Last Train in Bengali Horror Stories by Debojyoti Banerjee books and stories PDF | লাস্ট ট্রেন

Featured Books
  • स्वयंवधू - 31

    विनाशकारी जन्मदिन भाग 4दाहिने हाथ ज़ंजीर ने वो काली तरल महाश...

  • प्रेम और युद्ध - 5

    अध्याय 5: आर्या और अर्जुन की यात्रा में एक नए मोड़ की शुरुआत...

  • Krick और Nakchadi - 2

    " कहानी मे अब क्रिक और नकचडी की दोस्ती प्रेम मे बदल गई थी। क...

  • Devil I Hate You - 21

    जिसे सून मिहींर,,,,,,,,रूही को ऊपर से नीचे देखते हुए,,,,,अपन...

  • शोहरत का घमंड - 102

    अपनी मॉम की बाते सुन कर आर्यन को बहुत ही गुस्सा आता है और वो...

Categories
Share

লাস্ট ট্রেন

বিমল স্টেশনে পৌঁছে যখন ওর হাত ঘড়িটার দিকে তাকালো তখন ঘড়িতে রাত ন’ টা পনেরো বাজে ।
টিকিট কাউন্টারে বসে থাকা লোকটাকে বিমল জিজ্ঞাসা করল , আচ্ছা , দিল্লী যাবার ট্রেনটা কি চলে গেছে ?
লোকটা বলল , হ্যাঁ , এই মিনিট পাঁচেক আগে গেছে ।
বিমল একটু নিচু স্বরে জবাব দিলো , চলে গেছে … । তা দিল্লী যাবার আর অন্য কোন ট্রেন নেই ?
লোকটা একটু চুপ করে থেকে জবাব দিল , হ্যাঁ… একটা লাস্ট ট্রেন আছে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ । আপনার যদি কোন অসুবিধা না হয় তাহলে আপনি লাস্ট ট্রেনে যেতে পারেন । তবে সাবধান অনেক সময় লাস্ট ট্রেনে জার্নির অভিজ্ঞতা খুব একটা ভালো হয় না ।
বিমল বলল , না … না আমার কোন অসুবিধা নেই । আমি লাস্ট ট্রেনেই যাব । তাছাড়া আমার লাস্ট ট্রেনে জার্নির অভিজ্ঞতা আছে আমি অনেকবার লাস্ট ট্রেনে জার্নি করেছি ।
লোকটা বলল , তাহলে ভালো । বেস্ট অফ লাক ! আপনার যাত্রা শুভ হোক ।
বিমল বললো , ধন্যবাদ !
লোকটা বলল , আপনি ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করুন ট্রেনে এলে আপনাকে জানানো হবে ।
বিমল বলল , ঠিক আছে ।

