড়েছে দরজা খোলা পেয়ে কিন্তু বাড়িতে ঢুকলো কি করে। না আমি নিজে শোবার আগে সব চেক করেছি। বুবাই টুবায়ের ওপর ভরসা আছে? রাতদিন কানে হেডফোন গেট খুলে ঢুকে গেলো। সদর দরজাটা যে দিতেও হয় সে খেয়াল নেই। আর স্পষ্ট দেখাও যাচ্ছেনা না কেমন যেন ছায়া শরীর। আলোটা যে জ্বালাবো তার উপায় নেই। দরজার পাশে সুইচবোর্ড গার্ড করে উনি দাঁড়িয়ে। কতবার রমা বলেছে একটা বেড সুইচ করো বৌ এর কথা না শোনার ফল এখন হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি।

ছায়াটা যে একটা পুরুষ বুঝতে পারছি এই কে কে আপনি? কি করে বাড়িতে ঢুকলেন হ্যাঁ ? কি কথা কানে যাচ্ছে না আজব তো। আসতে আসতে একটু পরিষ্কার হচ্ছে অবয়বটা। ওই শার্ট টা ওটা কেমন যেন চেনা চেনা অনেকদিন আগে দেখা কিছুতেই মনে করতে পারছিনা। নাহ নাহ নাহ এ হতে পারে না কিছুতেই না। মনে পড়েছে ওটা তো ওটা তো নীলুর শার্ট। আপনি কি করে পেলেন! কি করে। নীলু তো অনেক আগেই.......

হটাৎ একটা প্রচন্ড অট্টহাসি হা হা হা হা...... তুই হাসালি দাদা। কিরে দাদা আমায় চিনতে পারছিস না? কেমন আছিস? ভালো করে তাকিয়ে দেখতো আমি কে?

নীলু........ ভীষণ একটা ভয় আঁকড়ে ধরলো আমায়। নিঃস্বাস বন্ধ হয় যাচ্ছে। শিরদাঁড়া দিয়ে একটা হিমেল রক্তপ্রবাহ। একি করে সম্ভব। না না এ হতে পারেনা। মিথ্যে সব মিথ্যে। কে আপনি কে ফ্রড কোথাকার ভয় দেখাতে এসেছেন। জানেন আমি কে! হাই কোর্ট এর বার এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট আমি অখিলেশ চ্যাটার্জী আমায় ব্ল্যাকমেল করছেন।

দূর দাদা তুই সেই একি রকম ভীতু রয়ে গেলিরে। কি লাভ তোকে ভয় দেখিয়ে। ৩০ বছর আগে যখন খাদের ধারে ডাকলি কিছুই না ভেবে এগিয়ে গিয়েছিলাম। বললি দেখ ভাই নিচে কি চকচক করছে। কই রে দাদা কিছুই তো দেখতে পাচ্ছিনা। পাবি পাবি আরেকটু ঝুঁকে দেখনা। ঝুঁকে পড়েছিলাম শরীরের ব্যালান্স তোর ওপর ছেড়ে দিয়ে। প্রথম ধাক্কাটা যখন দিলি ভয়ের চেয়ে অবাক হয়েছিলাম বেশি। তখনো পড়িনি। দ্বিতীয়বার আর সামলাতে পারলামনা রে। অনেক নিচে যখন পড়ছিলাম মনে আছে তোর কি বলেছিলাম..... দাদা আমি পড়ে যাচ্ছি দাদা আমায় বাঁচা......

কেন করলি দাদা। আমি তো তোকে অগাধ ভালোবাসতাম রে আর বিশ্বাস করতাম সবচেয়ে বেশি। তোর ওপর নিজের চেয়ে বেশি ভরসা করতাম। তুই আজ সফল সব আছে তোর কিন্তু এই পাপবোধ কি করে মুছবি। দাদা তুই না বিরাট বড় উকিল। নিজের বিচারটা করেছিস কোনোদিনও? তোর প্রাপ্য শাস্তিটা যে অনেক বড় রে দাদা কে দেবে সেটা?

