Sultana, just for you! in Bengali Poems by Shafiqul Islam books and stories PDF | সুলতা,শুধু তোমার জন্য !

Featured Books
  • You Are My Choice - 41

    श्रेया अपने दोनो हाथों से आकाश का हाथ कसके पकड़कर सो रही थी।...

  • Podcast mein Comedy

    1.       Carryminati podcastकैरी     तो कैसे है आप लोग चलो श...

  • जिंदगी के रंग हजार - 16

    कोई न कोई ऐसा ही कारनामा करता रहता था।और अटक लड़ाई मोल लेना उ...

  • I Hate Love - 7

     जानवी की भी अब उठ कर वहां से जाने की हिम्मत नहीं हो रही थी,...

  • मोमल : डायरी की गहराई - 48

    पिछले भाग में हम ने देखा कि लूना के कातिल पिता का किसी ने बह...

Categories
Share

সুলতা,শুধু তোমার জন্য !

সুলতা, শুধু তোমার জন্য!

শফিকুল ইসলাম

জীবনের নিঃসঙ্গ বন্ধুর পথ চলতে চলতে

আকস্মিক তার সাথে দেখা।

অজানা, অচেনা

তবু যেন কত পরিচিত

যুগ জন্মান্তরের চেনা।

ভাবি এই বুঝি আমার ঠিকানা,

এখানেই পথচলা শেষ।

এখানেই বুঝি ভালবাসার ছায়ায় বিশ্রাম,

অবিরাম বিশ্রাম।

কিন্তু সব ভাবনা কি সত্যি হয়।

একদিন কাছে এসে কাছের মানুষ ও হারিয়ে যায়।

আর এই আমি আবার সেই আমি হয়ে যাই।

অসহায়, নিঃসঙ্গ, বিপন্ন।

লক্ষ্যবিহীন আবার শুরু হয় পথচলা।

যে যায় সে কি ফিরে আসে?

আসে না।

আসবে না এরকম কথা বলা যায়না।

আসতে ও তো পারে।

এটি যুক্তির কথা।

বাস্তবতা এই-

তার সন্ধান আর মেলেনি।

ফিরে আসবে একথা ভেবে কল্পনায় সুখ

পাওয়া ও যেতে পারে।

বাস্তবে নয়।

তখন বুঝতে পারি, বেশ বুঝতে পারি

সে আর ফিরবে না,

অনন্তকাল প্রতীক্ষার নামই বুঝি ভালবাসা।

উৎসর্গ

ভুল বুঝে চলে গেছ তবু

ভুলে যেতে আজও পারিনি,

যেদিন ভুল ভাঙবে তোমার,

হয়তো সেদিন আমি থাকবো না

পৃথিবীর কোনখানে ॥

সূচীপত্র

সুলতা, বহুদিন পর আজ ০৫

সুলতা, বাসনার ফাগুনে ০৭

সুলতা, এখনও সময় আছে ০৮

সুলতা তুমি নেই ০৯

সুলতা তোমার মতো ১০

সুলতা তোমার কাছে ১১

সুলতা এই জীবনে ১২

সুলতা, আজ তুমি কোথায় জানি না ১৪

নন্দিতা, এখন কোথায় থাকো তুমি ১৬

তোমার সব দাবীই ১৭

সুলতা, একদিন তুমি ছিলে তাই ১৮

সুলতা, যেদিন আমি আর ২০

সুলতা এই শহরের ২২

সুলতা-সু এভাবে ঝড়ের বেগে এসে ২৪

সুলতা এই শহরে পরিচিত এই বাড়ীতে ২৭

মাধবী শুধু একটিবার ২৯

সুলতা তুমি আমার হৃদয়ে ৩০

সুলতা তুমি শুধু ৩২

মাধবী আমি আজ একা বড় একা ৩৪

কতদিন পর পুরনো শহরে ফিরেছি ৩৫

সুলতা তোমার কথা মনে পড়লে ৩৭

সুলতা কোনদিন তোমায় দেখি না ৩৮

সুলতা, হঠাৎ চোখ মেলে পাশে তাকিয়ে ৩৯

আমি চলে যাচ্ছি সুলতা ৪০

সুলতা, দিনের আলোয় ৪১

সুলতা যখন তোমায় দেখি ৪২

সুলতা, আজ অবসরে ৪৩

সুলতা এখানে এলেই মন কেমন করে ৪৫

সুলতা একদিন যে মুখে ৪৬

মাধবী না বলে কয়ে ৪৭

সুলতা, তুমি চলে গেছ ৪৯

সুলতা তোমার কাছে যাবো ৫১

সুলতা এই বুকের ভেতর ৫২

সুলতা তুমি আমার ৫৩

সুলতা জীবনের আয়োজনে ৫৪

সুলতা সবার প্রিয় ঋতু বসন্ত ৫৫

সুলতা, বহুদিন পর আজ

সুলতা, বহুদিন পর আজ

তোমার উদ্বেগ-ভরা কোমল হাতের

স্পর্শ পেলাম-

আমার তপ্ত ললাটে

কোমল হাত ছুঁয়ে

তুমি পরখ করে নিলে আমার জ্বরের মাত্রা--

আর তোমার যাদু স্পর্শে

আমি যেন তখন থেকেই

একটু একটু করে আরোগ্য হয়ে উঠলাম।

সুলতা আমাকে তোমার

আঁচল তলে লুকিয়ে ফেলো

তোমার কোমল বুকের উম দাও -

দেখো পথ্যবিহীন কেমন দ্রুত

আমি নিরাময় হয়ে উঠি।

যখন সুস্থ হয়ে উঠার কথা ভাবি

তখন কোন অসুস্থতা ভরা উদ্বেগ

আমাকে পেয়ে বসে -

কেবলই মনে হতে থাকে

আমার সুস্থতা মানে

আরো কটি দিনের তোমার

সুমধুর সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হওয়া -

তোমার আন্তরিক উদ্বেগ-মিশ্রিত শুশ্রূষা

থেকে আমার অব্যাহতি।

তুমি তো জান না

তুমিহীন সুস্থ জীবনে আমি কতটা অসুস্থ -

তুমি জান না

তোমার সান্নিধ্য সুখের অভাবে

আমি কতটা অসুখী -

তুমি হীন আমার জীবনে

নেমে আসে মৃত্যুহীন মৃত্যু ॥

সুলতা, বাসনার ফাগুনে

সুলতা, বাসনার ফাগুনে

ধরা যদি নাই দেবে

আকাঙ্খার আগুনে কেন পুড়ালে এ হৃদয় -

ভালবেসে ঘর বাঁধে নীড়ে পাখি

আর নদী ছুটে যায় সাগরে -

আমি কেন তবে ভালবেসে

ঘর ছাড়া বিবাগী ?

আমাকে তুমি দিলে না ঘর

দিলে বর -

বিরহ বিধুর বিষাদ-স্মৃতি।

যন্ত্রণার অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাই

আর ভাবি কেবল ভাবি

বিরহের এ তিক্ত গরল শেষে

তোমার মিলন-অমৃত সুধা

আমি কি পাব না,

পাব না এ জীবনে ?

