illusory companion in Bengali Fiction Stories by Abhijit Chakraborty books and stories PDF | অলীক সঙ্গী 

Featured Books
  • स्वयंवधू - 31

    विनाशकारी जन्मदिन भाग 4दाहिने हाथ ज़ंजीर ने वो काली तरल महाश...

  • प्रेम और युद्ध - 5

    अध्याय 5: आर्या और अर्जुन की यात्रा में एक नए मोड़ की शुरुआत...

  • Krick और Nakchadi - 2

    " कहानी मे अब क्रिक और नकचडी की दोस्ती प्रेम मे बदल गई थी। क...

  • Devil I Hate You - 21

    जिसे सून मिहींर,,,,,,,,रूही को ऊपर से नीचे देखते हुए,,,,,अपन...

  • शोहरत का घमंड - 102

    अपनी मॉम की बाते सुन कर आर्यन को बहुत ही गुस्सा आता है और वो...

Categories
Share

অলীক সঙ্গী 

সারাদিন চাকরির জন্য ঘুরতে ঘুরতে চরম ব্যর্থ হয়ে সুজয় একটা পার্কে বসে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিল। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে সে চাকরির জন্য এক অফিস থেকে আর এক অফিস ঘুরতে ঘুরেতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল কিন্তু এখনও পর্যন্ত সে একটাও চাকরি জোগাড় করতে পারল না। সে তার মনে ব্যর্থতার দারুন যন্ত্রণা অনুভব করল। যখনই সে কোন দুঃখ পেত সে তার বাবা মাকে সব কিছুই বলতো কিন্তু এখন সেই অবস্থা আর নেই। গত এক বছর ধরে সে তার বাবা-মার সাথে সেই ভাবে কোন কথাই আলোচনা করতে পারেনা। তাদের জীবন যাত্রার মান পুরোটাই পাল্টে যায় Covid এর পর।

সুজয়ের বাবা একটা নামী কোম্পানিতে চাকরি করতো এবং ভালো মাইনা পেত কিন্তু Covid এর পরে সে কোম্পানি প্রায় বন্ধ হতে বসে। তাই কোম্পানির মালিকেরা কিছু লোককে ছাটাই করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর তার মধ্যে তার বাবাও কাজ হারায়। তার বাবা কাজ হারানোর ফলে অনেকটা মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এরপর পুরো পরিবারের দায়িত্ব সুজয় এর উপর এসে পরে। সুজয় তখন সবেমাত্র গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছিল। তারপর থেকে সুজয়ের কাছে শুরু হল জীবন সংগ্রাম।

কিন্তু সুজয় তার বাবা-মার প্রিয় সন্তান ছিল। তার এক কথায় তার বাবা তার জন্য সবকিছুই কিনে আনত। সুজয়কে কখনও টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তা করতে হতো না। সে প্রতিবার তার বন্ধুদেরকে বিনা কারণেই ভালো-মন্দ খাওয়াতো। এই কারণে সেই সময় তার অনেকগুলি বন্ধুও ছিল কিন্তু সুজয়ের আর্থিক অবস্থার অবনতি হতে সেই সুবিধাবাদী বন্ধুগুলো বেপাত্তা হয়ে যায়। সেই সময় সুজয়ের অনেক ছেলে বন্ধু থাকলেও সুজয়ের লাজুক স্বভাবের জন্য তার তখন কোন মেয়ে বন্ধু ছিল না। সে ভালো করে মেয়েদের সাথে কথা বলতে পারত না। পরে তার এক Online Dating App এর মাধ্যমে একটি মেয়ের সাথে আলাপ হয়। তার নাম ঈপ্সিতা। এখন সেই তার পরম বন্ধু। সুজয় তার সাথে সব দুঃখ, যন্ত্রণা বলে মনকে হালকা করতে পারে।

ঈপ্সিতার কথা মনে পড়তেই সুজয় তার মোবাইলের নেট অন করে এবং ঈপ্সিতা অনলাইন আছে তা জানতে পায়। সুজয় তার সারা দিনের ক্লান্ত ও ব্যর্থতার সব কথা video call করে তাকে জানাল। ঈপ্সিতাও তাকে প্রতি বারের মতো নানা রকমের অনুপ্রেরণা মূলক কথাবার্তা বলে তার মনকে শান্ত করল।

সুজয় আর ঈপ্সিতার সম্পর্ক প্রায় নয় মাস হয়ে গেছে। এক বছর আগে সুজয় তার অর্থনৈতিক অবনতির জন্য তার সব বন্ধুদের হারিয়ে একাকিত্ব হয়ে পড়েছিল। সে বাবা-মায়ের থেকেও মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। তাকে একাকীত্ব গ্রাস করে ফেলেছিল। সে তার একাকীত্ব দূর করতে তার এক নিকট আত্মীয়র কথা মত সে একটি Online Dating App তার মোবাইলে ডাউনলোড করে। আর সেখানেই তার ঈপ্সিতার সাথে আলাপ হয়। ঈপ্সিতার সহযোগিতায় সুজয় আবার তার জীবনকে নতুন ভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। তারা প্রতিদিন Message করে কথা বলতো এবং video call করে মুখোমুখি গল্প করতো। সুজয় যখনই চাইতো ঈপ্সিতাকে অনলাইনে পেয়ে যেত। ঈপ্সিতা যেন সুজয়ের জন্যই 24 ঘন্টা অনলাইন থাকতো। কিন্তু সুজয় যতবারই ঈপ্সিতার সাথে মুখোমুখি দেখা করার জন্য অনুরোধ করত ঈপ্সিতা যেন তেন প্রকারে সেটা এড়িয়ে যেত।