টিকিট কাউন্টারের লাগোয়া ওয়েটিং রুম । বিমল বাইরে থেকে দেখলো ওয়েটিং রুমটা পুরো ফাঁকা । বিমল ওয়েটিং রুমের বড় কাঁচের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো । ওয়েটিং রুমে বসার জন্য পাঁচ-ছটা সোফা রাখা ছিল । তার মধ্যে থেকে একটা সোফা নির্বাচন করে বিমল তাতে বসলো এবং কাঁধ থেকে ব্যাগটা খুলে সোফার উপর রাখল । তারপর একটু বিশ্রাম নিয়ে ব্যাগ থেকে একটা ম্যাগাজিন বার করে বিমল পড়তে লাগলো ।
কিন্তু সময় যেন কিছুতেই কাটতে চায় না । বিমলের কাছে প্রতিটা সেকেন্ড যেন এক ঘন্টা বলে মনে হতে লাগলো । বিমলের একটা সময় পর একঘেয়েমি লাগতে শুরু করল । ম্যাগাজিনটাকে সোফার উপরে রেখে বিমল ওয়েটিং রুমের ভিতরে পায়চারি করতে লাগলো ।
এমন সময় ওয়েটিং রুমের কাঁচের দরজা ঠেলে জামা-প্যান্ট পড়া একজন বছর চল্লিশের ভদ্রলোক ওয়েটিং রুমের ভিতরে প্রবেশ করল । লোকটার হাতে একটা কালো রঙের ব্যাগ ছিল । লোকটা ঠিক বিমলের সামনে রাখা সোফাতে বসলো এবং পকেটে রাখা সিগারেটের বক্স থেকে একটা সিগারেট বার করে ধরালো ।
বিমল আগের মতন আবার সোফাতে গিয়ে বসলো এবং চোখের সামনে আবার ম্যাগাজিন টাকে মিলে দিলো । ম্যাগাজিনটা পড়তে পড়তে বিমল লোকটার দিকে একবার তাকালো । বিমল দেখল লোকটা ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে । বিমলের মনে হলো হয়তো লোকটা ওর সঙ্গে কথা বলতে চায় কিন্তু ওকে চুপচাপ দেখে লোকটা হয়তো ওর সাথে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না ।
ওয়েটিং রুমের ভিতর বেশ কয়েক মিনিট নিস্তব্ধতা বিরাজ করলো ।
তারপর ওয়েটিং রুমে নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে বিমল লোকটাকে জিজ্ঞাসা করল , আপনি কোথায় যাবেন ?
লোকটা সটান জবাব দিল , দিল্লী । ওখানে আমার ছেলে থাকে । এখানে আমি একটা বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করতাম । সবে মাত্র চারদিন হল রিটায়ার হয়েছি তাই আর এখানে থাকবো না ছেলের কাছে চলে যাচ্ছি । আর আপনি ?
বিমল উত্তর দিল , আমিও আপনারই মতন দিল্লী যাব।
লোকটা একটু মুচকি হেসে বলল , তাহলে আপনার আর আমার গন্তব্য স্থল একই ।
বিমল বলল , হুম … ।
তারপর বিমল লোকটাকে জিজ্ঞাসা করল , আপনার বাড়িতে কে কে আছে ?
লোকটা বলল , বাড়িতে ছেলে , বৌমা একটা নাতি আর একটা নাতনি ।
বিমল বলল , আর … আপনার স্ত্রী ?
লোকটা কয়েক সেকেন্দ চুপ করে থেকে বলল , আমার স্ত্রী বছর চারেক হলও ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছে ।
বিমল বলল , ওহ ! … আই অ্যাম সরি ! প্লিজ কিছু মনে করবেন না ।
লোকটা বলল , না … না ঠিক আছে । আপনি জানতেন না তাই জিজ্ঞাসা করেছেন । তা যাক গে আপনি বলুন আপনার বাড়িতে কে কে আছে ?
বিমল বলল , আমার বাড়িতে আমি , আমার স্ত্রী , আমার পাঁচ বছরের একটা ছেলে আর তিন বছরের একটা মেয়ে আছে ।
লোকটা বলল , খুব ভালো ।
বিমল লোকটা কে জিজ্ঞাসা করল , আপনার নামটা কি আমি জানতে পারি ?
লোকটা একটু হেসে বলল , নিশ্চয়ই ! আমার নাম রথীকান্ত দাস । আপনার ?
বিমল বলল , আমার নাম বিমল হালদার ।
এইভাবে কথা বলতে বলতে খুব কম সময়ের মধ্যে ওদের দুজনকার বেশ যানা শোনা হয়ে গেলো ।