সুলতা, এখনও সময় আছে

সুলতা, এখনও সময় আছে

এখনও ফিরে আস এই বুকে

নইলে যে একটি হৃদয়ের হাহাকারে

এই পৃথিবী নিমেষে

একটি বিষণ্ন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে যাবে -

একটি হৃদয়ের দীর্ঘশ্বাসে

এই পৃথিবীর বাতাস

ভারী হয়ে যাবে বিপজ্জনক মাত্রায় -

একটি হৃদয়ের দুচোখের জলে

সাগর জলের উচ্চতা

বেড়ে গিয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করবে।

সুলতা, সুন্দর একটি পৃথিবীর জন্য

একটি হৃদয়কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য

ফিরে এসো, তুমি ফিরে এসো।

ভালোবাসা চিরদিনই অপরাজেয়,

এই ধ্রুব সত্যের সত্যতা রক্ষার জন্য

না হয় তুমি ফিরে এসো।

সুন্দর একটি পৃথিবীর নামে

আমি তোমাকে আহ্বান করছি -

একটি মুমূর্ষ হৃদয়কে বাঁচানোর নামে

আমি তোমাকে আহ্বান করছি -

একটি সুন্দর আগামীর নামে

আমি তোমাকে আহ্বান করছি -

তুমি ফিরে এসো -

আর কোনো দ্বিধা নয় -

চলে এসো তুমি

এই ভালোবাসাকে ভালোবেসে ॥

সুলতা তুমি নেই

সুলতা তুমি নেই

আজ আর এই ঘরে কেউ আসে না-

নষ্ট পাখির বাসার মতো

পরিত্যক্ত এই ঘর

বিষণ্ন শূন্যতা নিয়ে কাঁদে।

সুলতা তুমি নেই-

এ ঘরে আর কারো

কাঁকন-বিনিন্দিত KÚ¯^i

মুখরিত হয়ে উঠে না যখন তখন-

শুধু এক জমাট বাঁধা

অখন্ড নীরবতা

আকাশের মতো ঘিরে থাকে সারাক্ষণ

এই ঘর এই আঙিনা।

চঞ্চল বাতাস

জানালার পর্দা কাঁপিয়ে

দৃষ্টি ফেলে এ ঘরে-

তোমায় খুঁজে না পেয়ে

কোন সুদূরে হারিয়ে যায়

মুখ ভার করে।

জোছনা ঝরা রাতে

পূর্ণিমার চাঁদ উঁকি দিয়ে খুঁজে

তোমায় না পেয়ে চুপ করে চেয়ে থাকে-

সুলতা তুমি নেই ॥

সুলতা তোমার মতো

সুলতা তোমার মতো

এক দিন আমিও হারিয়ে যাব

যে পথ ধরে তুমি চলে গেছ

একদিন আমাকে ছেড়ে।

চেনা শোনার এই বৃত্ত ভেদ করে

আমিও হারিয়ে যাব এক দিন

তোমার পদচিহ্ন লক্ষ্য করে ;

যে পথে তুমি চলে গেছ

সে পথে পথে তোমায় খুঁজে

আমি কাটিয়ে দেব বাকিটা জীবন।

সুলতা যে দিন তুমি

আমায় ছেড়ে চলে গেলে

তখন থেকে এ ঘর

আমার কাছে কারাগার-

আমার সমস্ত দিন

কখন নিরবিচ্ছিন্ন অন্ধকার রাতে

পর্যবসিত হয়ে যায়

তুমিহীনতায় ॥

সুলতা তোমার কাছে

সুলতা তোমার কাছে

আমার অনেক অপরিশোধিত ঋণ--

তোমার রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলো

আমার জীবনে অমূল্য সম্পদ -

তোমার কাছে আমার অসীম দায়বদ্ধতা।

শত জনমের আঁখিজলে

এ ঋণ ফুরাবে না জানি।

তাই অশ্রুজলে তোমার স্মৃতিচারণ করি -

তোমার স্মৃতিই বয়ে বেড়াই

সারাটি জীবন

দুঃখিত, একাকী ॥

সুলতা এই জীবনে

সুলতা এই জীবনে

এ পথ সে পথ কত পথই তো ঘুরি দিনমান -

মানুষ দেখি, গাছপালা দেখি

সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত দেখি -

অবশেষে দিনের শেষে

তোমার কাছেই ফিরে আসি -

তোমার পথই যে আমার পথ -

তুমিই আমার চূড়ান্ত গন্তব্য।

ভালো-লাগার কথা যদি বল,

আর যদি বল

ফুল ভালো লাগে কিনা,

চাঁদ ভালো লাগে কিনা,

অকপটে বলব ভালো লাগে ;

তবে সব কিছুর আগে

তুমিই আমার প্রথম ভালো-লাগা

তুমিই আমার ভালোলাগার শেষ।

তোমাকে বাদ দিলে

ভালোলাগার মতো এই পৃথিবীতে

আমার আর কিছু নেই।

বেঁচে থাকার জন্য

আলো চাই, বায়ু চাই

আরো কত কিছু চাই -

তার ও আগে প্রথম তোমাকে চাই -

তুমিই আমার প্রাণ ভোমরা

কৌটোয় লুকিয়ে রাখা

রূপ কথার গল্পের মতো।

দিনমান আমি

সংগ্রামের কথা বলি,

বিপ্লবের কথা বলি,

ভালোলাগার কথা বলি,

ভালোবাসার কথা বলি -

সব কথার মাঝে তোমার কথাই

বারবার উঠে আসে -

অতঃপর তুমিই আমার

জীবনের শেষ কথা ॥

সুলতা, আজ তুমি কোথায় জানি না

সুলতা, আজ তুমি কোথায় জানি না

অথচ একদিন আমার জীবনে

তুমি ছিলে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ -

তোমাকে বাদ দিয়ে এ জীবন চলে

কোনদিন দিন ভাবতে ও পারিনি।

অথচ আজ তুমি পাশে নেই

আমি একা বেঁচে আছি -

আমি ভাবতে ও পারি না

এ কেমন বেঁচে থাকা।

যে তোমাকে ছাড়া একটা মুহূর্ত ও

আমার চলে না

সেই তুমি আজ নেই -

কত সকাল, দুপুর বিকেল গড়িয়ে গেল

একা একা কীভাবে কেটে যাচ্ছে সময়

নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য ঠেকে।

সুলতা তীর ছাড়া নদী

আকাশ ছাড়া মেঘ,

বাসা ছাড়া পাখিকে

কল্পনা করা যায় ?

যায় না।

সুলতা তেমনি তোমাকে ছাড়া

আমার অস্তিত্ব অকল্পনীয়

আমার জীবন দুর্বিষহ বিপন্ন।

তোমার ভালোবাসার আশ্রয়ে

এ হৃদয় একদিন মুক্তি খুঁজেছিল

আজ তুমি নেই -

বেদনার বিষণ্নতার কারাগারে

নির্জন অন্ধকার প্রকোষ্ঠে

আমি যেন অন্তরীণ

আত্মদন্ডিত বন্দী এক আসামি -

সুলতা তুমি এসে আমাকে

মুক্ত করে আলোতে নিয়ে যাও -

অনন্তকাল আমি তোমারই -

প্রতীক্ষায় আছি ॥

নন্দিতা, এখন কোথায় থাকো তুমি

নন্দিতা, এখন কোথায় থাক তুমি

কেমন আছো

কার ঘরের ঘরণী হয়ে,

জানি না, আমি জানি না।

কলেজের সেই করিডোরে, ক্যাম্পাসে

কিংবা সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠার ফাঁকে ফাঁকে

কতবার চোখে চোখ রেখেছি আমরা -

নীরব চোখে হয়েছে মনের কথা বিনিময়।

নন্দিতা, পৃথিবীর কোন দুই মেরুপ্রান্তে

আমরা এখন আছি, কেউ জানি না -

মাঝখানে শুধু ভালবাসার স্মৃতি

ধু ধু হয়ে আছে....