"সুজয় তুমি কিছু খেয়েছো?" ঈপ্সিতা ভিডিও কলের মাধ্যমে সুজয়ের খবর জানতে চাইল।

"ঈপ্সিতা, আমি আর একা থাকতে পারছি না। আমি যতবারই তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছি তুমি সেটা এড়িয়ে গেছ। এবার যদি তুমি না দেখা কর তাহলে আমি আর কোনদিন তোমার সাথে কথা বলব না।" সুজয়ের দুচোখ দিয়ে অঝরে চোখের জল পড়তে শুরু করলো।

"ও বাবা! বাবুর রাগ হয়েছে? আমিও তো তোমার সাথে দেখা করতে চাই কিন্তু আমি দেখা করবো সেদিন যেদিন তুমি চাকরি পাবে।" ঈপ্সিতা সুজয়কে আশ্বাস দিল।

সুজয় তাড়াহুড়া করে তার চোখের জল মুছে ঈপ্সিতার দিকে তাকিয়ে বলল, "তবে সেই কথাই থাকবে। চাকরির পাওয়ার পর আমরা দেখা করবই।"

"এবার তো হাসও। আমি তোমার কাছেই আছি। কোথাও যাবো না তোমায় ছেড়ে।" ঈপ্সিতা তাকে নানারকম মজার জোকস্ বলে হাসাতে লাগলো।

তার এই পাশে থাকার অঙ্গীকার সুজয়কে আবার চাঙ্গা করে তোলে। সে পরের দিন আবার চাকরির খোঁজ শুরু করে দেয়। এতদিনে সুজয়ের বাবার জমানো টাকা পুরোটাই নিঃশেষ হয়ে পড়েছিল। এইভাবেই কিছুদিন যাওয়ার পর সুজয়ের কাছে এলো এক সুখবরের দিন। সে এক নামীদামী কোম্পানিতে চাকরির জন্য সিলেক্ট হয়েছে। তার বাড়িতে তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার এসেছে। একটা পিয়ন এসে সবেমাত্র সেই লেটারটা সুজয়ের বাবার হাতে দিয়ে গেল। তার বাবা-মা আনন্দে তাকে আশীর্বাদ করলো। সুজয় অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পড়ার পর তার ঘরে গিয়ে ঈপ্সিতাকে ভিডিও কল করল।

"আমি চাকরি পেয়ে গেছি। এবার তোমার কথা রাখো, আমার সাথে দেখা কর। তুমি না থাকলে আমি কবেই আমার জীবনকে শেষ করে দিতাম। তুমি আমার প্রেরণা।"

সুজয়ের এই সাফল্যতা দেখে ঈপ্সিতাও তার চোখের জল আটকে রাখতে পারল না। সে নিজেকে কোন মতে সামলে উঠে বলল, "আমি তোমার সাথে দেখা করব। কিন্তু এক মাস পর। আগে তুমি মন দিয়ে চাকরি কর। যেদিন তুমি হাতে তোমার প্রথম salary পাবে তবে আমাকে জানাবে সেদিনই আমরা দেখা করব। তবে এর মধ্যে তুমি একবারও আমাকে যোগাযোগ করবে না। এক মাস পর আমি তোমাকে বলে দেবো কোথায় দেখা করতে হবে।" সুজয় তার কথা প্রথমে মানতে না চাইলেও ঈপ্সিতা তাকে নানাভাবে বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজি করায়।

এই ভাবেই একটা করে দিন কেটে যেতে লাগল। সুজয় এখন চাকরিতে মন দিয়েছে। সে খুব খুশি। যদিও রাত্রে সুজয় ঈপ্সিতার সাথে কথা বলার জন্য পাগলের মত করত কিন্তু সে ঈপ্সিতার কথা মতই তার সাথে বহু কষ্টে কোন যোগাযোগ রাখল না। সে কোনোভাবেই তাকে রাগাতে চাইছিল না। সে তার মোবাইলের নেট খুলে ঈপ্সিতাকে অনলাইন দেখেই খুশি পেত। সুজয়ের মনে হত যে ঈপ্সিতাও তার জন্য এক মাস শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে আছে। সে রোজ আকুল হয়ে থাকতো যে কবে সেদিনটা আসবে যেদিন সে আর ঈপ্সিতা একসাথে মুখোমুখি বসে কথা বলতে পারবে। সে এটাও ভেবে নিয়েছিল যে যেদিন সে ঈপ্সিতার সাথে প্রথম মুখোমুখি দেখা করবে সেদিন সে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে।

