Jaler opare - 1 in Bengali Fiction Stories by Mallika Mukherjee books and stories PDF | জলের ওপারে - 1

Featured Books
  • You Are My Choice - 41

    श्रेया अपने दोनो हाथों से आकाश का हाथ कसके पकड़कर सो रही थी।...

  • Podcast mein Comedy

    1.       Carryminati podcastकैरी     तो कैसे है आप लोग चलो श...

  • जिंदगी के रंग हजार - 16

    कोई न कोई ऐसा ही कारनामा करता रहता था।और अटक लड़ाई मोल लेना उ...

  • I Hate Love - 7

     जानवी की भी अब उठ कर वहां से जाने की हिम्मत नहीं हो रही थी,...

  • मोमल : डायरी की गहराई - 48

    पिछले भाग में हम ने देखा कि लूना के कातिल पिता का किसी ने बह...

Categories
Share

জলের ওপারে - 1

প্রকৃতি ও প্রাণীর আন্তঃসম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস

প্রবোধকুমার গোভিল

অনুবাদ : মল্লিকা মুখার্জী

 

জীবনের উত্তপ্ত বালুকাময় পথে

প্রবাহিত ঝর্ণার মতো

অতীতের রেখার নামে....!

 

ভূমিকা

হিন্দি সাহিত্যের জগতে বিখ্যাত লেখক প্রবোধকুমার গোভিল জি-র হিন্দি উপন্যাস “জল তু জলাল তু” এর বাংলা অনুবাদ ‘জলের ওপারে’ পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।

গল্পটির পটভূমি হ'ল পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ ও বিস্ময়কর নায়াগ্রা জলপ্রপাত। কানাডার অন্টারিও ও আমেরিকার নিউইয়র্ক রাজ্য আন্তর্জাতিক সীমান্তে নায়াগ্রা নদীর উপর অবস্থিত নায়াগ্রা জলপ্রপাত। মূলত তিনটি পাশাপাশি অবস্থিত ভিন্ন জলপ্রপাত নিয়ে নায়াগ্রা জলপ্রপাত গঠিত। এই তিনটি জলপ্রপাতের নাম: হর্স্‌শু ফল্‌স বা কানাডা ফল্‌স, আমেরিকান ফল্‌স এবং ব্রাইডাল ভিল ফল্‌স। সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান। Onguiaahra শব্দ থেকে নায়াগ্রা কথাটির উৎপত্তি, যার অর্থ জলরাশির বজ্রধ্বনি। 

নায়াগ্রা জলপ্রপাত পাহাড় থেকে নামেনি। সমতলের ওপর দিয়ে একটি খরস্রোতা নদী বইছে। যে মাটির ওপর দিয়ে এই খরস্রোতা নদীটি প্রবাহিত, সেখানে হঠাৎ করেই দুই দিকের মাটির মধ্যে এক বিরাট ফাঁক। নায়াগ্রার জল সমতল থেকে বিশাল ফাঁকের গহ্বরে চলে যাচ্ছে। এটাই সারা বিশ্ববাসীর দৃষ্টিতে এক মহাবিস্ময়ের বিষয়।

গল্পের নায়ক কিন্জান, শৈশবকালে অবাক চোখে নায়াগ্রার জলপ্রপাতটির দিকে তাকিয়ে থাকত। বিশাল জলপ্রপাত তাকে জাদুর মতো মুগ্ধ করেছিল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে মনস্থ করেছে যে একদিন সেই বিশাল জলপ্রপাতটি অতিক্রম করবে। এটাই তার একমাত্র স্বপ্ন হয়ে উঠল। কিন্তু জেনে মা রাস্বী খুব ভয় পেয়েছিল কারণ এই খেলায় পুত্রের মৃত্যু নিশ্চিত ছিল। ছেলের জিদ দেখে মা তাঁর সাহসী পুত্র কিন্জানকে নদীর তীব্র জলের মধ্যে পড়তে রোধ করতে, সমস্ত কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। 

ছোটবেলায় এক বালতি জলের জন্য এক মহিলার সাথে তার মায়ের লড়াইয়ের কথা রাস্বীর মনে ছিল। মহিলাকে তার মা হত্যা করেছিল, তাই তাকে বন্দী মায়ের সাথে কারাগারে থাকতে হয়েছিল, তাই রাস্বী জলকে ভয় পেতেন। তিনি নায়াগ্রা জলপ্রপাতটি বহুবার দেখেছিলেন তবে কখনও ভাবেননি যে এই জলপ্রপাতটি তাঁর ছেলেকে চাইবে। তিনি পুত্রকে এই উন্মাদনাটি ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। পুত্রকে থামাতে তিনি বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। 

রাস্বী কি নায়াগ্রা জলপ্রপাতটি অতিক্রম করার ছেলের আবেগকে আটকাতে পেরেছিলেন? কিন্জান কি তার স্বপ্ন পূরণ করেছিলেন? এটি জানতে আপনাকে এই উপন্যাসটি পড়তে হবে। আমি চেষ্টা করেছি, এই উপন্যাসের অনুবাদে মৌলিকতা যেন সুরক্ষিত থাকে। ভাষা উচিত শব্দ পায় এবং আমি মূল রচনার সাথে ন্যায় করতে পারি। আমি অনুবাদের জন্য পেরাফ্রেজ (paraphrase)বিকল্প মনোনীত করেছি, মূল কে কোনো ক্ষতি না করে, শব্দান্তরে অর্থপ্রকাশ করে, কৃতির নিকট যাবার চেষ্টা করেছি।

আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডঃ রানু মুখার্জী, আপনার মাধ্যমে আমি এই উপন্যাসটি বাংলায় অনুবাদ করার সুযোগ পেয়েছি। আমি আন্তরিকভাবে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। শ্রদ্ধেয় প্রবোধ গোভিল জি, আপনার উপন্যাসটি আমার হৃদয় ছুঁয়েছে। এই গল্পটি সময়ের, প্রকৃতির, পৃথিবীর, জলের, মায়ের বা ছেলের হতে পারে, গল্পটি খুব আলাদা বলে মনে হয়েছে। এই অনুবাদে, আমাকে বিশ্বাস করার জন্য আমি আন্তরিকভাবে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।

মল্লিকা মুখার্জী

গুজরাত, আমেদাবাদ

 

 

দুর্গম যাত্রার আগে 

 জলে অনেক ক্ষমতা আছে। সঠিক মরসুমে, এটি পাথুরে বীজের ভিতরে প্রবেশ করে একটি পূর্ণ গাছ বের করে। কয়েক ফোটা ছিটিয়ে জ্বলন্ত আগুন নিভিয় দেয়। স্বাতি নক্ষত্রে, ঝিনুকের মাধ্যমে এটি মুক্তা তৈরী করে।