আজ কতদিন আমাদের দেখা নেই -

কালের টানে কক্ষচ্যূত নক্ষত্রের মতো

কে কোথায় ছিটকে পড়েছি জানি না।

সময় আমাদের মাঝে

করে চলেছে দুরূহ দূরত্ব রচনা -

সব গেছে জানি-সব

তবু রয়ে গেছে সেদিনের স্মৃতি

আজও অমলিন ॥

তোমার সব দাবীই

তোমার সব দাবীই

যখন আমি মেনে নিয়েছি নিঃশর্তে

তখনও কেন তুমি মিছেমিছি

করছ আমার বিরুদ্ধাচরণ,

নীরব অসহযোগ।

মাধবী এখনও শেষ সময়

অতিক্রান্ত হয়ে যায়নি -

এখনও হৃদয়ে আবেগ আছে

প্রীতি আছে,

আছে উষ্ণ অনুরাগ -

মাধবী এখনও ফিরে আসো

আমার ভালোবাসার বুকে ফিরে আসো।

এসো দুজনে মিলে

এ দ্বৈত ভালোবাসাকে অর্থবহ করে তুলি -

আমাকে বঞ্চিত করে

তুমিও পাবে না কিছুই বঞ্চনা ছাড়া।

এসো বন্ধু এসো

এই চাঁদ আর এই জোছনা

বিকশিত ফুলের হাসিকে

আমরা অর্থবহ করে তুলি -

আমাদের ভালোবাসার সঙ্গীতে ॥

সুলতা, একদিন তুমি ছিলে তাই

সুলতা, একদিন তুমি ছিলে তাই

এই বুকে স্বপ্ন ছিল

আজ তুমি নেই

এই বুকে তাই খাঁ খাঁ শূন্যতা।

যেমন খাঁচার পাখি বাসা ছেড়ে

পালিয়ে গেলে

শূন্যতার হাহাকারে ভরে থাকে

খাঁচার নীরব হৃদয়।

সুলতা তুমি চলে গেছ

এ হৃদয় আজ

নির্জন কোলাহল বিহীন

নিভৃত প্রান্তর।

যেমন করে ট্রেন চলে গেলে

ষ্টেশনের প্লাটফর্ম বিষণ্ন শূন্যতা নিয়ে

নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে -

ক্ষণিকের জন্য

উৎসব-সুলভ সব হৈচৈ থেমে যায়

সুলতা তেমনি আমার হৃদয়

উৎসব ভেঙে যাওয়া নীরবতায়

বোবা বেদনায় কাঁদছে -

সুলতা তোমার অনুপস্থিতিতে।

আজ আমার কবিতার প্রতিটি পঙক্তি

আমার শুকিয়ে যাওয়া অশ্রুবিন্দু -

সুলতা আমার নীরব দৃষ্টিতে

অশ্রুবিহীন নিঃশব্দ ক্রন্দন।

সুলতা আজ তুমি নেই

বিরহ ব্যথিত হৃদয়ে

কেবলই বেদনার পঙক্তি মালা লিখে যাই -

যদি তাতে কোনো সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়া যায়,

যদি তাতে ভুলে থাকা যায়

ক্ষণিকের জন্য হলেও

তোমাকে না পাওয়ার অন্তর্গত অন্তর্জ্বালা -

কবিতার আশ্রয়ে আমি

আজ মুক্তি খুঁজি ॥

সুলতা, যেদিন আমি আর

সুলতা, যেদিন আমি আর

থাকবো না এই পৃথিবীতে

নিখিল পৃথিবীর সব বিরহী আত্মার মাঝে

আমার বিরহ বেদনা

সেদিনও ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে বাজবে।

সেদিন ও নিঃশব্দে

ঝরে যাওয়া ফুলের মাঝে

রাতের আঁধারে সংগোপনে

ঝরে পড়া শিশিরের মাঝে

আমার না পাওয়ার বেদনা

নিঃশব্দে অনুরণিত হবে -

হঠাৎ ছুটে আসা দমকা হাওয়ার মাঝে

আমার সকরুণ দীর্ঘশ্বাস

আর অতৃপ্তির হাহাকার মিশে রবে -

ঘন শ্যাম-মেঘ-কজ্জল

শ্রাবণ আকাশ

আমার হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে

পাঠক চিত্তে ছায়া ফেলবে।

জানি সেদিনও তোমার

পাথররূপী পাষাণ চিত্ত

করুণার ঝর্ণাধারা হয়ে ঝরবে না।

সুলতা একদিন সব পেয়েও

তোমাকে না পাওয়ার কারণে

কিছুই পাইনি সারা জীবনে

এই অন্তর্গত বোধ নিয়ে যার জীবন কেটেছে,

জানি তার জন্য সেদিন ও

দুফোঁটা চোখের জল তুমি ফেলবে না।

তোমার মনের শুষ্ক মরুভূমিতে

সেদিন ও আমার জন্য

একটি ভালোবাসার ফুলে প্রতিকী মরুদ্যান

রচনা করবে না।

সুলতা, আকাশের মতো

একটি বিশাল ‘না’ হয়ে

সেদিনও আমার জীবনে তুমি চিহ্নিত হয়ে রবে ॥

সুলতা এই শহরের

সুলতা, এই শহরের

গগনচুম্বী প্রাসাদ, অট্টালিকা

মানুষের ভীড় অহেতুক কোলাহল,

অকারণ ব্যস্ততা,

সবই আছে, আগের মতই আছে-

শুধু তুমি নেই।

দিবসের ক্লান্তি শেষে এই শহরে ও রাত নামে,

ঝিমিয়ে পড়ে সমস্ত শহর,

বিশ্রামের ঘুমে নিমজ্জিত হয় নাগরিক জীবন

শুধু আমার দুচোখ তখন ও জেগে থাকে।

মানুষের ভীড়ে, জনতার কোলাহলে

কখন ও ছায়াচ্ছন্ন অন্ধকারে

শহরের গলি ঘুঁজিতে তোমাকে খুঁজি।

কোথায় হারিয়ে গেলে বলত কিছু না বলে-

কোথায় আমার সেই চেনা কন্ঠ ?

সমস্ত শহর আজ আশ্রয়কেন্দ্র

ঘোষিত হলে ও কেন আমি নিজেকে আজ

আশ্রয়হীন অসহায় ভাবি-

কোথায় সেই ভালবাসা-ঝরা মায়াভরা দৃষ্টি,

যার নীচে একদিন আমি নিজের বিবাগী মনের

অতলান্ত আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিলাম।

গমস্ত শহর আজ পাথর হয়ে

আমার বুক চেপে বসেছে তুমিহীনতায়--

এই শহরের রৌদ্রদগ্ধ কঠিন মৃত্তিকা

গো-গ্রাসে শুষে নিয়েছে নিমেষে

আমার চোখের জলের ধারা।

মুছে কি নিতে পেরেছে তোমার জন্য

এ অবুঝ হৃদয়ের অতৃপ্ত হাহাকার ?