এই চুপ একদম চুপ তখন থেকে ফালতু কথা বলে যাচ্ছেন। কি করেছি আমি কি? কোনো অন্যায় করিনি আমি। কিসের পাপ কিসের শাস্তি। রোজ রোজ ঘরে বাইরে সবাই শুধু নীলু নীলু নীলু। এমনকি মা বাবাও। কেন আমার মধ্যে কি কম ছিল। হ্যাঁ মানছি নীলুর মতো সাহসী ছিলাম না, দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম, সাঁতার, ফুটবল, দাবা, পড়াশোনা সবেতে প্রথম। তাতে কি আমিও কি কিছু কম ছিলাম।

আমার বুদ্ধি অনেক বেশি ছিল। ভালো গান করতাম। লজিক ছিল টপ ক্লাস। প্রথম না হলে কি জিনিয়াস হওয়া যায়না। কিন্তু না আমার কোনো গুন কারো চোখে পড়তো না সবার মুখে একটাই নাম। আর তুই বা কম কি ছিলি। সব সময় কিরে দাদা এবারেও হেরে গেলি। আমি পরাজিত তাইনা। পাগল হয় গেছিলাম ১৩ বছরের মনটা রাগে হিংসায় পশু হয়ে গেছিলো।

কোনো কম্পেটিশন রাখবো না শুধু আমি আমি আমি । বেশ করেছি যা করেছি। আজ দেখ আমি কত সফল। মা বাবা কিছু একটা আঁচ করেছিল। সেদিনের পর কোনোদিন আমায় ভালোবাসতে পারেনি । সব সময় অদ্ভুত চোখে তাকাতো আমার দিকে। আমি কিন্তু ছেলের কোনো কর্তব্যই অবহেলা করিনি। আমি কারো প্রতি কোনো দায়িত্ব অস্বীকার করিনি।

দাদা তোর ও তো দুটো জমজ ছেলে তাইনা। ঠিক আমাদের মতো দুই ভাই। কিন্তু দেখ ওরা কত সুন্দর কত ফ্রি। দুজনে দুজনের মতো কেউ পরোয়া করেনা কে কি বললো কে বেশি ভালো কে কম। তুই তো নিজের মতো বাঁচতে পারতিস দাদা। আমায় মেরে তুই কি সত্যি ভালো আছিস? যদি তোর এক ছেলে আরেকজনকে.....

না না না এসব আবোলতাবোল একদম বকবি না। কিছু হবেনা আমার ছেলেদের কিছুনা। কিছু হতে দেবো না বুক দিয়ে আগলে রাখবো। তুই কিছু করতে পারবিনা সেদিনও পারিসনি আর আজও পারবিনা। আজও আমি পাহাড়ে বেড়াতে যেতে পারিনা। রাত এ ঘুম ভেঙে যায়। একটা ভয় সব সময় একটা ভয়। বিশ্বাস কর নীলু সত্যি বলছি সেদিন ঝোঁকের মাথায় যা করেছি কোনোদিন নিজেকে তার জন্য ক্ষমা করতে পারিনি। কোনো দিন না।

তোর পরিবার তো জানে না ৩০ বছর আগের কোন খাদের ভেতরে তোর এই সফলতার বীজ বপন হয়েছে। কিছু কথা না জানাই থাক। না রে দাদা তোর কোনো ক্ষতি করতে আসিনি। এসেছিলাম তোকে দেখতে তোর সব পাপবোধ, গ্লানি আমি নিয়ে গেলাম।

চলি রে দাদা। শুধু যাবার আগে একটাই কথা শেষ বারের মতো বলে যাই। তোকে খুব ভালোবাসতাম রে দাদা দুনিয়ায় সব চেয়ে বেশি। আমি তো তোর মতো বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম রে দাদা। তুই ছিলি আমার হিরো। তুই বুঝলি না। আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম রে দাদা আমি তোর সাথে বাঁচতে চেয়েছিলাম।

ধীরে ধীরে হাওয়াই মিলিয়ে গেলো সেই ছায়াশরীর। নীলু যাসনা শোন ভাই শুনে যা যাসনা নীলু একটু দাঁড়া আমারো অনেক কিছু বলার আছে তোকে। তুই জানিস না কি যন্ত্রনা ..... আর বলতে পারলাম না অঝোর কান্নায় ভেঙে পড়লো শরীর। আমার রাতের অতিথি চলে গেছে। নীলুর অশরীরী আত্মা.......