 জল মানুষের জীবনের ওপর তার অধিকার কখনো ত্যাগ করেনি। কখনো খুব ভয় দেখিয়েছে, কখনো মানুষের সম্পর্ক মাটি করে দিয়েছে।

 এই উপন্যাসটিতে এমন একটি মহিলার গল্প রয়েছে, যে ছোটবেলায় এক বালতি জলের কারণে তার মাকে হারিয়েছ, তাই আমেরিকার বিশালাকার গর্জনকারী জলপ্রপাত 'নায়াগ্রা' যখন তার ছেলের জীবনের পিছনে জ্বলন্ত ঘূর্ণিঝড় লাগায়, তখন সে ভয় পেয়ে যায় এবং ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে।

 উপন্যাসটিতে এমন এক কিশোরের গল্প বলেছে, যে পৃথিবীর বৃহত্তম জলপ্রপাতের আকারে প্রবাহিত জলকে ঠিক উই ভাবে পান করার স্বপ্ন দেখেছিল, ঠিক যেমন পবনপুত্র হনুমান জ্বলন্ত সূর্যকে খেয়ে ফেলার দুঃসাহস করেছিলেন।

 এই উপন্যাসের গায়ে লাল-কালো-হলুদ দাগগুলিও তাদের সাথে যুক্ত, যারা প্রকৃতির জন্মচক্রের ক্ষিপ্রতা হারিয়ে হিমশিম খেয়েছে। হঠাৎ সেই কারণে তাদের ঐশ্বর্য নষ্ট হয়ে যায় এবং তারা 'আত্মা' হয়ে যায়।।

 উপন্যাসটি আপনাকে প্রশ্নও করবে যে জাতীয়তা কী? কোনও মহিলা যখন পিতা, স্বামী বা ছেলের সাথে তার ভাগ্য জড়িয়ে, নিজের সীমানা ছাড়িয়ে, একদেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়ান, তখন তার জাতীয়তা কে আবদ্ধ করে? নারীর ধর্ম কী? নারীর জাতি কী? এমনকি আপনাকে জানাতে চেষ্টা করবে যে নারী কী!

 আমার ভয় হ'ল এই তিক্ত প্রশ্নগুলিতে জড়িয়ে পড়ে আপনারা খুব কমই বিনোদন পাবেন। তবুও আমি অনুরোধ করছি পড়ার সময় আপনারা ক্লান্ত হয়ে পড়বেন না। এমনকি বাগানে যদি কোনো নির্দোষ কিশোরী প্রজাপতির পিছনে ছুটে দূর অবধি চলে যায়, তবে গোপনে লুকিয়ে তার রক্ষা করবেন, কোনও নিরীহ কিশোরকে তাকে অনুসরণ করে গোপনে চুমু খেতে দেবেন না। কোথাও নির্জনতায়, কোনো বাগানের কোমল ঘাসের উপর শুয়ে তরুণ হৃদয়রা যেন ঈশ্বরের পরীক্ষা না নেয়।

 এই উপন্যাসটি কেবল জলের গল্প নয়, এটি জল শুকানোর গল্পও। জল শুকিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে পৃথিবীও শুকিয়ে যেতে শুরু করে, মানুষও জ্বলতে শুরু করে। এবং তারপরে অনুশোচনার আগুনে জলও জ্বলতে শুরু করে। এই অবস্থায় মানুষের ইর্ষা তার বিবেককে বাষ্পে পরিণত করে দেয়। এই বাষ্পের মেঘটি যখন আকাশে ইশ্বরের কাছে পৌঁছে যায়, তখন অবাক ঈশ্বর আতঙ্কিত হয়ে নিচে তাকান। তিনি শুকনো নদী, নালা এবং পুকুর আবার পূরণ করেন। মাতাল যুবকরা আবার নির্বোধ মেয়েদের পেটে 'ডিম' দেওয়ার অজুহাত খুঁজে পান। সবাই গান করে, সবাই নাচে। জীবন চলে। আকাশ শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

 প্রকৃতি যখন মানুষকে সৃষ্টি করেছে, তখন তাদেরকে নিজের মতো করে সাজিয়েছে। নিজের মত গাছ, নিজের মত পাতা....নিজের মত ঝর্ণা, নোংরা জলের নির্গমনের ঝর্ণা, নবজাতকের যত্ন নেওয়ার জন্য দুধের ঝর্ণা, সম্পর্ক গড়ে তুলতে রক্তের ঝর্ণা, অন্তরের শুদ্ধির জন্য মনের কলুষতার ঝর্ণা।

 জলপ্রপাত সীমানা ভঙ্গ করে দেয়। তারা চূড়া থেকে পাদদেশে প্রবাহিত হয়। তারা আকাশ ও পৃথিবীর সীমানায় পরিণত হয়, দেশের সীমানায় পরিণত হয়, হয়ে ওঠে সমুদ্রের নোনা জলের চিরন্তন উৎস এবং ইতিহাসে লিপিবদ্ধ মহানায়কদের প্রত্যাশিত নৌকাগুলির মাস্তুল....! 

 

11 জুলাই, 2013      

প্রবোধকুমার গোভিল

Prabodh Kumar Govil,

 

জলের ওপারে

অধ্যায়-1

 সেই ঘরে এগারো জন ছিলেন, তবে তাঁরা পর্যটক ছিলেন এবং অন্যান্য দেশ থেকে এসেছিলেন। তাদের ভাষাও আলাদা ছিল এবং সম্ভবত তাদের চিন্তাভাবনাও।

তবে সবাই একইভাবে ভাবছিলেন। অধিকাংশ লোকের মতামত, এটি কেবল আত্মহত্যা, যে কোন উপায়ে তাদের আটকানো উচিত ছিল। কে জানে, হয়ত তাদের আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু এখন তাদের নাম, কোনো যুদ্ধে পরাজিত যোদ্ধাদের মতো  ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে।

আমেরিকার একটি ছোট শহর বাফেলোর একটি প্রধান রাস্তায় নির্মিত এই স্মৃতি জাদুঘরটি এমন লোকদের কাহিনী শোনাচ্ছে যারা একসময় বিশ্বখ্যাত জলপ্রপাত 'নায়াগ্রা ফল্স' এর শীর্ষ থেকে বয়ে নেমে আসার জন্য ভয়ানক প্রচেষ্টা করেছিল। তারা এই সাহসিক কাজটি থেকে কী লাভ করবে তা কেউ জানত না, তবে তাদের হাত থেকে কী ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, বিশ্ব এখন তা দেখছিল। বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার পর্যটক তাদের ছবির ওপর, সমবেদনা ও সমর্থনে স্বাক্ষর করেছেন এবং আন্তরিক বার্তা লিখেছেন। জল, যাকে জীবন অমৃত বলা হয়, তাদের জীবন কেড়ে নিয়েছে। তবে দোষটি জলের নয়, তাদের বিপজ্জনক ঝুঁকির ছিল।