এই শহরের বৃষ্টির জল মুছে নিয়েছে

তোমার ভাস্কর্যমন্ডিত কোমল পদচিহ্ন-

তবু এ অন্তরে তোমার পদধ্বনি

নিরন্তর প্রতিধ্বনি তুলে যাবে।

সুলতা তোমার শাড়ীর আচল

আমার বিজয় পতাকা।

সুলতা তোমার হৃদয় আমার স্বদেশ -

সুলতা তোমার মুখশ্রী আমার সংবিধান ॥

সুলতা-সু এভাবে ঝড়ের বেগে এসে

সুলতা-সু,এভাবে ঝড়ের বেগে এসে

ঝড়ের বেগে তুমি চলে যাবে -

তা হয় না সুলতা।

আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে

সহসা তুমি চলে যেতে চাইবে

কোন রূপ পূর্বঘোষণা ছাড়াই-

এ হয় না সুলতা।

এ বসতগৃহ বহির্বাটি

গৃহ প্রাঙ্গন সংলগ্ন উদ্যান -

এই ঘরের চারটি দেয়ালে

কড়ি কাঠে, চৌকাটে,মেঝেতে, বিছানায়

সর্বত্রই তোমার কল্যানী

কোমল হাতের ছোয়া,

তোমারই স্মৃতি বিজড়িত।

যেখানেই তুমি হাত রেখেছ

সেখানেই নান্দনিক ভিন্নমাত্রার

যোগ হয়েছে ;

যেখানেই তুমি হাত রেখেছ

সেখানেই ফুল ফুটেছে।

তুমি চলে গেলে অনাদরে অযত্নে

ঘরের কোনে লতিয়ে উঠবে

অবাঞ্চিত আগাছা ;

তুমি চলে গেলে সাজানো গোছানো

গৃহের আসবাবপত্রে জমবে ধুলাবালি ;

তুমি চলে গেলে

যেদিকে চোখ পড়বে

তোমার রেখে যাওয়া অজস্র স্মৃতি

চোখে পড়বে-

আর আমাকে পীড়িত করবে অষ্টপ্রহর।

প্রভাতে প্রথম জাগরণে

তোমার কল্যণী মুখ দেখে

আমরা দিবসের প্রাত্যহিক

কাজ কর্ম শুধু করেছি,

তোমার স্নেহ-ঝরা আচলে সস্নেহে

ললাটের ঘাম কতবার তুমি মুছিয়ে দিয়েছ।

আমাদের রোগ-জীর্ণ ললাটে

যখনই তুমি সস্নেহ হাত রেখেছ

মুহূর্তে আরোগ্য হয়ে গেছে

আমাদের দুরারোগ্য ব্যাধি।

তুমি চলে গেলে গোটা পৃথিবীটা

আমাদের অসুস্থ হয়ে পড়বে

তোমার শুশ্রষা বিহীন।

ঝড়ে বিধ্বস্ত সাজানো বাগানের মত

সব কিছু আমাদের এলোমেলো

তছনছ হয়ে যাবে।

সুলতা -

তুমি আমাদের চৈত্রের খরতাপে

শান্তিদায়িনী স্নেহ-শীতল ছায়াবৃক্ষ,

তুমি আমাদের অনৈক্যের সংসারে

সংহতির একটি বিশাল বৃক্ষ।

তুমি চলে গেলে কে আমাদের

আগলে রাখবে-

রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে

আমাদের ভীষণ অসুখ করবে।

সুলতা তুমি চলে গেলে

আমরা সহসা-ঝড়ে-বিধ্বস্ত

শাখাশ্রয়ী পাখির মত নীড়হারা হব,

ঘর ছাড়া হব

ঝড়-ঝঞ্জা কবলিত রাতে।

সুলতা তোমার বিদায় নেবার সময় হলে ও

আমাদের তোমায় বিদায় দেবার সময় হয়নি।

সুলতা আমাদের দুচোখে

যে প্রত্যাশার আলো জ্বলছে,

আমাদের কথা তুমি রাখবে

তুমি যাবে না,

তোমার বিদায় নেবার প্রস্তাব

ফিরিয়ে নেবেই তুমি আচমকা-

আমাদের সে প্রত্যাশার আলো

তুমি নিভিয়ে দিও না ॥

সুলতা এই শহরে পরিচিত এই বাড়ীতে

সুলতা এই শহরে পরিচিত এই বাড়ীতে

একদিন তুমি ছিলে,

একদিন এই বাড়ীর আঙিনায়

নুপুর-ঝংকৃত চরণে তুমি

ছুটাছুটি করেছ উৎসবে আনন্দে-

তোমার অজান্তে

তোমার যৌবনের সুবাস ছড়িয়ে গেছ চারপাশে।

আজ বদলে গেছে তোমার ঠিকানা,

এই শহরে আর তোমার চরণ পড়ে না,

বন্ধ গেট সারাদিন বন্ধই থাকে।

তবু কি যেন অজানা মোহের দুর্নিবার আকর্ষণে

দিবানিশি এ বন্ধ বাড়িতেই

আমি ছুটে আসি।

কেউ নেই জেনে ও

একাকী দাঁড়াই এসে এ বাড়ির নির্জন আঙিনায়-

সুলতা-সু বলে নাম ধরে ডাকি সন্তর্পনে

পুরনো অভ্যাসবশত।

জানি কেউ সাড়া দেবে না

আমার আহ্বান ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে

আমারই কাছে ফিরে আসবে ;

তবু প্রাণপণে ডাকি তোমাকে,

আর চীৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে

সুলতা, ঠিক হয়নি তোমার এভাবে চলে যাওয়া,

কোনরূপ পূর্ব ঘোষণা ছাড়া

এরকম অনুমোদনহীন প্রস্থান।

তুমি চলে গেছ কতকাল

তবু মনে হয় যেন

‘এই আসছি বলে’ আমাকে পথের পাশে

দাড় করিয়ে রেখে

তুমি চলে গেছ কতকাল-

আর অনন্তকাল ধরে আমি

দাঁড়িয়ে আছি পথপ্রান্তে

তোমারই অধীর প্রতীক্ষাতে ॥

মাধবী শুধু একটিবার

মাধবী, শুধু একটিবার

জানতে ইচ্ছে করে-

সোনালী রোদের দুপুর,

গোধূলীর মায়াবী আলো,

আর জোছনা-ভরা রাত

তোমায় কি ব্যাকুল করে না ?

চকিতে মনের পর্দায় কারো মুখ ভেসে উঠে না ?

