Chokher Bali - 35 in Bengali Fiction Stories by Rabindranath Tagore books and stories PDF | চোখের বালি - 35

Featured Books
  • Split Personality - 93

    Split Personality A romantic, paranormal and psychological t...

  • One Step Away

    One Step AwayHe was the kind of boy everyone noticed—not for...

  • Nia - 1

    Amsterdam.The cobbled streets, the smell of roasted nuts, an...

  • Autumn Love

    She willed herself to not to check her phone to see if he ha...

  • Tehran ufo incident

    September 18, 1976 – Tehran, IranMajor Parviz Jafari had jus...

Categories
Share

চোখের বালি - 35

35

৩৫

বিহারী এতদিন মেডিকাল কালেজে পড়িতেছিল। ঠিক পরীক্ষা দিবার পূর্বেই সে ছাড়িয়া দিল। কেহ বিস্ময় প্রকাশ করিলে বলিত, "পরের স্বাস্থ্য পরে দেখিব, আপাতত নিজের স্বাস্থ্য রক্ষা করা চাই।"

আসল কথা, বিহারীর উদ্যম অশেষ; একটা-কিছু না করিয়া তাহার থাকিবার জো নাই, অথচ যশের তৃষ্ণা, টাকার লোভ এবং জীবিকার জন্য উপার্জনের প্রয়োজন তাহার কিছুমাত্র ছিল না। কালেজে ডিগ্রী লইয়া প্রথমে সে শিবপুরে এঞ্জিনিয়ারিং শিখিতে গিয়াছিল। যতটুকু জানিতে তাহার কৌতুহল ছিল, এবং হাতের কাজে যতটুকু দক্ষতালাভ সে আবশ্যক বোধ করিত সেইটুকু সমাধা করিয়াই সে মেডিকাল কালেজে প্রবেশ করে। মহেন্দ্র এক বৎসর পূর্বে ডিগ্রী লইয়া মেডিকাল কালেজে ভর্তি হয়। কালেজের বাঙালি ছাত্রদের নিকট তাহাদের দুইজনের বন্ধুত্ব বিখ্যাত ছিল। তাহারা ঠাট্টা করিয়া ইহাদের দুজনকে শ্যামদেশীয় জোড়া-যমজ বলিয়া ডাকিত। গত বৎসর মহেন্দ্র পরীক্ষায় ফেল করাতে দুই বন্ধু এক শ্রেণীতে আসিয়া মিলিল। এমন সময়ে হঠাৎ জোড় কেন যে ভাঙিল, তাহা ছাত্রেরা বুঝিতে পারিল না। রোজ যেখানে মহেন্দ্রের সঙ্গে দেখা হইবেই, অথচ তেমন করিয়া দেখা হইবে না, সেখানে বিহারী কিছুতেই যাইতে পারিল না। সকলেই জানিত, বিহারী ভালোরকম পাস করিয়া নিশ্চয় সম্মান ও পুরষ্কার পাইবে, কিন্তু তাহার আর পরীক্ষা দেওয়া হইল না।

তাহাদের বাড়ির পার্শ্বে এক কুটিরে রাজেন্দ্র চক্রবর্তী বলিয়া এক গরিব ব্রাহ্মণ বাস করিত, ছাপাখানায় বারো টাকা বেতনে কম্পোজিটারি করিয়া সে জীবিকা চালাইত। বিহারী তাহাকে বলিল, "তোমার ছেলেকে আমার কাছে রাখো, আমি উহাকে নিজে লেখাপড়া শিখাইব।"

ব্রাহ্মণ বাঁচিয়া গেল। খুশি হইয়া তাহার আট বছরের ছেলে বসন্তকে বিহারীর হাতে সমর্পণ করিল।