তারা সবাই অবশ্যই ভালো সাঁতারু ছিল। কেউ কাঠের বাক্স তৈরি করে তাতে নিজেকে বন্ধ করে বজ্রের গতিতে উপর থেকে চলমান জলে ঝাঁপ দিয়েছে, কেউ প্লাস্টিকের নৌবাহিনী সাবমেরিন তৈরি করে, নিজেকে এটিতে বন্ধ করে ঝাঁপ দিয়েছে, কেউ প্যারাশুটের মত নিজের জন্য একটি শক্তিশালী স্বচ্ছ চেম্বার তৈরি করে, তাতেই জল-সমাধি নিয়েছে। তাহারা সবাই সাফল্য নয়, কিন্তু সাফল্যের স্বপ্ন ইতিহাসে রেকর্ড করেছে। জলপ্রপাত দেখতে আসা সকল পর্যটক অবশ্যই এখানে আসেন এবং তাদের সম্পর্কে জেনে অবাক হয়ে যান।

আমি যখন সেখান থে কে বের হয়ে এসেছি তখন আমি সেইসব লোকদের নিয়ে ভাবছিলাম যারা অমরত্ব লাভের জন্য জীবন জীবন দিয়েছিল। রাস্তার একটু সামনে, একটি বিশাল ভবন ছিল, যেখানে জলপ্রপাত দেখার টিকিটের জন্য একটি টিকিট-ঘর ছিল। এখানে পর্যটকদের জন্য একটি বড় বাজারও রয়েছে, যেখানে আকর্ষণীয় জিনিস বিক্রি হয়। এখানে অনেক দেশের সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। ছোট থেকে বড়, সবার মধ্য একটি বিস্ময়কর উৎসাহ দেখা যায়। এই বিল্ডিংটি যেই তিনপথে দাঁড়িয়ে আছে, এর আগে একটি রাস্তা ওয়াশিংটনের দিকে যাওয়ার প্রধান রাস্তার সাথে মিলে যায়। অন্যদিকে বিশাল খালের সমান্তরাল একটি পথ রয়েছে, যে ‘ঘূর্ণি’র কাছাকাছি হয়ে বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরম ক্যাম্পাস পর্যন্ত যায়। তৃতীয় পথটি জলপ্রপাতের দিকে নিয়ে যায়।

এখানে, আমি একটি বিশেষ জিনিস লক্ষ্য করেছি। সাধারণত, এত দ্রুত প্রবাহিত জলে কোন মাছের অস্তিত্ব পাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু মনোযোগ দিয়ে দেখার পরে, আমি জলের উপরে অনেক জায়গায় জাফরান বর্ণের তেঁতুল আকৃতির মাছ দেখতে পাই। প্রশস্ত বক্ষের যে নদী থেকে অগণিত জল এসে জলপ্রপাতের আকারে পড়ছিল, কোথাও খুব গভীর এবং কোথাও অগভীর। জলের প্রবাহের তীব্রতাও বিভিন্ন জায়গায় ছিল আলাদা। সম্ভবত এই জল ভূগর্ভস্থ পথ থেকে বেরিয়ে এসে দুটি বিশাল দেশের সীমানা গঠন করছিল। ওপারে  কানাডার মনোরম ভবনগুলি দৃশ্যমান ছিল।

নায়াগ্রা জলপ্রপাতের কাছাকাছি এই বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের কাছে কিছু যুবক গতকাল সন্ধ্যায়, তাদের ক্যামেরায় একটি ছবি তুলতে গিয়ে একটি গাছের পাতলা ডালে কি দৃশ্যটি ধরা পড়েছিল, হয়তো তারাও জানতে পারেনি। যাইহোক, ভ্রমণের সময় যুবক পর্যটকরা যে কোণগুলি ক্লিক করে তা বেশিরভাগ মুখের ফটোগ্রাফ। জনাকীর্ণ পর্যটন স্পট থেকে একে অপরের ক্যামেরায় ক্লিক হয়ে, কি যে কোথা হতে কোথা পৌঁছে যায়, জানা নেই। পরবর্তীতে এর মধ্যে কয়েকটি ছবি বিভিন্নভাবে সামনে এসে বিখ্যাত হয়। গাছের ওই ডালে একটি ছোট খড়ের ঘর ছিল। এটি পাখির দ্বারা তৈরি করা থাকলে বাসা বলা হত, তবে এটিকে ঘর বললেই হয় কারণ এটি মানুষের দ্বারা তৈরি হয়েছিল, পাখির দ্বারা নয়, কেবল সাজসজ্জার জন্য।

এটি খুব বিরল ছিল যে কোনও দর্শক এটি লক্ষ্য করবে, কিন্তু অজান্তেই এটি একটি ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়েছিল। কত লোক নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে প্রতিদিন এই পথটি ব্যবহার করত। আমি জানি না লোকেরা কোথা থেকে আসছে? নায়াগ্রা নদীর ঝরন্ত জলের এক ঝলক দেখতে প্রথমে একটি লিফট দিয়ে ভূগর্ভস্থ যেতে হবে, তারপরে, একটি জাহাজে বসে, রাজহাঁসের মত ঐশ্বর্য এবং গতি নিয়ে, ঢেউয়ের সহকারে এই অবর্ণনীয় ঝর্ণার মুখোমুখি হওয়া যায়। জলের বেগ এবং পরিমাণ দেখে লোকেরা সমুদ্রের মধ্যেই তৈরি একটি লোকের অনুভব করত। সেইজন্যই এই সীমাহীন জলের দর্শনের আগে বা পরে, লোকেরা সম্ভবত আশপাশে ঘুরে বেড়াতে ভালো বাসত। সেই সময়ে অনেকেই এই উদীয়মান-চলমান সমুদ্রকে পরিমাপ করার চেষ্টা করেছিল।

বলা হয় যে এই ধরনের জায়গায়, যেখানে মানুষের দেহ থাকতে পারেনা, ‘আত্মা' থাকতে পছন্দ করে। কথায় আছে যে কোটি কোটি মানুষ পৃথিবীতে আসা যাওয়া করে, কিন্তু পৃথিবীতে আসার পরে কিছু মানুষ বিভিন্ন কারণে এখান থেকে চলে যেতে পারেনা, হয়তো সুখ, দুঃখ, অবিচার, কৌতূহল, অলৌকিক ঘটনা,, দুর্ভাগ্য, সৌভাগ্য, সন্দেহ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণেই তারা পৃথিবীতেই থেকে যান। দেহটিকে তার প্রাকৃতিক অবস্থায় শেষ হয়ে মাটিতে মিলিয়ে যেতে হয়, তবে অনেক সময় আত্মা এই চক্র থেকে উঠে পৃথিবীতে থেকে যায় এবং অধরা শক্তি দিয়ে তার অসম্পূর্ণ বাসনা পূর্ণ করে। কেউ একে ভূত বলে, কেউ বলে আত্মা।