আমার তো খুব মনে পড়ে তখন

তোমার কথা-

তোমাকে একান্তে কাছে পেতে ইচ্ছে করে।

সাগর সৈকতে বসে থেকেছি-

দেখেছি তরঙ্গের পর তরঙ্গ জাগে

আবার কোথায় মিলিয়ে যায়,

দূর আকাশ দিয়ে যখন

হংস মিথুন পাখায় পাখা মিলিয়ে

কোথা থেকে এসে কোন দিগন্তে হারায়-

আমি তখন অনিমেষ নয়নে চেয়ে থাকি

শুধু চেয়ে থাকি।

নিজেকে তখন বড় একা মনে হয়।

হারানো দিনের কথা ভেবে

দুনয়ন বারবার অশ্রুসজল হয়ে উঠে।

তোমাকে ভুলতে পারি না

কিছুতে পারি না ভুলতে।

সব কথা থেমে গেলে

তখন স্মৃতি কথা বলে-

আর আমাকে কাঁদায়।

তুমি নেই. তুমি নেই

আজ আমি একা, বড় একা ॥

সুলতা তুমি আমার হৃদয়ে

সুলতা তুমি আমার হৃদয়ে

একা গোপন গভীর ক্ষতচিহ্ন,

তুমি আমার জীবনে এক

অমীমাংসিত প্রশ্নবোধক চিহ্ন।

অনেক কষ্টের পথ পাড়ি দিয়ে

দুঃসহ একাকীত্বের

দুরতিক্রম্য পথ পেরিয়ে তবে

তোমার দেখা পেয়েছিলাম-

তারপর কোথায় হারিয়ে গেলে

আমার জীবন থেকে বহুদূরে।

বিশ্ব উজাড় করা মণি-মুক্তা ঐশ্বর্যে

কেউ এই ঘর ভরে দিলে ও

তোমায় হারানোর ক্ষতি

আমার পোষাবে না কিছুতে।

সুলতা তুমি আমার ঘুম-ভাঙানো

ভোরের পাখি-

আমার আধার রাতের শেষে প্রভাত সূর্য।

তোমায় হারানোর বেদনাময় অন্তরের

অন্তর্গত শূন্যতা

কিছুতেই পূরণ হবার নয়।

তোমার বিরহ বিচ্ছেদ ভারাক্রান্ত

কন্টকাকীর্ণ স্মৃতি

আজীবন আমাকে পীড়া দেবে।

এই ক্ষত চিহ্ন আমি আজীবন

সযত্নে লালন করেছি।

এতো আমার জীবনের অমূল্য সম্পদ,

অসম্ভব প্রাপ্তি-

এ ক্ষত চিহ্নই তো আমার জীবনে

তোমার স্মৃতির উদ্বোধক ॥

সুলতা তুমি শুধু

সুলতা তুমি শুধু

একটি শব্দ একটি নাম -

অনেকের কাছে হয়তো

নেহায়েত সাদামাটা তিন অক্ষরে

নির্মিত একটি শব্দ,

বিশেষ্য পদবাচ্য।

কে জানে কখন ঐ একটি নাম

শাব্দিক অর্থ ছাপিয়ে

অনির্বচনীয় ব্যঞ্জনায় কখন

আমাকে জড়িয়ে নিয়েছে।

কে জানে ঐ নামের সাথে

কখন অবিচ্ছেদ্য ভাবে

জড়িয়ে গেছে আমার জীবন

আমার অস্তিত্ব।

ঐ নামের উচ্চারণে

কেন রক্তে আমার ঢেউ খেলে যায়।

ঐ নামের ছোয়ায় আমি

মুহুর্তে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে যাই।

এক অজানা শিহরণে আমার

গমস্ত স্নায়ুতন্ত্র কেঁপে কেঁপে উঠে।

সুলতা ঐ নামের উচ্চারণে

আমার উষ্ণ হৃদয়ে বয়ে যায়

মুহূর্তে এক ঝলক সুবাতাস।

সুলতা, সুলতা আমার ইষ্টনাম-

যে নামের উচ্চারণমাত্রে

সঞ্জীবনী মন্ত্রের মত মুহুর্তে

মৃত্যুপথ যাত্রী আমাকে

ফিরিয়ে আনে জীবনের দিকে।

সুলতা এই একটি নাম

আমার জীবন থেকে যদি ঝরে যায়

তবে আমার জীবন মুহূর্তে

হেমন্তের পাতাঝরা রিক্ত শাখার

বিশাল অরণ্যের হাহাকার নিয়ে

মর্মর ধ্বনিতে বেজে উঠে।

জীবন চলার পথে

অজস্র জনের পাশে এসেছি ;

অনেক নতুন নতুন নাম জেনেছি,

আবার অনেক নাম ভুলে ও গেছি,

কোন কোন নাম অনেক দিন

স্মরণে থেকে ভরেছে হৃদয়-

তারপর সে নাম ও এক সময় ভুলে গেছি।

সুলতা একটি সে নাম

অবিনশ্বর অস্তিত্ব নিয়ে

এ হৃদয়ে চিরতরে মুদ্রাংকিত হয়ে গেছে ॥

মাধবী আমি আজ একা বড় একা

মাধবী আমি আজ একা বড় একা,

আমার প্রতিটি প্রহর, প্রতিটি ক্ষণ

কাটে `yt¯^‡cœi ভেতর।

বন্ধ ঘরে নিজেকে যখন আবিস্কার করি

একা

দুচোখ মেলে-

ছোট্ট ঘরটা দেখতে দেখতে চোখের নিমেষে

জনশূন্য বিশাল প্রান্তরে পরিণত হয়,

ঝড়ো বাতাসে মুহূর্তে বিস্তার লাভ করা

শ্রাবণ আকাশের মেঘের মত।

আর আমি একাকীত্বের যন্ত্রনায়

আর্ত চিৎকার করে উঠি।

সে আর্তনাদ ও এক সময় থেমে যায়।

যেমন করে বিশাল মরুতে

পথহারা পথিকের চীৎকার

মিলিয়ে যায়

আপন কানে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে হতে-

কেউ শুনতে পায় না।

মাধবী আমার জীবন আজ

আকাশের মত বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে

ঝুলে আছে তোমারই চোখের সামনে

তুমিহীনতায়।

আর তুমি নিষপ্রাণ পাথরের মত

নিষ্ঠুর নীরবতা নিয়ে

কেবলই আড়াল রচনা করে

আমার থেকে ক্রমশ দূর সরে যাচ্ছে।

আর আমি একা বড় বেশী একা হয়ে পড়ছি ॥

কতদিন পর পুরনো শহরে ফিরেছি

কতদিন পর পুরনো শহরে ফিরেছি-

বদলে গেছে অনেক কিছু,

চেনা-জানা দৃশ্যপট।

চেনাজানা অনেক মুখই আজ খুঁজে পাই না-

তার মাঝে তুমি ও একজন।

আহা, সেই চেনা-মুখ কখন ও কি ভোলা যায়-

যে মুখে আমি নিত্যদিন

আমার জীবনের প্রতিচ্ছবি খুজতাম।

গলির মুখে তোমাদের সেই ভাড়াটে বাড়িটা

আজ ও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে,

শুধু তোমরাই নেই।

শুনেছি এই শহরেই আছো,

তবে কোথায় আছো সঠিক কেউ জানে না।

বাড়ী বদলেছ, বদলেছ কি মন ?

আমাকে কি মনে রেখেছ

তোমার অনেক গুণগ্রাহী

সম্ভ্রান্ত অনুরাগীদের মাঝে ?