কথা বলতে বলতে কখন সময় কেটে গিয়েছে বিমল বুঝতে পারেনি ।
ঠিক দশটা পঁচিশ নাগাদ টিকিট কাউন্টারের লোকটা ওয়েটিং রুমের কাঁচের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে ওদের দুজনকার উদ্দশে বলল , ট্রেন এসে গেছে চলে আসুন ।
বিমল লোকটাকে বলল , চলুন তাহলে বাকি কথা না হয় ট্রেনে যেতে যেতে বলা যাবে ।
বিমল ওর ব্যাগটাকে কাঁধে তুলে নিয়ে ওয়েটিং রুমের কাঁচের দরজা ঠেলে বাইরে বেরোলো । বিমল এর পিছন পিছন সেই লোকটাও ওয়েটিং রুমের কাঁচের দরজা ঠেলে বাইরে বেরোলো ।
টিকিট কাউন্টারের লোকটা বলল , তাড়াতাড়ি ট্রেনে উঠে পড়ুন । ট্রেন এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়াবে না ।
বিমল একটুও দেরি না করে ট্রেনে উঠে পড়ল । বিমলের সঙ্গে সেই লোকটাও ট্রেনে উঠল । বিমল দেখল ট্রেনটা পুরো ফাঁকা । ট্রেনের ভিতরে কেবলমাত্র ওরা দুজন । বিমল জানলার কাছের সিটে গিয়ে বসলো । লোকটাও ঠিক বিমলের সামনের সিটে গিয়ে বসলো ।
বিমলের বেশ খিদে পাচ্ছিল । বিমল ব্যাগ থেকে বিস্কুটের একটা প্যাকেট বার করে প্যাকেটটা ছিঁড়ে তার থেকে বিস্কুট বার করে খেতে লাগলো ।
বিমল বিস্কুটের প্যাকেটটার দিকে ইশারা করে লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলো , আপনি বিস্কুট খাবেন ?
লোকটা বলল , না … ।
বিমল বলল , ঠিক আছে । তাহলে আমি একাই খাই ।
ঠিক এই সময় বিমলের ফোনটা বেজে উঠল । ফোনটা বার করে দেখলো ওর ছোটবেলাকার বন্ধু সাগ্নিক ফোন করেছে ।
বিমল কলটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ফোনের ওপার থেকে সাগ্নিক জিজ্ঞাসা করল , তুই এখন কোথায় আছিস ? বাড়িতে তোর জন্য সবাই অপেক্ষা করছে ?
বিমল বললো , আমি এই সবে ট্রেনে উঠলাম ।
সাগ্নিক জিজ্ঞাসা করলো , কেনো ? তোর তো রাত ন'টায় ট্রেন ছিল । তা তুই এখন ট্রেনে উঠলি কেনো ?
বিমল বললো , রাস্তায় ট্রাফিকের জন্য স্টেশনে আসতে দেরি হয়ে যায় । যার জন্য রাত ন’ টার ট্রেন টা আমার মিস হয়ে গেছে । তাই অগত্যা সাড়ে দশটার এই লাস্ট ট্রেনটা আমাকে ধরতে হলো । তুই চিন্তা করিস না কাল ঠিক সময় আমি পৌঁছে যাব ।
সাগ্নিক বলল , ঠিক আছে, সাবধানে আয় । চল ঠিক আছে রাখছি ।
বিমল বলল , ঠিক আছে … রাখ ।
এই বলে সাগ্নিক ফোনটা কেটে দিল ।
বিমল দেখলো লোকটা এখন একটা গল্পের বই পড়ছে । বইটার সামনের প্রচ্ছদ দেখে বিমলের বুঝতে পারলো বইটা ভূতের গল্পের ।
লোকটাকে মনোযোগ সহকারে গল্পের বইটা পড়তে দেখে বিমল কৌতুহল মাখানো কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল , আচ্ছা রথীকান্ত বাবু আপনি ভূত বিশ্বাস করেন ?
লোকটা নিজের মুখের সামনে থেকে গল্পের বইটা সরিয়ে নিয়ে বিমলের দিকে একবার গুনগণে দৃষ্টিতে তাকাল এবং তারপর বলল , হ্যাঁ … বিশ্বাস করি ।
বিমল একটু হেঁয়ালি করেই লোকটাকে জিজ্ঞাসা করল , আপনি কখনো ভূত দেখেছেন ?
লোকটা বলল , না …… দেখিনি । কিন্তু তা বলে যে ভূতের অস্তিত্ব নেই এটা কখনোই বলা যায় না । এই জগতে যেমন মানুষের অস্তিত্ব আছে ঠিক তেমনি ভূতেরও অস্তিত্ব আছে । এক কথায় মানুষ থাকলে ভূত ও থাকবে ।
লোকটা উল্টে বিমলকে জিজ্ঞাসা করল , কেনো আপনি ভূতে বিশ্বাস করেন না ?
বিমল বলল , না । আমি ওই সব ভূত ফুতে বিশ্বাস করি না । ভূত বলে কিছু নেই ।
লোকটা বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে গম্ভীর গলায় বলল , আর …… ভূত যদি আপনার সঙ্গেই থাকে তাহলে তো আপনি বিশ্বাস করবেন ?