একটি পর্যটকের ক্যামেরায় ক্লিক করা একটি গাছের ডালে ঝুলন্ত ঘরের ছবি সবাইকে বিভ্রান্ত করে। এই ছবিটি সাধারণ ফটোগ্রাফ হিসাবে তোলা হয়েছিল, তবে এর সাথে উপস্থিত বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি হ'ল এটির রঙ এবং ছায়া প্রতিবারই আলাদা দেখায়।পর্যটক ছবিটি একটি স্টুডিওতে বিক্রি করেন। স্টুডিওটি এমন একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার অংশ যা বিশ্বজুড়ে একের পর এক বিজ্ঞাপনে আকর্ষণীয় ফটোগ্রাফ তৈরি করে এবং প্রচুর অর্থোপার্জন করে।

কয়েক মাস পর টার্কির এক ফলের ব্যবসায়ী তার বাড়ির কাছে একটি প্রিন্টিং প্রেসে এসেছিলেন। উদ্বিগ্ন মনে হয়েছিল ব্যবসায়ীকে। কিছুদিন আগে তার ছেলে পড়াশোনা শেষ করে দুবাই থেকে ফিরে এসেছিল। এখন পিতা এবং পুত্র মিলে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে তাদের রফতানি ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছেন। ফলের ব্যবসায়ী তার প্যাকিং উপাদানের নকশা সহ এটি মুদ্রণ করতে এসেছিলেন। প্রেস তাকে অনেক আকর্ষণীয় বক্সের নমুনা দেখায়। এই বক্সগুলিতে খড়ের তৈরি খুব সুন্দর একটি বক্সের নমুনা ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, টাটকা ফলগুলি পাখির বিশাল বাসাতে পেক করা হয়েছে। এই ভাবে প্যাক করা ফলগুলি প্রাকৃতিক এবং পরিবেশগত যত্নে রাখা বলে মনে হয়। শুধু তাই নয়, প্রিন্টিং প্রেসের মালিক জানিয়েছেন যে এই ডিজাইনটি একেবারে মূল, এর মডেলটি কোথাও উপলভ্য নয় কারণ প্রেসের দ্বারা পেটেন্ট করা হয়েছে। 

খড়ের ক্যানের এই নমুনাটি সেই ছবিটির ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছিল, জা আমেরিকার ভ্রমণের সময় এই ফলের ব্যবসায়ীর কন্যা নিজেই তুলেছিল। এই বাক্সটির বিশেষত্ব হ'ল এতে রাখা ফলগুলি গাছের ফলের মতো দেখাচ্ছিল, যেন তাদের সেখানেই জড়ো করে খড়ে মুড়ে রাখা হয়েছে। ব্যবসায়ী এই বাক্সটি খুব পছন্দ করেছেন। কিছু দিন পরে এটি বিশ্বজুড়ে পাঠানো ফলের বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাক্সটি দেখে মনে হচ্ছিল এটিতে টাটকা ফলের ঘ্রাণ রয়েছে।

বিশ্ব চলছে। এটি কেবল চলমান নয়, এর গতি প্রতিদিন চারগুণ বাড়ছে। ফলস্বরূপ, শরত্কালের পরে বসন্ত এবং বসন্তের পরে গ্রীষ্ম যখন ঠক্ঠক্ করলো, বাফেলোয় যাত্রীদের সংখ্যাও নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। বিদেশিদের আগমনের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে আমেরিকান এই শহরে ফলের ব্যবহারও বেড়েছে। পর্যটকরা যেখান থেকেই আসেন না কেন, তাদের এই দুর্দান্ত জলের দৃশ্যটি দেখতে আসতে হবে। নায়াগ্রা দেখতে আসলেই, দর্শনার্থীদের সেই সেই ভবনেও আসতে হবে, যেখান থেকে বুকিংয়ের পরে এই দুর্লভ জলপ্রপাতটি দেখার জন্য যেতে হয়। বিল্ডিংয়ের স্টোর এবং ক্যাফেটেরিয়া, পণ্য এবং মানুষে ভরা থাকে।

রাত দুই থেকে তিনটে নাগাদ একটি সুন্দর হলুদ ও সাদা লরির উপরের তলায় ফলের কার্টনগুলি রাখা হয়। তিনটি শ্রমিক অনেকক্ষণ অবধি লিফট থেকে ওই কার্টনগুলি বহন করে আনে। এইভাবে, বাফেলোর সেই ভবনে দিনরাত কাজ করা হয় যাতে যাত্রীদের আতিথেয়তায় কোনও ত্রূটি না হয়। এমনকি রাতে, পর্যটকদের চোখে লোভনীয় রঙিন আলো পুরো শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষত জলপ্রপাতের চারপাশে। বাগানটি জলপ্রপাতকে ঘিরে এমন এক ঝলক দেয়, মনে হয় যেন স্বর্গ থেকে ইন্দ্র টর্চ লাইট দিয়ে দেখেন যে আমার লোকের চেয়ে পৃথিবীতে আরও মনোরম দৃশ্য আছে কি?

উই বাফেলোয় এক রাতে, এক দম্পতি তাদের দুটি ছোট বাচ্চাকে নিয়ে একটি ভারতীয় রেস্তোঁরায় প্রবেশ করলেন। চারজনের কেউই রেস্তোঁরার সাজ দেখার আগ্রহী নন। সম্ভবত সকাল থেকে ঘোরাঘুরি করার কারণে ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত। দেখে মনে হচ্ছিল যে তারা তারাতারি খাবার খেয়ে, হোটেলের নিজের ঘরে ফিরে ঘুমোবে। ওয়েটারের রাখা মেনুতেও কেউ নজর দেয়নি। মা বাচ্চাদের মন বোঝেন, সম্ভবত তাই, বাবা কোনও হস্তক্ষেপ করেননি। মা সবার জন্য সাধারণ দক্ষিণ ভারতীয় খাবার অর্ডার করলেন। খাবার পেতে খুব বেশি সময় লাগেনি।