তোমাদের সেই পরিত্যক্ত বাড়ির

আঙিনায় যেয়ে দাড়াই নিঃশব্দে-

বন্ধ দরজায় হাত রাখি,

ইচ্ছে হয় কড়া নাড়ি-

আগের মত নাম ধরে ডাকি সন্তর্পণে

সুলতা....সু ;

অজানা আশংকায় হাত ফিরিয়ে নেই,

বন্ধ দরজা খুলে কেউ যদি বলে বসে

অজ্ঞতাবশত-

সুলতা নেই, সুলতা বলে এখানে

কেউ ছিল না।

বন্ধ দরজার ওপাশে তুমি আছো

এই বিশ্বাস বুকে নিয়ে ফিরে যাই -

আর এই শহরের অলিগলি চষে বেড়াই

একটি সেই হারানো প্রিয় মুখের খুঁজে ॥

সুলতা তোমার কথা মনে পড়লে

সুলতা তোমার কথা মনে পড়লে

আমার রোদ উঠা প্রথম সকাল

দেখতে দেখতে বিষণ্ন বিকেল হয়ে যায়

কেন বলত ?

আর বারেবারে তোমার কথা কেন মনে পড়ে

আর কেন মনে পড়ে।

আর আমার উষার উদয় আকাশের

রাঙারবি কখন অস্তরাগ রঞ্জিত

পশ্চিমাকাশের গোধূলির সুর্য হয়ে যায়

কেন বলত ?

সুলতা, তোমার কথা মনে পড়লে

আমার সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপ

কেন মুহূর্তে শুষ্ক বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে যায়

আমারই চোখের সামনে

কেন বলত ?

সুলতা, তোমার কথা মনে পড়লে

রক্তবর্ণ শিমুল পলাশ অশোক

কখন আমার ক্ষতবিক্ষত হৃদপিন্ড হয়ে

লাল বর্ণ রক্ত ঝরায় -

কেন বলত ?

আর তোমাকে মনে পড়ে,

বারবার তোমাকেই মনে পড়ে

কেন বলত ?

সুলতা কোনদিন তোমায় দেখি না

সুলতা কোনদিন তোমায় দেখি না

সিঁড়িতে তোমার চঞ্চল পদধ্বনি শুনিনা

কতকাল বাজে না তোমার কাকনের রিনিঝিনি

আমার অন্তরে।

এই জনপদ, লোকালয়ে, মানুষের ভীড়ে

একাকী অসহায় আমি ভেসে বেড়াই

শ্রাবন আকাশের ছিন্নমূল মেঘমালার মত

ঠিকানাবিহীন।

সুলতা কতদিন তোমার

মায়াভরা মুখখানা দেখিনা,

জীবনের অন্ধকার আকাশে

মুর্ত একখানি আশার মত

কতদিন তোমার চাঁদ মুখ ভাসে না

এ হৃদয় গগনে।

সুলতা এক নিরবচ্ছিন্ন

অমাবস্যার ঘোরে

আচ্ছন্ন প্রহর আমার কাটে

তুমিবিহীন অন্ধকারে।

শ্রীহীন এ ঘর

তোমার রূপের আলোয় উদ্ভাসিত করে

তুমি ফিরে এসো আমার এদীন কুটিরে -

নিষপ্রদীপ আমার এ ঘরে

তখন আর আলো জ্বালাবার

প্রয়োজন হবে না ॥

সুলতা, হঠাৎ চোখ মেলে পাশে তাকিয়ে

সুলতা, হঠাৎ চোখ মেলে পাশে তাকিয়ে

যখন আবিষ্কার করি তুমি পাশে নেই

ভিড়ের মধ্যে ও আমি একা হয়ে যাই-

নিমেষে আমার পারিপার্শ্বে

জনশূন্যতায় হাহাকার করে।

মনের খেয়ালে ছোট্ট নদীটা

পাড়ি দিতে গিয়ে হঠাৎ যখন চোখে পড়ে

শূন্য নৌকায় তুমি নেই-

ছোট্ট নদীটা তখন নিমেষে

অন্তহীন মহাসাগর হয়ে যায়-

আমি তখন কোন কুল কিনারা খুঁজে পাই না।

অন্তহীন পথ পেরিয়ে

পথপ্রান্তে এসে হাত বাড়িয়ে

তোমার হাতটি ধরতে যেয়ে

যখন তোমার হাতটি খুঁজে পাই না-

তখন মনে হয় আরো কত পথ যেন

এখন ও চলার বাকী....

কর্মক্লান্ত প্রহরে

কখনও ক্ষণিকের অবসরে

যখন মনে পড়ে

আমার জীবনে তুমি নেই-

তখন সমস্ত জীবনটাই

আকাশের মত বিশাল একটা

প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে

ঝুলে থাকে আমার সামনে ॥

আমি চলে যাচ্ছি সুলতা

আমি চলে যাচ্ছি সুলতা

চলে যাচ্ছি

ঝলমল আলোয় উদ্ভাসিত এই রঙ্গমঞ্চ ছেড়ে-

সকলের অজ্ঞাতসারে নীরবে নিঃশব্দে ;

যবনিকার অন্তরালেই শুধু নয়

তারও থেকে দূরে আরো বহুদূরে-

এই চেনা জনপদ এই লোকালয় ছেড়ে।

‘শুধু তুমি সুখে থেকো

শুধু তুমি সুখে থেকো’

এই শেষ সংলাপটুকু আবৃত্তি করতে করতে।

বিদায় বন্ধু বিদায়-

জীবনের মাঝখানে এইখানে এই রঙ্গমঞ্চে

তোমার আমার কত সংলাপ

অন্তরঙ্গ এই মেলামেশা

সহ-অবস্থান -

ভুলে যেও বন্ধু, মনে রেখ না।

জানি এখনও তোমার অনেক দৃশ্য

অভিনীত হবার বাকী-

তোমাকে তাই রেখে গেলাম।

জানি আজকের এই নাটকের কল্পকাহিনী শেষে

যখন জীবনের মূল কাহিনীতে

তুমি ফিরে আসবে-

ব্যাকুল হয়ে খুঁজবে আমাকে-

তখন আমি তোমার থেকে বহুদূরে

আরো দূরে চলে গেছি....

তোমাকে মুক্তি দিয়ে চলে গেছি চিরতরে ॥

সুলতা, দিনের আলোয়

সুলতা, দিনের আলোয়

যেমন এই পৃথিবীর

সুন্দর দৃশ্যাবলী চোখে দেখি,

তোমার রূপের আলোয় তেমনি

আমার জীবন সুন্দর হয়ে

ধরা দেয় আমার জীবনে।

সুলতা, তুমি কি দেখেছ

চৈত্রের খা খা রোদ্দুরে শুকিয়ে যাওয়া প্রান্তরের

অনার্দ্র রোদন ?

তুমি কি শুনেছ বোবা পাথরের

অশ্রুবিহীন নিঃশব্দ ক্রন্দন ?