বিমল অবাক হয়ে বলল , মানে ?
এই বলে লোকটা নিজের মুখের উপর থেকে বইটা সরিয়ে নিল । লোকটার মুখটা দেখে বিমলের চোখ দুটো বিস্তারিত হয়ে গেল । লোকটার সারা মুখে রক্ত লেগে রয়েছে । থুতনির এক দিকটা কোনো ভারী জিনিসে আঘাত লাগার ফলে থেতলে গেছে । লোকটার সমস্ত কাপড় জামাতে রক্ত লেগে রয়েছে ।
এই ভয়ানক দৃশ্য দেখার পর বিমলের গলা যেনও শুকিয়ে গিয়েছে । বিমল অনেক চেষ্টা করার পরও ওর গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বেরোলো না ।
বিমল একটুও দেরি না করে ওর শিট থেকে উঠে সামনের অন্ধকার কামরার দিকে ছুটতে লাগলো । ছুটতে ছুটতে বিমল একটা ভারি জিনিসের সঙ্গে হোঁচট খেয়ে ট্রেনের কামরার অ্যালুমিনিয়ামের মেঝের উপর সজরে মুখ থুবড়ে পরল । বিমলের থুতনি ফেটে রক্ত বেরোতে লাগলো । বিমল পকেট থেকে রুমালটা বার করে থুতনির উপর চেপে ধরল । পকেট থেকে ফোনটা বার করে ফোনের টর্চটা অন করে পায়ের কাছে মারতে বিমলে গা শিউরে উঠল । ওর পায়ের কাছে পরে আছে একটা পচা – গলা আধ খাওয়া লাশ । বিমল সঙ্গে সঙ্গে দু – তিন পা পিছিয়ে গেলো । লাশটার মুখের উপর টর্চের আলোটা পরতে বিমল আঁতকে উঠল । লাশটা বিমলের খুবই চেনা ।
বিমল ভয়ে তোতলাতে তোতলাতে বলল , এতো সেই টিকিট কাউন্টারে বসে থাকা লোকটা ! তার মানে …।
বিমল লাশটার মুখের দিকে বেশ কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো । তারপর কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে যখন বিমল সামনের দিকে তাকাল । বিমল সামনে যা দেখল তাতে ওর হুঁশ উড়ে গেল । এতক্ষণ ট্রেনের যেই কামরাগুলো বিমল খালি দেখেছিল এখন সেই কামরাগুলোতেই অনেকটা কুকুরের মত দেখতে দানবাকার হিংস্র জন্তু রয়েছে । তারা প্রত্যেকেই বিমলের দিকে একটা হিংস্র চাওনিতে তাকিয়ে রয়েছে এবং থেকে থেকে বিমলের উদ্দেশ্যে গর্জে উঠছে ।
বিমল দেখল ওর থেকে কিছুটা দূরে সেই লোকটা দাঁড়িয়ে আছে ।
বিমল হাত জোড় করে লোকটাকে বলল , প্লিজ … আমায় ছেড়ে দিন ! আমাকে মারবেন না ।
লোকটা একটু হেঁয়ালি করে জবাব দিল , অনেকদিন পর একটা শিকার ধরেছি ! এত সহজে কি করে ছেড়ে দিই বলুন ?
বিমল আবার আগের মত হাত জোড় করে লোকটাকে বলল , দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন । আমাকে মারবেন না ।
লোকটার মুখে এবার একটা পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠল আর ঠিক তখনই সেই কুকুরের মত দেখতে দানবাকার হিংস্র জন্তুগুলো বিমলের দিকে ছুটে আসতে লাগল ।
বিমল কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না । ভয়ে তে বিমলের হাত পা থর থর করে কাঁপতে লাগলো । দেখতে দেখতে কুকুরের মত দেখতে সেই দানবাকার হিংস্র জন্তুগুলো বিমলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো । জন্তুগুলো তাদের ধারালো দাঁত দিয়ে বিমলের শরীরে কামড় বসাতে লাগলো এবং বিমলের শরীর থেকে মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে লাগলো ।
বিমল নিজেকে ওই হিংস্র জন্তুগুলোর আক্রোশ থেকে বাঁচনোর অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু বিমলের সকল চেষ্টা ব্যার্থ হলও । এত গুলো হিংস্র জন্তুর কাছে বিমল নিজেকে অসহায় বলে মনে করতে লাগলো । বিমল যন্ত্রনায় চিৎকার করে উঠল । কিন্তু এখানে বিমলের চিৎকার শোনার কেউ নেই । ট্রেন এর হুইশেলের শব্দে বিমলের চিৎকার যেনও মিলিয়ে গেলো ।



( সমাপ্ত )