তারপরে একটি এমন ঘটনা ঘটে যে বাচ্চাদের বাবা-মা দুজনেই হতবাক হয়ে যায়। সাত বছর বয়সী ছেলেটি খাবারের প্লেটটি একদিকে সরিয়ে, জলে ভরা একটি বড় জগ হাতে তুলে, সরাসরি মুখ লাগিয়ে গুটাগাট জল খেতে শুরু করে দিল। তিনজন একসাথে চমকে উঠলো, কারণ পুত্র এতটা বোকা ছিল না যে হোটেলে বসে জগে সরাসরি মুখ লাগিয়ে জল খেতে পারে। তাছাড়া, সে একটি ভাল স্কুলের ছাত্র। তার স্বভাবও নষ্ট বাচ্চাদের মতো ছিল না। আশ্চর্য! এই ছোট্ট শিশুটি একটি নিঃশ্বাসে প্রায় তিন লিটার জল খেয়ে নিলো। তাঁর মা, বাবা ও বোন অবাক হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলেন। ওয়েটার আসার সাথে ছেলেটিকে দেখে অবাক হয়ে গেল এবং পুরো পরিবার লজ্জা বোধ করলো। তবে ওয়েটার ভেবেছিলেন ঘটনাটি আশ্চর্য হওয়ার চেয়ে বেশি বিনোদনমূলক। সে জগ হাতে নিয়ে দৌড়ে আবার জল আনতে গেল।

তবে ওয়েটার জল নিয়ে এলো তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে, বাবা-মা পুরো দৃশ্যটি বুঝতে পারার আগে ছেলের চোখ বন্ধ হয়ে হয়ে যায় এবং সে ঘুমিয়ে পড়ে। মা তখন ছেলেটিকে তার কোলে টেনে নিয়ে শুইয়ে দিলেন এবং তাকে আঁচল দিয়ে পাখা দিতে শুরু করলেন। ছোট্ট মেয়েটি হঠাৎ করে এই ঘটনাটি দেখে হতবাক হয়ে যায়। সে কখনও তার ভাইকে এভাবে জল খেতে দেখেনি।

খাবার এলো, কিন্তু পরিবার কাউকে কিছু না বলে, সেখান থেকে উঠে পড়ে। কেউ খায়নি। বিলটি দেওয়া হয়েছে, বাবা ঘুমন্ত ছেলেকে তাঁর কাঁধে নিয়ে যান। মা পুত্রকে জাগ্রত করার চেষ্টা করলেন, তবে পুত্র মনে হচ্ছিল গভীর নিদ্রায়। পরিবারটি যে হোটেলে ছিল, সে খুব বেশি দূরে ছিল না। তারা হোটেলে ফিরে এল। নিজের ঘরে পৌঁছে ছেলেকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হল। ছেলেটি গভীর ঘুমে ছিল, অন্য কোনওভাবেই তার শরীর খারাপ ছিলনা। তাকে নিশ্চিন্তে  ঘুমোতে দেখে, পরিবারের ভয় এবং আশ্চর্য কিছুটা হ্রাস হয়েছে, সাথে সবার খিদেও পেয়েছে। রাত আরও গভীর হয়ে উঠেছে।

মা কিছু ফল আনিয়ে নেবার  সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের কাছে কিছু জলখাবারের জিনিস  আগেই ছিল। খুব শীঘ্রই ওয়েটার একটি ছোট ট্রলি বহন করে ঘরে ঢুকল। তাতে জুসের গ্লাসের সাথে সুন্দর একটি বাক্সে কিছু ফল ছিল। ছোট মেয়েটি সেই সুন্দর বাক্সটি দেখে, খুশী হয়ে সঙ্গে সঙ্গে ট্রলির কাছে চলে এল। এর আগে সে এত সুন্দর বাক্স আর দেখেনি। দেখে মনে হচ্ছিল এটি কোনও বাক্স নয়, পাখির বাসা, খড়ের মধ্যে টাটকা ফল রয়েছে।

সম্ভবত সেই দিনটি সেই পরিবারের জন্য অবাক হওয়ার দিন ছিল। ছোট্ট মেয়েটি সেই ফলের বাক্সে হাত রাখার সাথে সাথে বাক্সটি হঠাৎ করে জ্বলতে শুরু করে। প্রথমে কিছু স্পার্কস বেরিয়ে এলো, তারপরে আগুন জ্বলল। মেয়ের বাবা দৌড়ে গিয়ে ওয়েটারকে ডাকার জন্য ইমার্জেন্সি কল সুইচ টিপল, এবং জ্বলন্ত বাক্স থেকে মেয়েটির হাত সরিয়ে দিল। মেয়ের বাবা-মা, দুজনেই ঘামে স্নান করে ফেললেন।

একটি আওয়াজের সাথে ঘরের দরজা খুলে গেল এবং দু'জন কর্মচারী ভেতরে এসে, তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নিভিয়ে দিয়ে, টেবিলের চারপাশে আগুন লাগার কারণটি খোঁজার চেষ্টা করল। কোনও কারণ না পেয়ে তারা একে অপরের দিকে তাকাতে তাকাতে লাগল। তারা যখন চলে যাচ্ছিল, বাচ্চাদের বাবা তাদের ট্রলিটি নিয়ে যাবার অনুরোধ করলেন। কিছুক্ষণ হুজুগের পর, পরিবারটি খাওয়া-দাওয়া না করেই শুয়ে পড়ে, কিন্তু বাবা-মা'র কারও চোখে ঘুম নেই। রাতের কোন সময় তারা ঘুমিয়ে পড়েছিল, জানেন না।

দুজনেই খুব সকালে উঠলেন। উভয় শিশুদেরও জাগিয়ে দিলেন। তবে রাতের ঘটনাগুলি কোনও সন্তানের উপর প্রভাব ফেলেনি। তারা স্বাভাবিক দিনের মতো উঠেছে। এমনকি ছেলেটির এখন মনেও নেই যে রাতে কী ঘটেছিল। বাবা-মা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা উচিত মনে করলেন না এবং তারা যথারীতি প্রস্তুত হয়ে বাইরে চলে গেল। যাই ঘটল, রাতেই মিটে গেল। শুধু বাবা-মায়ের মনে সেই ঘটনা রয়ে যায়।

পরিবারটির আজকে ফিরে যাবার কথা। তারা কয়েক ঘন্টার যাত্রা করে  আরও একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র দেখতে যাবেন। তারা যখন এখানে পৌঁছেছে তখন প্রায় দুপুর হয়ে গেছে। এই জায়গাটি একটি বড় হোটেলের মতো, চারপাশ থেকে খুব শান্ত লাগছিল। কিন্তু সেখানে প্রবেশের পরে শীঘ্রই জানা গেল যে এই জায়গায় মাটির নীচে একটি সম্পূর্ণ পাতাল লোক রয়েছে।