তোমাকে হারানোর

বিরতিহীন বেদনায় বিচ্ছেদে

আমার হৃদয় আজ

চৈত্রের শুষ্ক প্রান্তর সুলতা,

আমার হৃদয় আজ বোবা পাথর।

সুলতা আশাহীন ভাষাহীন

এই জীবনে

তুমি ভিন্ন আমার মুক্তি নেই ॥

সুলতা যখন তোমায় দেখি

সুলতা যখন তোমায় দেখি

তত আরো দেখার সাধ জাগে।

কখনও ভাবি তোমার উপমা

একটি সদ্য প্রস্ফুটিত লাল গোলাপ,

কখনও ভাবি পূর্ণিমার জোছনার সাথে

তোমার রূপের সাদৃশ্য-

আবার পর মুহূর্তে মনে হয় ভুল

তোমার উপমা শুধু তুমি ;

তুমি আছো সব সৌন্দর্য়ের মাঝখানে

সৌন্দর্য়ের রাণী হয়ে সগৌরবে

মহিয়সী ;

অপরাজিত, অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

চাঁদের রূপ

সে যে সূর্যের ধার করা আলোর ঝলক-

তাই কি করে চাঁদের সাথে

চলে তোমার তুলনা।

তোমার রূপের আলোয়

আমার বিশ্বভূবন উদ্ভাসিত-

তুমি ছাড়া আমার সবই অন্ধকার ॥

সুলতা, আজ অবসরে

সুলতা আজ অবসরে

তোমার কথাই কেন জানি মনে পড়ছে

বারবার....

সুলতা তুমি মিশে আছো

আমার সত্তায়, অস্তিত্বের ভাজে ভাজে

আমার শিরায় উপশিরায়, প্রতিটি রক্ত কণিকায়

অবিচ্ছেদ্যভাবে।

আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে তুমি আছো।

পৃথিবীর সব কোলাহল যখন থেমে যায়-

তখনই তোমার নিঃশব্দ পদধ্বনি

বেজে উঠে আমার অন্তরে।

আমার একা ঘরে ঘরময় বাতাসে

আমি পাই তোমার অস্তিত্বের ঘ্রাণ-

চাদের মত তোমার রূপের আলোয়

প্রতিফলিত হয়ে এই পৃথিবী

অলৌকিক সৌন্দর্যের মহিমা নিয়ে

আমার কাছে প্রতিভাত হয়।

আমার কিছু নেই জানি আমি

রিক্ত নিঃস্ব সর্বস্বহারা আমি একজন।

তবু সব হারিয়ে আমার আছে

তোমার দেয়া স্মৃতি-

এক বর্নাঢ্য স্মৃতি।

সেই স্মৃতি গর্বে আমি

বেঁচে থাকার মাঝে এক ধরণের

আনন্দ পাই।

যতদিন এই হৃদয়ে তোমার রূপ

জাগ্রত থাকবে-

ততদিন অলোকিত অন্তরে

এ পৃথিবী আমার কাছে

আমরাবতী হয়ে ধরা দেবে-

তোমার স্মৃতিই এখন আমার কাছে

এক বিরল মহার্ঘ সম্পদ ॥

সুলতা এখানে এলেই মন কেমন করে

সুলতা এখানে এলেই মন কেমন করে

তবু কি যেন এক অজানা দুর্নিবার আকর্ষণে

এসে দাঁড়াই এখানে-

এই আঙিনায়।

আসি বললে ঠিক ভুল হবে

আমাকে কে যেন টেনে নিয়ে আসে।

সবই তো আছে এখানে

যেখানে যা ছিল-

শুধু তুমি নেই।

তোমার লাবণ্যমাখা উপস্থিতির

উত্তাপবিহীন পরিপার্শ্ব কেমন

বিষণ্ন নিঝুম।

তুমি তো ভুলে গেছ সবই....

অথচ তোমার অনুপস্থিতিতে

তোমার বিরহে

কেবল আমার মন ভেঙে গেছে-

আর সবই ঠিকই আছে।

দেয়ালে ঝুলানো ঘড়ির কাটাটা

ঠিকই ঘুরছে আগের মত,

সূর্য উঠছে সকালে সূর্য ডুবছে বিকালে,

অশোক পলাশের ফুল ফুটে ফুল ঝরে যাচ্ছে ;

অথচ তোমার বিহনে

আমার কিছুই ঠিক থাকছে না,

সব কিছুতেই ভুল হয়ে যাচ্ছে।

যখন ভাবি তুমি নেই, তুমি নেই

মন বলে কিছু নেই, কিছু নেই-

থেমে গেছে যেন সব ॥

সুলতা একদিন যে মুখে

সুলতা একদিন যে মুখে

এক অপার্থিব আলো দেখেছিলাম-

যে আলোর মোহে

পতঙ্গ আগুনের উত্তাপ ভুলে গিয়ে

ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ দেয়-

সুলতা সেই মুখে আজ

এ কোন কালো মেঘের ছায়া।

সুলতা একদিন যে চোখে

আমি দেখেছিলাম

আমার জীবনের প্রতিচ্ছবি-

আজ সেই চোখে উদ্ভাসিত

এ কোন ছলনার কাটা

তীর হয়ে বুকে বিধে।

সুলতা, একদিন যে দুটি চরণের নুপুরের ধ্বনিতে

আমার জীবনের বীণা রিনিঝিনি বাজতো-

আজ সেই নুপুর নিক্কনে

এ কোন অশনি সস্পাতের ধ্বনি

ধ্বনিত হয়ে এই বুকে বাজে ॥

মাধবী না বলে কয়ে

মাধবী না বলে কয়ে

অমন করে হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলে,

মাধবী আমায় একা ফেলে।

আমার কামনার বৃন্তে তুমি

একটিরাঙা কুসুম

ফুটেছিলে তুমি আমার জীবনে।

তোমাকে ঘিরে আমার ¯^cœ বিকশিত

হয়েছিল এ জীবনে-

সেই স্বপ্ন আচমকা তুমি ভেঙে দিলে।

কোন গোপন অভিমানে পাথরের মত

চুপ করে গেলে।

আমার আকুল আহ্বানে ও আজ

তোমার সাড়া নেই।

ছন্নছাড়া এই বিবাগী কবির জীবনে

তুমি ছাড়া আর কোন ঐশ্বর্য নেই,

কোনদিন ছিল না ;