রমার ডাকে ঘুম ভাঙলো হ্যাঁগো শুনছো কি ঘুম রে বাবা কখন থেকে ডাকছি। দেখতো এই চিঠিটা কে পাঠিয়েছে। লেটারবক্স এ ছিল কোনো নাম ঠিকানা নেই সাদা খাম। কে ফেলে দিয়ে গেছে মনে হচ্ছে।

সাদা খামের ভেতরে একটা ভাজ করা পাতা। খুলে পড়তে শুরু করলাম।

দাদা,

তুই কি ভাবলি নীলুর ভূত দেখা দিলো কাল। নারে নিখিলেশ চ্যাটার্জী সশরীরেই হাজির হয়েছিল । অবাক হচ্ছিস তো ভাবছিস, যে লোকটা ৩০ বছর আগে মরে ভূত হয় গেছে ও থুড়ি যাকে মেরে ফেলেছি সে আবার কোথেকে আসবে। ভগবানের আশীর্বাদ না তোর অভিশাপে জানি না খাদে পড়েছিলাম প্রায় ৯-১০ ঘন্টা। কোনো সেন্স ছিল না। শরীরের কোনো হাড় গোটা ছিলোনা। কিন্তু মরিনি রে। তোর নীলু এত সহজে হেরে যাবে?

ভাগ্যক্রমে একদল ট্রেককিং পার্টি এসেছিলো তাঁদের ট্রেনররা খাদের নেমে দেখছিলো নতুন ট্রেকারদের কোনো লাইফ রিস্ক আছে কিনা। ওই জরিপ করতে করতেই আমার জ্ঞাণহীন দেহটা দেখতে পায়। তুলে এনে হাসপাতালে ভর্তি করে। ৬ মাস জমে মানুষে টানাটানির পর জ্ঞান আসে। কিন্তু মনের অতলের সব স্মৃতি শেষ। নাম বাড়ির ঠিকানা কিছুই বলতে পারিনি। স্থানীয় এক চার্চ এর ফাদার আমায় দত্তক নেন। সেই থেকে ওটাই আমার ঘর বাড়ি আর অনাথ শিশুরাই আমার পরিবার।

আমার নাম এখন আলবার্ট পেটেরসন। ফাদার বলতেন মাই সন তুমি কিছু বলতে পারোনি শুধু বলতে দাদা আমি পড়ে যাচ্ছি বাঁচা দাদা। কি হইছিলো তোমার সাথে। মনে পড়তো না, কিছু মনে পড়তোনা। কদিন আগে কাকতালীয় ভাবে পাশের গ্রাম এ গেলাম বাচ্ছাদের নিয়ে একটা এক্সকারশনে। হটাৎ একদল পিকনিক পার্টির আবির্ভাব।

তাঁদের মধ্যে একটা ছেলে অবিকল সেই চোখ সেই মুখ ভীতু ভীতু লাজুক চাহনি। মাথায় ইলেকট্রিক শক লাগলো জানো। সব মনে পড়ে গেলো। ভাব জমিয়ে জানলাম ওটা তোর বড় ছেলে। ব্যাস আর কি ছেলে তো আপনভোলা একটা সাদর দরজার চাবির নকল বানিয়ে নিলাম। প্রায়ই আসে তো ছেলে চার্চ এ। কথায় কথায় অনেক কিছু বলে দেয়।

ব্যাস আর কি এই হলো তোর রাতের অতিথির কাহিনী। ভালো থাকিস দাদা। আমার সাথে দেখা করতে আসিস না। আমরা অন্য গ্রাম এ শিফট হয় গেছি। আমি আলবার্ট হয়েই বাঁচতে চাই দাদা নীলু অনেক আগেই মৃত। মরে গিয়েও জিতে গেলাম রে দাদা। তুই আবারো হেরে গেলি দাদা। আবারো হেরে গেলি।

ইতি,
তোর নীলু

কি গো আরে ওরম করছো কেন শরীরটা খারাপ লাগছে নাকি? আরে কার চিঠি কিগো সব ঠিক আছে তো। রমার আওয়াজ ধীরে ধীরে মিলিয়ে আসছে। আসতে আসতে বিস্তৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছি। ওই তো সেই খাদটা ওই তো ওই তো। সব অন্ধকার হয় গেলো। আঃ কি শান্তি।