বিহারী তাহাকে নিজের প্রণালীমতে শিক্ষা দিতে লাগিল। বলিল, "দশ বৎসর বয়সের পূর্বে আমি ইহাকে বই পড়াইব না, সব মুখে মুখে শিখাইব।" তাহাকে লইয়া খেলা করিয়া, তাহাকে লইয়া গড়ের মাঠে, মিউজিয়ামে, আলিপুর-পশুশালায়, শিবপুরের বাগানে ঘুরিয়া বিহারী দিন কাটাইতে লাগিল। তাহাকে মুখে মুখে ইংরাজি শেখানো, ইতিহাস গল্প করিয়া শোনানো, নানাপ্রকারে বালকের চিত্তবৃত্তি পরীক্ষা ও তাহার পরিণতিসাধন, বিহারীর সমস্ত দিনের কাজ এই ছিল--সে নিজেকে মুহূর্তমাত্র অবসর দিত না।

সেদিন সন্ধ্যাবেলায় বাহির হইবার জো ছিল না। দুপুরবেলায় বৃষ্টি থামিয়া আবার বিকাল হইতে বর্ষণ আরম্ভ হইয়াছে। বিহারী তাহার দোতলার বড়ো ঘরে আলো জ্বালিয়া বসিয়া বসন্তকে লইয়া নিজের নূতন প্রণালীর খেলা করিতেছিল।

"বসন্ত, এ ঘরে ক'টা কড়ি আছে, চট্‌ করিয়া বলো। না, গুনিতে পাইবে না।"

বসন্ত। কুড়িটা।

বিহারী। হার হইল--আঠারোটা।

ফস করিয়া খড়খড়ি খুলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, "এ খড়খড়িতে ক'টা পাল্লা আছে?" বলিয়া খড়খড়ি বন্ধ করিয়া দিল।

বসন্ত বলিল, "ছয়টা।"

"জিত।" --"এই বেঞ্চিটা লম্বায় কত হইবে? এই বইটার কত ওজন?" এমনিকরিয়া বিহারী বসন্তর ইন্দ্রিয়বোধের উৎকর্ষসাধন করিতেছিল, এমন সময় বেহারা আসিয়া কহিল, "বাবুজি, একঠো ঔরৎ--"

কথা শেষ করিতে না করিতে বিনোদিনী ঘরের মধ্যে আসিয়া প্রবেশ করিল।

বিহারী আশ্চর্য হইয়া কহিল, "এ কী কাণ্ড, বোঠান!"

বিনোদিনী কহিল, "তোমার এখানে তোমার আত্মীয় স্ত্রীলোক কেহ নাই?"

বিহারী। আত্মীয়ও নাই, পরও নাই। পিসি আছেন দেশের বাড়িতে।

বিনোদিনী। তবে তোমার দেশের বাড়িতে আমাকে লইয়া চলো।

বিহারী। কী বলিয়া লইয়া যাইব।

বিনোদিনী। দাসী বলিয়া। আমি সেখানে ঘরের কাজ করিব।

বিহারী। পিসি কিছু আশ্চর্য হইবেন, তিনি আমাকে দাসীর অভাব তো জানান নাই। আগে শুনি, এ সংকল্প কেন মনে উদয় হইল। বসন্ত, যাও, শুইতে যাও।

বসন্ত চলিয়া গেল। বিনোদিনী কহিল, "বাহিরের ঘটনা শুনিয়া তুমি ভিতরের কথা কিছুই বুঝিতে পারিবে না।"

বিহারী। না-ই বুঝিলাম, নাহয় ভুলই বুঝিব, ক্ষতি কী।

বিনোদিনী। আচ্ছা, নাহয় ভুলই বুঝিয়ো। মহেন্দ্র আমাকে ভালোবাসে।

বিহারী। সে খবর তো নূতন নয়, এবং এমন খবর নয় যাহা দ্বিতীয় বার শুনিতে ইচ্ছা করে।

বিনোদিনী। বার বার শুনাইবার ইচ্ছা আমারও নাই। সেইজন্যই তোমার কাছে আসিয়াছি, আমাকে আশ্রয় দাও।

বিহারী। ইচ্ছা তোমার নাই? এ বিপত্তি কে ঘটাইল। মহেন্দ্র যে পথে চলিয়াছিল সে পথ হইতে তাহাকে কে ভ্রষ্ট করিয়াছে।