তুমি ছিলে আমার গর্ব

প্রাপ্তির অহংকার-

তোমাকে হারালে আমার কি থাকে বল।

আজ তুমি নেই আমার কাছে-

আজ এই শূন্য ঘরে যেদিকে তাকাই

তোমার স্মৃতি আমার দিকে

স্থির তাকিয়ে থাকে।

ঘর ভরা শূন্যতা আজ আমাকে

গ্রাস করতে উদ্যত।

মাধবী কথা বল, মুখ খোলো

চোখ মেলো-

তাকাও একটিবার মুখ তুলে আমার দিকে,

তোমার ঐ দুটি চোখে আবার আমায়

বিশ্ব পৃথিবী দেখতে দাও ॥

সুলতা, তুমি চলে গেছ

সুলতা, তুমি চলে গেছ

আমার বিধ্বস্ত বুকের কতটা অংশ তলিয়ে গেছে

ধস-নামা পাড়-ভাঙা নদীপারের মত-

কেউ সে খবর রাখে না।

অথচ প্রচার মাধ্যমে প্রতিদিন

মুহূর্তে সারা বিশ্বে কতকিছু রটে যায়

অতি তুচ্ছ ঘটনা ও বাদ পড়ে না

সাংবাদিকের শ্যেন দৃষ্টি থেকে।

অথচ তুমি চলে গেছ

এই খবরটি এই মুহূর্তে

আমার কাছে বড় বড় হরফের শিরোনাম হয়ে

বিশাল ক্যানভাসে আমার সামনে ঝুলে আছে-

সে খবর কেউ রাখে না।

সুলতা তুমি চলে গেছ-

তোমার বিচ্ছেদজনিত দাবানলে

এই বুকের বিশাল অরণ্যভূমি

মুহূর্তে বিরান প্রান্তরে পরিনত হয়েছে-

সে খবর কেউ রাখে না।

সুলতা, তুমি চলে গেছ

পৃথিবীর সৌর প্রদক্ষিণ থেমে যায়নি,

নদীর স্রোত তেমনি বয়ে চলেছে,

ঘড়ির কাটা আগের মতই ঘুরছে।

সুলতা, তুমি চলে গেছ কতদিন

অথচ কোন শোক সভার এখন পর্যন্ত

কোন প্রস্তুতি নেই।

সুলতা তুমি চলে গেছ

আমার অন্তরে জানি অনন্তকাল ধরে

শোক সভা চলবে।

তোমার অন্তর্ধানে আমার অন্তরে

এক মিনিটের নীরবতা নয়

হাজার বছরের প্রাগৈতিহাসিক নীরবতা নেমেছে।

সুলতা তুমি চলে গেছ -

আমার বুকের হৃদস্পন্দন থেমে গেছে

কেউ সে খবর রাখে না ॥

সুলতা তোমার কাছে যাবো

সুলতা, তোমার কাছে যাবো

বর্ষার খরস্রোতা ভরা নদী সাতরে

আমি তোমার কাছে যাবো-

রৌদ্রদগ্ধ মরুভূমির তপ্ত ধু ধু

বালিরাশি নগ্নপদে পার হয়ে

তোমার কাছে যাবো।

সুলতা, তোমার কাছে যাবো

বাতাসে তোমার আহ্বান ভেসে আসলেই

সব খেলা ছুড়ে ফেলে আমি

তোমার কাছে ছুটে যাবো।

সুলতা, তুমি মেঘ

আমি তৃষ্ণার্ত চাতক,

সুলতা তুমি জোছনা

আমি পিপাসার্ত চকোর।

সুলতা, সত্যি সত্যি দেখো একদিন

সব লোকলাজ দ্বিধাদ্বন্দ ছুড়ে ফেলে

আমি তোমার কাছেই চলে আসবো চিরতরে

হঠাৎ করে তোমাকে চমকে দিয়ে-

তোমাকে ছেড়ে আর কোথাও

ফিরে যাব না, যাব না ॥

সুলতা এই বুকের ভেতর

সুলতা, এই বুকের ভেতর

অনেক দুঃখ অনেক কষ্ট।

এই উদ্যানে আর আগের মত

নেই প্রস্ফুটিত পুষ্পের সমাহার।

এখানে ওখানে ছড়ানো ছিটানো

শুষ্ক-পত্র ও জীর্ণ পুষ্প-পাপড়ি।

সুলতা এই মন আজ

চৈত্রের শুকিয়ে যাওয়া ক্ষীণস্রোতা নদী-

ভরা বরষার দুকুল-ছাপানো জল

আজ শুধু হারানো দিনের স্মৃতি।

সুলতা এই আকাশ আজ

মেঘে ঢাকা শ্রাবণের মেঘলা আকাশ-

মধু চন্দ্রিমার মধুর জ্যোৎস্না আজ

স্মৃতির বিলাস।

সুলতা এই বুকে

অনেক না বলা কথা, বেদনার অব্যক্ত বাণী

নীরব প্রহরে হৃদয় জুড়ে হাহাকার করে-

আর বলে

সুলতা তুমি নেই, তুমি নেই

কেউ নেই, কিছু নেই ॥

সুলতা তুমি আমার

সুলতা, তুমি আমার

বাগানের মধ্যে সদ্য প্রস্ফুটিত

তাজা গোলাপ দেখার অনুভূতি।

সুলতা তোমার লাবণ্য

চাঁদের মায়াবী জোছনার মত ঝরে

হৃদয়ে মমতা জাগায়-

অনাবিল আবেশে হৃদয় ভরিয়ে দেয়।

সুলতা তুমি

সদ্য ঘুমভাঙা-চোখে রোদে-উজ্জ্বল

প্রথম সকাল দেখার অনুভব-

নতুন দিনের আমন্ত্রণ।

এই সুর এই গান, এই কাব্য এই ছন্দ

তুমি ছাড়া অর্থহীন।

সুলতা তুমি আমার জীবনের উপমা-

রূপ কথার গল্পে পাতালের নীচে

কৌটোয় বন্দী কোন অজানা দৈত্য-দানবের

প্রাণ-ভোমারার মত।

তুমি হারিয়ে গেলে আমার জীবনে

মৃত্যু ছাড়া আর কিছু থাকে না।

সুলতা তুমি আমার আধার আকাশে

একটি চাঁদের মত-

একটি নিটোল নিভাজ স্বপ্ন,

একটি সজীব কবিতা,

চির ঝংকৃত সুরে একটি ছন্দ দ্যোতনা,

শিল্পীর আকা যেন একটি জীবন্ত ছবি,

মিথ্যে হলেও সত্যের চেয়ে

আরো বেশী সত্য কিছু ॥

সুলতা জীবনের আয়োজনে

সুলতা জীবনের আয়োজনে

কত শত কামনা বাসনাই

হৃদয়ের অন্তরালে চাপা পড়ে গেছে

প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংস স্তুপের মত।

তবু তোমাকে পাওয়ার বাসনা

আজও জেগে আছে এই মনে

অনির্বাণ প্রদীপ শিখার মত।

জীবনের অনেক সাধ অভিলাষ

কেটে ছেটে প্রায় শূন্যের কোঠায়

নিয়ে এসেছি

সামর্থ্যহীন লোকের মত-

বাসনার কৃচ্ছতা সাধনের জন্য,

তবু এই জীবনে বেহিসেবীর মত

বিপুল মূল্য দিয়ে হলেও

তোমার অনলে পতঙ্গের মত

আমি নিজেকে বিসর্জন দিতে চাই ॥

সুলতা সবার প্রিয় ঋতু বসন্ত

সুলতা সবার প্রিয় ঋতু বসন্ত

জানো আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা।

সুলতা আমার বসন্ত ঋতুতে

আমার বনে কোন কোকিল

গায়না তো গান-

আমার বসন্ত ঋতুতে কোন ফুল ফুটে না।

আমার পুষ্পবিহীন উদ্যানে

কেউ তো আমার জন্য মালা গাথে না-

বসন্ত ঋতু তাই আমাকে কাদায়

আমি তাই ভালবাসি বর্ষা ঋতুকে।

আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা।

বর্ষার ধারা জলের সাথে

আমার কান্না একাকার হয়ে

প্রকাশের পূর্ণতা খুঁজে পায়।

বর্ষার আকাশের উড়ে চলা মেঘের সাথে

আমার বুকের ভেতরে জমাট বাধা অশ্রু

ভেসে বেড়ায় আকাশে আঁকাশে।

সুলতা আমার জীবন জুড়ে বর্ষা

আর কোন ঋতু নেই।

বর্ষার ভরা আকাশের সাথে

আমি আমার অশ্রুসিক্ত

মনের মিল খুজে পাই-

আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা,

বর্ষার মেঘমল্লার রাগিনী

তাই আমার প্রিয় -

বর্ষার রিমঝিম বাদলের সুর

তাই আমারই মনের সুর -

সুলতা আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা ॥