টিকিট নিয়ে দর্শনার্থীরা যখন লিফট থেকে নামল, তখন তারা অনুভব করলেন যে চোখের সাথে সাথে তাদের মনও শীতল হয়ে গেছে। মাটির নীচে রয়েছে অনেক প্রাচীন প্রাকৃতিক গুহা, নীচে বরফের মতো প্রবাহিত শীতল জল। এই গুহাগুলিতে মানবসৃষ্ট কিছুই ছিল না। এই সুন্দর জায়গাটি মাটির নীচে প্রবাহিত জলের দ্বারা কাটা শিলা ও পাথর দিয়েই তৈরি হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে পর্যটকরা এই দুর্দান্ত গুহাগুলিতে কাঠের ছোট ছোট নৌকোয় বসে আনন্দ উপভোগ করছিলেন। ভারতীয় পরিবারও এখানকার আনন্দে গতকালকের আজব ঘটনাগুলি ভুলে গিয়েছিল। এখানে শিলা ওপর জলের প্রহারে তৈরি বহু বিস্ময়কর জিনিস ছড়িয়ে আছে। স্থানীয় যুবক ও যুবকরা নৌকো চালাচ্ছিল, পর্যটকদের জন্য গাইডের কাজও করছিল।

পরিবারটি একটি মেয়ে দ্বারা চালিত একটি নৌকায় চড়ে। মেয়েটি তাদের অনেক কিছু বলল। যাত্রা শেষ হওয়ার সাথে সাথে, পরিবারটি যখন ফেরি থেকে নামতে শুরু করল, মেয়েটি দুটি বাচ্চাদের গালে আলতো চাপ দিয়ে তাদের নাম জিজ্ঞাসা করল। তাদের নামিয়ে দেবার পরে, দ্বিতীয় দফায় পর্যটকদের তুলে মেয়েটি আবার গুহায় চলে গেল।

লিফটে চড়ে যখন তারা ওপরে এলো, লিফটের দরজা খোলার সাথে সাথে বাচ্চারা তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে এলো। হঠাৎ সেই মেয়েটিকে সামনে পেয়ে দুজনে ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল। মেয়েটি উচ্চস্বরে চিৎকার করে তাদের ধাক্কা দিয়ে নিজে পিছনে সরে গেল। মা-বাবা বুঝতেই পারলেন না, কি হয়েছে। যে মেয়েটি তাদের নৌকায় করে এনেছিল সে আমেরিকান। নামার সময় সে নিজেই বাচ্চাদের সাথে কথা বলেছিল। তারপরে বাচ্চাদের সাথে দেখা হতেই কেন সে অপরিচিতের মতো চিৎকার করে উঠলো, তা বোঝা গেল না। এমনকি তার আচরণ শিষ্টাচারের বাইরেও, কারণ সে এই বাচ্চাদের ভয় পেয়েছিল বা ঘৃণা করেছিল? 

বাচ্চাদের বাবা-মা মেয়েটির চিৎকারে আতঙ্কিত হয়ে, মাথায় হাত দিয়ে পাশের একটি সোফায় বসে পড়লেন। বাচ্চারাও ভয়ে সরে গেল।এখন বাবা-মাও ভয় পাচ্ছেন যে তাদের বাচ্চাদের গত রাত্রি থেকেই কোন না কোনো সমস্যা হচ্ছে। তারা বিভ্রান্ত হয়। মায়ের চোখ থেকে অশ্রু বয়ে যাচ্ছিল। বাচ্চারা ছুটে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরল।

এরপরে একজন বৃদ্ধ মহিলা কাউন্টারের ওই পাশ থেকে বিদ্যুত বেগে ছুটে আসেন এবং বাচ্চাদের বাবাকে বলতে শুরু করেন যে তারা ভুল বুঝেছিলেন। তিনি বললেন যে তাঁর সংস্থায় দুজন যমজ বোন কাজ করে। একটি বোন তাদের নৌকায় নিয়ে গেল, বাচ্চারা তাদের চেনে। তবে এই  মেয়েটি, একই রকম দেখতে দ্বিতীয় বোন। বাচ্চারা তাকে চেনে বলে দেখা করতে যায় কিন্তু সে তাদের চিনতে পারল না, তাই সে নার্ভাস হয়ে গেল।

এই ব্যাখ্যার পরে বাচ্চাদের বাবা-মা প্রচুর স্বস্তি পেলেন। তারা বাচ্চাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আইসক্রিম পার্লারে চলে গেলেন। তারপরে সেই মেয়েটি বৃদ্ধ মহিলার কানে এমন কিছু বলল যা শুনে বৃদ্ধা প্রায় অজ্ঞান হয়ে পড়েন। আবারও একই রকম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মেয়েটি মহিলাকে নিয়ে সোফায় শুইয়ে দিল। আরও কয়েকজন কর্মচারী মহিলার দিকে ছুটে গেলেন। বাচ্চাদের বাবাও এই দৃশ্যটি দেখে আইসক্রিম পার্লার থেকে ছুটে এলেন। বাচ্চারা সেখানে মাকে আঁকড়ে ধরে আইসক্রিম খেতে থাকে। মহিলাকে সচেতন করার চেষ্টা শুরু হলো।

আধ ঘন্টা পরে, কাছের একটি রেস্তোঁরায়, বাচ্চারা, তাদের মা এবং বৃদ্ধা কিছু খাচ্ছিল এবং বাইরে লনে, বাচ্চাদের বাবা এবং মেয়ে একটি গুরুতর কথাবার্তায় জড়িয়ে পড়ে। মেয়েটি তাঁহাকে বলে যে সে আর তার বোন এখানে কাজ করে এবং বাফেলো শহরে থাকে। মেয়েটি বাচ্চাদের বাবাকে যা জানালো, শুনে বাবা ভিশন ভাবে ভয় পেলেন। মেয়েটি বলল যে বাচ্চারা অজানা বলে সে চিৎকার করেনি, বরং বাচ্চাদের কপালে সমস্যা দেখে সে চিৎকার করেছে। মেয়েটি বলল যে বাচ্চাদের দেখেই সে বুঝতে পেরেছিল যে কিছু 'আত্মা' তাদের প্রভাবিত করেছে এবং বাচ্চারা সেই শক্তির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

মেয়েটির দাদু বাফেলোতে এমন একটি ঐশ্বরিক শক্তির অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণা করছিলেন, এবং যেহেতু সে দীর্ঘ সময় ধরে সহায়ক ছিল, তাই সে এ সম্পর্কে কিছুটা জানে। বাচ্চাদের বাবা মেয়ের কথায় পূর্ণ বিশ্বাস করল। মেয়েটি পরামর্শ দিল যে তারা যেন এই বোনেদের সাথে বাফেলো যায় এবং তাদের দাদুর সাথে অবশ্যই দেখা করে। উইকএন্ডের কারণে পরদিন দুই বোনের বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল।