বিনোদিনী। আমি করিয়াছি। তোমার কাছে লুকাইব না, এ-সমস্তই আমারই কাজ। আমি মন্দ হই যা হই, একবার আমার মতো হইয়া আমার অন্তরের কথা বুঝিবার চেষ্টা করো। আমার বুকের জ্বালা লইয়া আমি মহেন্দ্রের ঘর জ্বালাইয়াছি। একবার মনে হইয়াছিল, আমি মহেন্দ্রকে ভালোবাসি, কিন্তু তাহা ভুল।

বিহারী। ভালোবাসিলে কি কেহ এমন অগ্নিকাণ্ড করিতে পারে।

বিনোদিনী। ঠাকুরপো, এ তোমার শাস্ত্রের কথা। এখনো ও-সব কথা শুনিবার মতো মতি আমার হয় নাই। ঠাকুরপো, তোমার পুঁথি রাখিয়া একবার অন্তর্যামীর মতো আমার হৃদয়ের মধ্যে দৃষ্টিপাত করো। আমার ভালোমন্দ সব আজ আমি তোমার কাছে বলিতে চাই।

বিহারী। পুঁথি সাথে খুলিয়া রাখি, বোঠান। হৃদয়কে হৃদয়েরই নিয়মে বুঝিবার ভার অন্তর্যামীরই উপরে থাক, আমরা পুঁথির বিধান মিলাইয়া না চলিলে শেষকালে যে ঠেকাইতে পারি না।

বিনোদিনী। শুন ঠাকুরপো, আমি নির্লজ্জ হইয়া বলিতেছি, তুমি আমাকে ফিরাইতে পারিতে। মহেন্দ্র আমাকে ভালোবাসে বটে, কিন্তু সে নিরেট অন্ধ, আমাকে কিছুই বোঝে না। একবার মনে হইয়াছিল, তুমি আমাকে যেন বুঝিয়াছ--একবার তুমি আমাকে শ্রদ্ধা করিয়াছিলে--সত্য করিয়া বলো, সে কথা আজ চাপা দিতে চেষ্টা করিয়ো না।

বিহারী। সত্যই বলিতেছি, আমি তোমাকে শ্রদ্ধা করিয়াছিলাম।

বিনোদিনী। ভুল কর নাই ঠাকুরপো, কিন্তু বুঝিলেই যদি, শ্রদ্ধা করিলেই যদি, তবে সেইখানেই থামিলে কেন। আমাকে ভালোবাসিতে তোমার কী বাধা ছিল। আমি আজ নির্লজ্জ হইয়া তোমার কাছে আসিয়াছি, এবং আমি আজ নির্লজ্জ হইয়াই তোমাকে বলিতেছি--তুমিও আমাকে ভালোবাসিলে না কেন। আমার পোড়াকপাল। তুমিও কিনা আশার ভালোবাসায় মজিলে। না, তুমি রাগ করিতে পাইবে না। বোসো ঠাকুরপো, আমি কোনো কথা ঢাকিয়া বলিব না। তুমি যে আশাকে ভালোবাস, সে কথা তুমি যখন নিজে জানিতে না, তখনো আমি জানিতাম। কিন্তু আশার মধ্যে তোমরা কী দেখিতে পাইয়াছ, আমি কিছুই বুঝিতে পারি না। ভালোই বল আর মন্দই বল, তাহার আছে কী। বিধাতা কি পুরুষের দৃষ্টির সঙ্গে অন্তর্দৃষ্টি কিছুই দেন নাই। তোমরা কী দেখিয়া, কতটুকু দেখিয়া ভোল। নির্বোধ! অন্ধ!