ঠিক এক মাস হওয়ার কয়েকটা দিন পর সে তার প্রথম salary পায়। প্রথম salary পেতেই তার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে। সে অপেক্ষা করতে থাকে কখন বাড়িতে গিয়ে সে তার salary এর কথা ইপ্সিতাকে জানাবে। অবশেষে সেই মুহূর্ত আসে। সে তার খুশির খবর video call করে ঈপ্সিতাকে জানাতে যায়। কিন্তু call টা কেটে যায়। সুজয় ভাবে যে ঈপ্সিতা হয়তো ব্যাস্ত আছে। তাই সে তাকে মেসেজ করে খবরটা জানায় আর দেখা করার কথাটাও মনে করিয়ে দেয়।

ঠিক আধঘন্টা পর অনলাইন ডেটিং অ্যাপের account থেকে তার E-Mail এ একটা mail আসে যা পড়ার পর সুজয়ের মাথায় যেন বাজ ভেঙ্গে পড়ে। সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিল না যা তার সাথে ঘটে গেছে। মেসেজটায় লেখা ছিল-

"Dear সুজয় সেনগুপ্ত। আপনাকে আমরা খুবই দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে আপনি যার সাথে এতদিন কথা বলছিলেন তার কোনো অস্তিত্ব নেই। সে একটি AI virtual girlfriend model। আমাদের কোম্পানি মানুষের একাকীত্ব দূর করার জন্য এইরকম একটি নতুন concept develope করেছি। এটার এখন Beta version এর পরীক্ষা নিরিক্ষা চলছে। আমরা আমাদের model কতটা বাস্তব সম্মত জানার জন্যই আমরা এদের গোপনীয়তা এতদিন ফাঁস করিনি। কিন্তু এরা কোন দিনই বাস্তব পরিবেশে উপস্থিত হতে পারবে না। এদের বিচরণ শুধু virtual world এ। কিন্তু সম্প্রতি আমাদের অ্যাপে কিছু bugs ধরা পড়ার জন্য সেগুলো fix করতে আমরা অ্যাপটাকে আপাতত বন্ধ করেতে বাধ্য হচ্ছি। আশাকরি আপনি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন। আপনাকে আপনার নতুন কর্মজীবনের জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল।"

সুজয় হতবুদ্ধি হয়ে মাথা ধরে কিছু ক্ষণ খাটের উপর বসে রইল। তার মন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিল না যে ঈপ্সিতা একটা AI virtual girlfriend model। তার কোনভাবেই এই ব্যাপারে তাকে সন্দেহ হয়নি। যার কথায় সে এতদিন বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল সেই ব্যক্তিটি অস্তিত্বহীন এটা জেনে সুজয় সেটা মেনে নিতে পারছিল না। সুজয় তার মোবাইল নেট অন করল এবং এই প্রথম ঈপ্সিতাকে অফলাইন দেখতে পেল। সে বাচ্চার মত কাঁদতে শুরু করে দিল। তার প্রেরণা, তার ভালোবাসা তাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে। তাকে বাস্তবে দেখা, তার হাত ধরা ও তাকে বিয়ে করার স্বপ্ন যেন নিমেষে ধুলোয় মিশে গেল। সে যেন তার সারা জীবনের আনন্দ হারিয়ে ফেলল। সে সারারাত ঘুমাতে পারল না। আর জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত যা সে ঈপ্সিতার সাথে কাটিয়েছিল সেগুলো যেন তার চোখের সামনে ভাসতে লাগল। তার আত্মহত্যা করার কথাও মাথায় এলো কিন্তু সে নিজের মনকে শান্ত করল। তার বিবেক যেন তাকে খোঁচা মেরে বলে উঠলো, "তুই একটা অস্তিত্বহীন ব্যক্তির জন্য নিজের জীবন শেষ করে দিতে প্রস্তুত কিন্তু যে বাবা-মা তোকে জন্ম দিয়ে বড় করল তার কথা কেন ভাববি না।"

পরের দিন সুজয় ভোরে ঘুম থেকে উঠল, মায়ের হাতে তার প্রথম salary দিয়ে প্রণাম করল। এরপর স্নান খাওয়া সেরে সে তার কাজের জন্য রওনা দিল। সুজয় জেনে গেছিল যে তার অলীক সঙ্গী আর তার জীবন সঙ্গী হতে পারবে না কিন্তু তবুও ঈপ্সিতার প্রত্যেকটি কথা, তার অনুপ্রেরণা সুজয়ের জীবনের দর্শনই বদলে দিয়েছিল। তার অলীক সঙ্গী সুজয়ের অবচেতন মনে একটা স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেল। সুজয় আর নিজেকে একা মনে করল না। তার অলীক সঙ্গী সর্বদাই তার মনে রয়ে গেল এবং সর্বদাই তার সাথে কথা বলতে লাগল।