পরদিন সকালে তারা সবাই গাড়িতে করে বাফেলোর পথে রওনা হলো। পথিমধ্যে, দুই বোন তাদেরকে 'আত্মা' নিয়ে অনেক অদ্ভুত কাহিনী বলল। ভারতীয় পরিবার স্বপ্নেও ভাবেনি যে আমেরিকার মতো উন্নত দেশে তারা এ জাতীয় অদ্ভুত কাহিনী শুনতে পারবে যা তারা প্রাচীন ভারতীয় কিংবদন্তীতে শুনেছিল। তবে কয়েক দিন ধরে, তার বাচ্চাদের সাথে যে ঘটনাগুলি ঘটেছে, এখন তারা এই বিষয়গুলি কেবল একটি কল্পনা হিসাবে গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিল না। এমনকি তারা এই ঘটনাগুলি উপভোগ করতে পারেনি। যাইহোক, পুরো পরিবার ভ্রমণপথে দুটি শুভাকাঙ্ক্ষী স্থানীয় মহিলা পেয়ে খুশি হয়েছিল।

তারা সব ধরণের ভয় থেকে মুক্তি পেয়ে এখন নিজেদের মধ্যে নির্দ্বিধায় কথা বলছিল। উভয় বাচ্চা গাড়ির খোলা জানালা থেকে মনোরম আমেরিকান দৃশ্য উপভোগ করছিল। গাড়িটি একপাশে চলছিল এবং অন্যদিকে রাস্তা। কখনও কখনও রাস্তা দিয়ে মেঘ আসে, বাচ্চারা অনুভব করে যে পৃথিবী এবং আকাশের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে।

দুই বোনদের বয়সে মাত্র চার মিনিটের পার্থক্য ছিল। তবে ছোট বোন এই চার মিনিটের  পুরো মূল্য দিয়েছিল। বেশিরভাগ জিনিস বড় বোনই জিজ্ঞাসা করছিল, যার মনে বাচ্চাদের উপর অহেতুক চিৎকার করার অপরাধবোধ এখনও হেভি ছিল।

‘আপনি কি সিমীকে চেনেন?’ যুবতী বাচ্চাদের বাবাকে জিজ্ঞাসা করল, হঠাৎ উনি হতবাক হয়ে যান।

ছোট বোনটি মনোযোগ দিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে বাচ্চাদের বাবার মুখের দিকে তাকাল। কিন্তু কোনও উত্তর পেলনা।

‘সিমী গ্রেওয়াল ... ইন্ডিয়ান ও হলিউড অভিনেত্রী।’ এখন যুবতী আরও ক্লু দিল।

‘ওহ, হ্যাঁ... হ্যাঁ... তবে তিনি এখন আর সক্রিয় নন।‘ এই কথা শুনে দুই বোন হতাশ হল, বলল যে তারা ভারত সম্পর্কে মাত্র দুটি বিষয় জানে। একটি হ'ল সেখানে খুব অল্প জল এবং দ্বিতীয়টি সেখানে সিমী গ্রেওয়াল থাকেন, যার একটি সিনেমা তারা একবার দেখেছে।

বাচ্চাদের বাবা তাড়াতাড়ি বললেন, "জল কম নয়, দেশের কেবল একটি অংশ এমন যেখানে মরুভূমি রয়েছে। সেখানে বৃষ্টি হয় না, এবং চারদিকে বড় বড় বালুর ঢিবি রয়েছে।" ভারতের তিন দিকে সমুদ্র এবং এই দেশে অনেক বড় নদী রয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে তো…’ বাচ্চাদের বাবা তাঁর শৈশবে পড়া ভূগোলের সমস্ত জ্ঞান ব্যক্ত করে দিতে চেয়েছিলেন।

যুবতীরা আর কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়ার আগে, বাচ্চাদের মা স্বামীকে, তার তৃষ্ণার্ত হওয়ার ইশারা করলেন। সুযোগে পরিষেবা অঞ্চলটিও কাছাকাছি ছিল। মাঝখানে কফির জন্য গাড়ি থামানো হলো। সকলেই একটি ক্যাফেটেরিয়ায় প্রবেশ করল। ছেলের মা তাকে টয়লেটে নিয়ে যাবে বলে পিছনে থেকে গেলেন। এত বড় শোরুম দেখে ছোট মেয়েটির মনেও চাহিদা জেগে উঠল।

কথাবার্তা শুরু হলো এবং কফি এসে ঠাণ্ডা হয়ে গেল। তবে ছেলে এবং তার মা এখনও এখনও আসেনি। বাচ্চাদের বাবা এখন উঠে গিয়ে দেখার মনস্থ করলেন  কি হঠাৎ করে মা ছুটে এলেন। তিনি আতঙ্কিত হয়ে বারবার বলছিলেন ছেলে কোথায় চলে গেছে! সবাই হতবাক। কীভাবে এটি ঘটতে পারে? মা টয়লেটের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে আর ছেলেটা ভেতর থেকে উধাও? অন্য কোন দরজাও তো ছিল না। দু'টি মেয়েও আতঙ্কিত হয়ে তাকে দেখতে ছুটে গেল...

বড় বোন সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে ফোন করে জানায়। ছোট বোন বাচ্চাদের মাকে সামলে নিলো, যিনি এখন ধৈর্য হারিয়ে কাঁদছিলেন। মাত্র ছয় মিনিট পরে, বাইরে একটি পুলিশ গাড়ী জোরে শব্দ করে থামল।খবর পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ কীভাবে বজ্র গতিতে এসে পৌঁছেছিল তা ভাবার কারও সময় ছিল না, কারণ প্রত্যেকেই অবাক হয়েছিলেন যে ওই পরিবারের প্রিয় ছেলেটি পুলিশ অফিসারের সাথে গাড়িতে উপস্থিত ছিল। সবাই হতবাক। ফোন কলার মেয়েটির সাথে হাত মিলিয়ে পুলিশ অফিসার গাড়ীর দিকে তাকালেন, ছেলেটি  ফ্ল্যাট-মুখ নিয়ে গাড়ি থেকে নামল। মা ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। ছোট্ট মেয়েটি, যে এতক্ষণ কেবল উদাস ছিল, হঠাৎ কাঁদতে শুরু করে। তবে তার আনন্দের অশ্রু ভেবে কেউই তার কান্নাকে গুরুত্ত দিলেন না।