বিহারী উঠিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, "আজ তুমি আমাকে যাহা শুনাইবে সমস্তই আমি শুনিব--কিন্তু যে কথা বলিবার নহে, সে কথা বলিয়ো না, তোমার কাছে আমার এই একান্ত মিনতি।"

বিনোদিনী। ঠাকুরপো, কোথায় তোমার ব্যথা লাগিতেছে তাহা আমি জানি--কিন্তু যাহার শ্রদ্ধা আমি পাইয়াছিলাম এবং যাহার ভালোবাসা পাইলে আমার জীবন সার্থক হইত, তাহার কাছে এই রাত্রে ভয়-লজ্জা সমস্ত বিসর্জন দিয়া ছুটিয়া আসিলাম, সে যে কতবড়ো বেদনায় তাহা মনে করিয়া একটু ধৈর্য ধরো। আমি সত্যই বলিতেছি, তুমি যদি আশাকে ভালো না বাসিতে, তবে আমার দ্বারা আশার আজ এমন সর্বনাশ হইত না।

বিহারী বিবর্ণ হইয়া কহিল, "আশার কী হইয়াছে। তুমি তাহার কী করিয়াছ।"

বিনোদিনী। মহেন্দ্র তাহার সমস্ত সংসার পরিত্যাগ করিয়া কাল আমাকে লইয়া চলিয়া যাইতে প্রস্তুত হইয়াছে।

বিহারী হঠাৎ গর্জন করিয়া উঠিল, "এ কিছুতেই হইতে পারে না। কোনোমতেই না।"

বিনোদিনী। কোনোমতেই না? মহেন্দ্রকে আজ কে ঠেকাইতে পারে।

বিহারী। তুমি পার।

বিনোদিনী খানিকক্ষণ চুপ করিয়া রহিল--তাহার পরে বিহারীর মুখের দিকে দুই চক্ষু স্থির রাখিয়া কহিল, "ঠেকাইব কাহার জন্য। তোমার আশার জন্য? আমার নিজের সুখদুঃখ কিছুই নাই? তোমার আশার ভালো হউক, মহেন্দ্রের সংসারের ভালো হউক, এই বলিয়া ইহকালে আমার সকল দাবি মুছিয়া ফেলিব, এত ভালো আমি নই--ধর্মশাস্ত্রের পুঁথি এত করিয়া আমি পড়ি নাই। আমি যাহা ছাড়িব তাহার বদলে আমি কী পাইব।"

বিহারীর মুখের ভাব ক্রমশ অত্যন্ত কঠিন হইয়া আসিল--কহিল, "তুমি অনেক স্পষ্ট কথা বলিবার চেষ্টা করিয়াছ, এবার আমিও একটা স্পষ্ট কথা বলি। তুমি আজ যে কাণ্ডটা করিলে, এবং যে কথাগুলো বলিতেছ, ইহার অধিকাংশই, তুমি যে-সাহিত্য পড়িয়াছ তাহা হইতে চুরি। ইহার বারো-আনাই নাটক এবং নভেল।"

বিনোদিনী। নাটক! নভেল!

বিহারী। হাঁ নাটক, নভেল! তাও খুব উঁচুদরের নয়। তুমি মনে করিতেছ, এ-সমস্ত তোমার নিজের--তাহা নহে। এ সবই ছাপাখানার প্রতিধ্বনি। যদি তুমি নিতান্ত নির্বোধ মূর্খ সরলা বালিকা হইতে, তাহা হইলেও সংসারে ভালোবাসা হইতে বঞ্চিত হইতে না--কিন্তু নাটকের নায়িকা স্টেজের উপরেই শোভা পায়, ঘরে তাহাকে লইয়া চলে না।

কোথায় বিনোদিনীর সেই তীব্র তেজ, দুঃসহ দর্প। মন্ত্রাহত ফণিনীর মতো সে স্তব্ধ হইয়া নত হইয়া রহিল। অনেকক্ষণ পরে, বিহারীর মুখের দিকে না চাহিয়া শান্তনম্রস্বরে কহিল, "তুমি আমাকে কী করিতে বল।"

বিহারী কহিল, "অসাধারণ কিছু করিতে চাহিয়ো না। সাধারণ স্ত্রীলোকের শুভবুদ্ধি যাহা বলে, তাই করো। দেশে চলিয়া যাও।"

বিনোদিনী। কেমন করিয়া যাইব।

বিহারী। মেয়েদের গাড়িতে তুলিয়া দিয়া আমি তোমাকে তোমাদের স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছাইয়া দিব।

বিনোদিনী। আজ রাত্রে তবে আমি এখানেই থাকি।

বিহারী। না, এত বিশ্বাস আমার নিজের 'পরে নাই।

শুনিয়া তৎক্ষণাৎ বিনোদিনী চৌকি হইতে ভূমিতে লুটাইয়া পড়িয়া, বিহারীর দুই পা প্রাণপণ বলে বক্ষে চাপিয়া ধরিয়া কহিল, "ঐটুকু দুর্বলতা রাখো ঠাকুরপো! একেবারে পাথরের দেবতার মতো পবিত্র হইয়ো না। মন্দকে ভালোবাসিয়া একটুখানি মন্দ হও।"

বলিয়া বিনোদিনী বিহারীর পদযুগল বার বার চুম্বন করিল। বিহারী বিনোদিনীর এই আকস্মিক অভাবনীয় ব্যবহারে ক্ষণকালের জন্য যেন আত্মসংবরণ করিতে পারিল না। তাহার শরীর-মনের সমস্ত গ্রন্থি যেন শিথিল হইয়া আসিল। বিনোদিনী বিহারীর এই স্তব্ধ বিহ্বল ভাব অনুভব করিয়া তাহার পা ছাড়িয়া দিয়া নিজেই দুই হাঁটুর উপর উন্নত হইয়া উঠিল, এবং চৌকিতে আসীন বিহারীর গলদেশ বাহুতে বেষ্টন করিয়া বলিল, "জীবনসর্বস্ব, জানি তুমি আমার চিরকালের নও, কিন্তু আজ এক মুহূর্তের জন্য আমাকে ভালোবাসো। তার পরে আমি আমাদের সেই বনে-জঙ্গলে চলিয়া যাইব, কাহারো কাছে কিছুই চাহিব না। মরণ পর্যন্ত মনে রাখিবার মতো আমাকে একটা-কিছু দাও।" বলিয়া বিনোদিনী চোখ বুজিয়া তাহার ওষ্ঠাধর বিহারীর কাছে অগ্রসর করিয়া দিল। মুহূর্তকালের জন্য দুইজনে নিশ্চল এবং সমস্ত ঘর নিস্তব্ধ হইয়া রহিল। তাহার পর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বিহারী ধীরে ধীরে বিনোদিনীর হাত ছাড়াইয়া লইয়া অন্য চৌকিতে গিয়া বসিল এবং রুদ্ধপ্রায় কণ্ঠস্বর পরিষ্কার করিয়া লইয়া কহিল, "আজ রাত্রি একটার সময় একটা প্যাসেঞ্জার ট্রেন আছে।"

বিনোদিনী একটুখানি স্তব্ধ হইয়া রহিল, তাহার পরে অস্ফুটকণ্ঠে কহিল, "সেই ট্রেনেই যাইব।"

এমন সময়, পায়ে জুতা নাই, গায়ে জামা নাই, বসন্ত তাহার পরিস্ফুট গৌরসুন্দর দেহ লইয়া বিহারীর চৌকির কাছে আসিয়া দাঁড়াইয়া গম্ভীরমুখে বিনোদিনীকে দেখিতে লাগিল।

বিহারী জিজ্ঞাসা করিল, "শুতে যাস নি যে?" বসন্ত কোনো উত্তর না দিয়া গম্ভীরমুখে দাঁড়াইয়া রহিল।

বিনোদিনী দুই হাত বাড়াইয়া দিল। বসন্ত প্রথমে একটু দ্বিধা করিয়া, ধীরে ধীরে বিনোদিনীর কাছে গেল। বিনোদিনী তাহাকে দুই হাতে বুকের মধ্যে চাপিয়া ধরিয়া ঝরঝর করিয়া কাঁদিতে লাগিল।