উভয় মেয়েই পুলিশ অফিসারের কথা শুনে জোরে হেসে উঠল। টয়লেটের ভিতরে মেরামতের কাজ চলছিল, যার ফলে পাইপগুলি পরীক্ষা করার জন্য একটি ট্রলি ছাদ থেকে ভিতরে নেমে এসেছিল। এখানে মা মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, অন্যদিকে ছেলেটি ট্রলিটি দেখে তার উপরে উঠে পড়েছিল। কিছু বুঝতে পারার আগেই তাকে ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ট্রলি-ম্যান তত্ক্ষণাত তাকে ক্যাম্পাসে টহলরত পুলিশদের হাতে তুলে দেয়। মেয়েদের হাসি সবাইকে রসিকতায় পূর্ণ করে তুলল।

সূর্যের উত্তাপ ধীরে ধীরে কমছে। দ্রুত চলমান গাড়ীর সবাই কিছুটা ঘুমিয়ে ছিল। বাচ্চাদের বাবা কী ভেবে আবার কথা বলা শুরু করলেন। সম্ভবত তিনি সিমী গ্রেওয়ালের কয়েকটি চলচ্চিত্রের কথা স্মরণ করেছিলেন। তিনি বললেন যে বিখ্যাত ভারতীয় পরিচালক খ্বাজা আহমদ আব্বাস মরুভূমিতে জলের অভাবকে 'দো বুঁদ পানী' ছবিতে চিত্রিত করেছেন, সেই ছবিতে সিমী গ্রেওয়াল অভিনয় করেছিলেন। নামটি শুনে উভয় মেয়েই খুব খুশি হল, কারণ তারা এই ছবিটি দেখেছিল। এই ছবিটি তাদের তাদের ভাবতে বাধ্য করেছিল যে ভারতে জলের সংকট রয়েছে।

তারা যখন বাফেলোতে পৌঁছেছে তখন রাত হয়ে গেছে। দুই বোন তাদের আর হোটেলে থাকতে দেয়নি। পরিবারটিও তাদের সাথে থাকতে নিরাপদও বোধ করেছিল। ভারতীয় পরিবার তাদের অতিথি হয়ে ওঠে। রাতের খাবারের পরে, বাচ্চারা খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিল, তবে তাদের বাবা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেয়েদের দাদুর সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন। ফোনে কথা হল এবং সকালে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া হলো । গভীর রাত অবধি কথা বলে তারা দুজনেই প্রচুর তথ্য পেয়েছিলেন। 

যুবতীরা, বাচ্চাদের বাবাকে তাদের দাদুর কাজের কথাও জানালো। দাদুর পুরানো জিনিস সংগ্রহ করার শখ ছিল। তিনি নিজেও বিভিন্ন ধরণের জিনিস তৈরি করতেন। তিনি কঠোর পরিশ্রম করে একটি সুন্দর বাসা তৈরি করেছিলেন, যা ওনার বাড়ির সামনের একটি গাছে সাজানো হয়েছিল। তিনি বলতেন, এটি একটি দুর্দান্ত অভিজাত বাসা, যার মধ্যে একদিন রঙিন ডিম স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসবে। তিনি সর্বদা সেদিনের জন্য অপেক্ষা করতেন। ডিমগুলি কোথা থেকে আসবে তা তাঁর ছাড়া আর কেউ জানতেন না। বাচ্চাদের বাবা কেবল এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে পেতে আগ্রহী ছিলেন, যা তার বাচ্চাদের উপর এসেছিল। তারা, দিনের ক্লান্তি ভুলে সকাল হওয়ার অপেক্ষা করতে শুরু করে। সকালে যুবতীদের দাদু এসে অতিথ পরিবারকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে এলেন। তবে পরের দিন দু'জন যুবতীকেই কাজে ফিরতে হবে।

দাদু একাই থাকতেন। ছোট দুই বাচ্চাদের দুর্দশার কথা শুনে তিনি ভারতীয় পরিবারকে কয়েক দিন তাদের সাথে থাকতে অনুরোধ করলেন। দম্পতি আনন্দের সাথে দাদুর কথা মেনে নিলেন, কারণ তারাও তাদের বাচ্চাদের উপর এই অদ্ভুত প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন। দাদুর আগ্রহে ছিল এমন চিকিত্সকের মতো, যিনি খুব ভাল জানেন যে রোগীকে ওষুধ ছাড়াও ঘনিষ্ঠতা প্রয়োজন। দুর দেশের দুটি নিষ্পাপ শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে এ জাতীয় ঘনিষ্ঠতা স্বাভাবিক ছিল।

শুধু বাচ্চারা নয়, তাদের মা-বাবাও দাদুকে পছন্দ করেছিলেন। কয়েক বছর আগে, তার পরিবার স্কটল্যান্ড থেকে এসে ব্রাজিলে স্থায়ী হয়েছিল, পরিবারে কেবল তিনি এবং তাঁর দুই নাতনিরা রয়েছে। পরে তিনি বাফেলোতে স্থায়ী হন। তিনি বিনা দ্বিধায় বলতেন যে তিনি শৈশবে হিংস্র সন্তান ছিলেন। সবাইকে দুঃখে দেখে আনন্দ পেতেন তিনি। তবে পুরানো জিনিসগুলোর প্রতি তার আকর্ষণ ছিল উন্মাদের স্তরে। প্রতিটি পুরানো জিনিসই তাঁর কাছে মনে হয় কথা বলার মতো একজন বয়স্ক ব্যক্তি।

তিনি বলতেন, যদি কোনও বৃদ্ধ লোক চল্লিশ বছর ধরে একটি লাঠি ব্যবহার করে, তবে বৃদ্ধের মৃত্যুর পরে, লাঠিটি অবশ্যই বৃদ্ধ ব্যক্তির সম্পর্কে অনেক কিছু বলবে, তবে এই শর্ত যে কেউ তার কথা বুঝতে পারে। একজন বৃদ্ধ মহিলার পুরানো চশমা  কেন তার চোখের গল্প জানবে না? তিনি শ্রোতাদের জিজ্ঞাসা করতেন। তাঁর টকটকে লাল চেহারা হাড়হীন প্রতিমার মতো লাগছিল। 

গ্রোভ সিটির নিকটে, তাঁর একটি দীর্ঘ ও প্রশস্ত জমি ছিল যা তিনি ‘বানানা রিপাবলিক সংস্থা’কে সস্তায় দিয়েছিলেন, কারণ সংস্থাটি তাকে নতুন বিল্ডিংয়ের বানাতে গিয়ে খনন করার সময় যে সমস্ত কফিন খুঁজে পাবে, তা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। দাদু বলতেন যে তাঁর কোষাগারে এখন বহু শতাব্দী আগে মারা যাওয়া বহু মানুষের আত্মা রয়েছে।

*******